আমার মস্ত বাসায় আমি একা!
আমার সাথে একা দাঁড়িয়ে থাকে রেলিং-এর ধার ঘেঁষে যাওয়া আকাশচুম্বী সেই আম গাছ!
পাখিদের মিতালী, কলতান, নানা সুরের গানে মুখরিত হয় আমার আম্র প্রাঙ্গণ।
এরপর কিছুদুর স্থির হয়ে থাকা সবুজ ঘাসে ঢাকা গোছানো লন...
তারপর ছিল বিথির জানালা... আমার বাসা দুই তলায় আর বিথীর তিনতলায়...


সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত... যখনই আমি আমার একাকীত্বের গল্প সাজাতাম আম গাছের সাথে, পাখিদের কুহুতান আমাকে বলতো চুপ করো; বলতো জীবন কষ্টের নয় জীবন আনন্দের...


আমিও চুপ হয়ে যেতাম;


দেখতাম আমার মতন বিথীও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের সাথে কথা বলছে... আকাশের বিশালতার কাছে কষ্টের কথা বলতেই হয়তো আকাশ থেকে একরাশ বৃষ্টি ঝড়ে পড়ে বলতো আমার মতো কাঁদতে পারবে?


বিথীও চুপ হয়ে যেত;


আমাদের একাকীত্বের কথা শোনার ইচ্ছে বা আগ্রহ কারোই ছিল না; না পাখিদের না আকাশের;


চুপচাপ দাঁড়িয়ে আমরা দু'জন দু'জনের হতে লাগলাম; কখনো চোখের ইশারায় তো কখনো হাতের; এভাবে দিন, মাস, বছর গেল; আমি বারান্দায় আর বিথী জানালায়...


একদিন খুব ভোরে হঠাৎ এম্বুলেন্সের সাইরেনে ঘুম ভাঙল; তাড়াহুড়ো করে বারান্দায় গেলাম। জানালা ফাঁক গলে দেখলাম দুটো ঝুলন্ত নিথর পা...


সেদিনের পর আমার আর কখনো বারান্দায় যাওয়া হয়নি।
ধীরে ধীরে আমগাছটাও চোখের সামনে বিদীর্ণ হয়ে মরে গেল...
পাখিরাও খুঁজে নিল নতুন ঠীকানা; শুধু আমিই রয়ে গেলাম অপেক্ষায়...
সাথে ছিল আমার একাকীত্ব, আমার চিরসঙ্গী!