প্রিয় রাই, আমি জানি রোজ রাতে তুমি আমার পথ চেয়ে বসে থাকো।
আমি জানি, আমার জন্য তোমার প্রতীক্ষা অসীম!
বিশ্বাস করো আমিও চাই তোমার প্রতীক্ষার অবসান হোক।
মনে প্রাণে চাই আমি একান্তই তোমার হই।
রাত যত বাড়ে ঝিঁঝিঁর শব্দের সাথে বাড়ে আমার জন্য তোমার অপেক্ষার উচাটন।
আমার মধ্যে বিলীন হওয়ার তীব্র এক বাসনা তোমার মনে জাগে রোজ রাতে।
আমি জানি।
আমি এও জানি,
আমাদের দুজনের পথ ঠিক যেন রেল লাইনের মতো সুষম সমান্তরাল।
এক সাথে চলছি তো ঠিক কিন্তু মিলতে পারছি কোথায়!
যেখানে মেলার কথা সেখান থেকে তো নতুন পথের শুরু হয়।
আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি দুজন!
তবে এটা নিশ্চয় মানবে তোমার আমার মাঝে এক অদ্ভুত মায়াজাল আছে।
এটাই হয়তো ভালোবাসা!
আমি বরাবরই বলি ভালোবাসলে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিতে হয়।
তাই বুঝি তোমার আমার মনের এতো টেলিপ্যাথি?
দূর থেকে আমরা নিজেদের প্রাণের স্পন্দন শুনতে পাই!


মানো আর নাই মানো আমি রোজ রাতে তোমার হই।
আমার চোখের পাতা দুটো যখন নিঝুম রাতে এক হয় আমিও ধীরে ধীরে তোমার হতে থাকি।
একটা সময় তোমার মাঝেই হারিয়ে যায়।
তুমি আমার চোখে স্বপ্ন হয়ে নামো।
আমি তোমায় ছুঁতে পাই তখন।
তোমার দীঘল কালো চুল লেপ্টে থাকে আমার কেশর বুকে।
তোমার কোলে মাথা রেখে আমি রূপকথার গল্প শুনি।
আমি স্বপ্নের মধ্যে তোমায় নিয়ে বাস্তবতার ছবি আঁকি।
আমাদের দুজনের ছবি আঁকি; নিখাদ ভালোবাসার ছবি।
অত্যন্ত সরল ও সমান্তরাল ছবি।


কিন্তু যখন তোমায় ছেড়ে আসতে হয় প্রতি রাতে,
তখন খুব করে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে হয় তোমার হাত দুটো।
বন্ধন মুক্ত হতে চাইনা আমি কোনো রাতেই।
আমি চিৎকার করতে থাকি।
তুমি ধীরে ধীরে ধূসর ফ্যাকাসে হয়ে যাও রোজ।
চোখের মণি দুটো দুর্বার চঞ্চল হয়।
ঘুম ভেঙে দেখি লাভা ঝরছে চোখে।
হাত দিয়ে মুছতে গেলে চোখের জলে তোমার গায়ের ঘ্রাণ পাই!
তবে কি তুমি সত্যিই এসেছিলে?


আমি জানি তুমি নির্ঘুম রাত কাটাও শুধু আমার প্রতীক্ষায়।
আমার পথ চেয়ে তুমি পাড়ি জমাও বিমর্ষ রজনীর দ্বারে।
শুধু আমি আসবো বলে আমার নামের মেহেদি রাঙাও দুহাতে।
তুমি জানো আমি আসি!  
আমি রোজ আসি, তোমাকে আলতো ছুঁয়ে যাই।
তোমার পার্থিব শরীর বুঝতে না পারলেও তোমার নিশ্চল আঁখি যুগল ঠিক বুঝতে পারে, আমি আসলেই চকচক করে ওঠে ওরা।
ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা মেলে।
তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হয়। আমায় ওরা ভালোবাসে।
আমিও তোমার প্রেমে পড়ি রোজ।
তোমার অপেক্ষার সাথী হই।
পার্থিব আমি তোমায় ধরা না দিলেও, অপার্থিব আমি রোজ একটু একটু করে তোমার হই।
যেদিন এ সমাজ শৃঙ্খল ভাঙতে পারবো সেদিন দেহ-মন-প্রাণে নশ্বর চিত্তে তোমাতে সমর্পিত হবো।
তুমি ভেবো না সেদিন আমি শুধু তোমারই হবো।