পুরুষের জন্ম মনে হয় প্রকৃতির পরিচর্যার জন্য।
এজন্যই কি পুরুষ প্রকৃতির যাবতীয় কর্ম নিজের কাঁধে তুলে নিতে পছন্দ করে?
হিন্দু ধর্মে জগত দ্বিধা বিভক্ত,প্রকৃতি ও পুরুষ,
- রাধা প্রকৃতির প্রতীক, আর কৃষ্ণ পুরুষের।
জগতের সমস্ত পুরুষই কি তাই নিজেকে কৃষ্ণ ভাবতে পছন্দ করে?
সদা সর্বদা চতুর্দিকে সখিদের নিয়ে প্রেম লীলা করাটা,
তাই হয়তো  তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে!  
আমি প্রায় পুরুষের মধ্যে এমন আক্ষেপের আপ্ত বাক্য দেখেছি-
কৃষ্ণ করলে লীলা,আমি করলে কিলা!
পুরুষের কখনোই প্রকৃতির এক অংশ
বেশি দিন পছন্দ হয়না।
প্রকৃতির এক অংশ অথবা একক প্রকৃতির রূপ
পরুষকে বেশিদিন মুগ্ধ করতে পারে না!
কিংবা আকৃষ্ট করে ধরে রাখতে পারে না।
তাই সে সদা অন্য প্রকৃতি খোঁজে,
সকল প্রকৃতিতে কিংবা প্রকৃতির সর্বত্র বিচরণ
করার মনোবাসনা ক্ষণে ক্ষণেই করে!
মাঝে মাঝে পুরুষের জন্য আমার খুব দুঃখ হয়,
প্রকৃতি পুরুষের জন্য কোন মায়া মমতা রাখেনি!
একজন পুরুষের যতটুকু মায়া মমতা আছে,
তাও কেড়ে নিয়ে যায় কোন রমণী ।
তাই  পুরুষ প্রকৃতির বড়ই নিষ্ঠুর ও নির্মম প্রাণী !
প্রকৃতি পুরুষের প্রতি অনেক অবহেলাও দেখিয়েছে-
কখনো রেখেছে শ্রমিক মৌমাছির কাতারে,
যে কিনা শুধু রাণীর জন্য দিন মান নিরলস খেটে যায়!
তবুও রাণী তৃপ্ত হয় কিনা আমার খুব জানতে
ইচ্ছে করে?
আবার কখনো রেখেছে আশ্বিন-কার্তিকেয়
কোন নিকৃষ্ট প্রাণীর মত!
এসব না করলে কি প্রকৃতির সৃষ্টি-প্রক্রিয়া সফল হতো না,
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে?
নারী পুরুষের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি রহস্যময় ও দুর্ভাগা?
সবাই বলবে নারী,আমি জানি।
অথচ অনেক নারীকে আমি এমন প্রশ্ন রেখেছিলাম যে,
পূনর্জন্ম পেলে তুমি  কি হতে চাইবে,পুরুষ না নারী?
আমি ভেবেছিলাম সবার উত্তরই হবে হয়ত পুরুষ,
অথচ আমাকে অবাক করে দিয়ে উত্তরগুলো সব আসতে থাকল নারী!
কোথায় কখন যেন,
পুরুষের রহস্যময়তা,দুর্ভাগ্য ও কষ্টের
মিশেলে একটি হাস্যকর গল্প শুনেছি-
অবশ্য আপনাদের কান্না আসলেও আমার
কিছু করার থাকবেনা বৈকি!
জগত এমনই রহস্যময় ও বিচিত্র যে
কারো কারো কান্নাই অন্যের বিনোদনের খোরাক!
গল্পটা বলে ফেলা যাক-
গাধাকে তৈরির পর প্রশ্ন করা হলোঃ
তুমি সর্বদা বোঝা বা ভার বহন করবে,
তোমার মাথায় কোন বুদ্ধি নাহি থাকবে,
তোমার আয়ু তাই পঞ্চাশ বৎসর হবে!
তুমি রাজি?
গাধা করজোড়ে বলল-
পঞ্চাশ বছর অনেক বেশি, আমি বিশ বছর বাঁচতে চাই প্রভু।
স্রষ্টা বললেন তথাস্তু।
কুকুরকে তৈরির পর প্রশ্ন করা হলোঃ
তুমি পরোপকারী হবে,মানুষের পরম বন্ধু হবে,
তবুও মানুষ তোমাকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেবে,
নিষ্ঠুর আঘাত করবে আর তার উচ্ছিষ্ট খেতে দেবে,
তোমার আয়ু হবে ত্রিশ বৎসর,তুমি রাজি?
কুকুরও ঠিক একইভাবে করজোড়ে বলল-
প্রভু ত্রিশ বছর অনেক বেশি,
আমার ইচ্ছা প্রভু আমি যেন পনের বছরই বাঁচি।
বানর কে তৈরির পর একইভাবে প্রশ্ন করা হলোঃ
তুমি সর্বদা এ ডাল থেকে ও ডালে ঝুলবে-
আসা যাওয়া করবে।
নানা রকম ফন্দি-ফিকির করে,
মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করবে;
তোমার আয়ু হবে বিশ বৎসর,তুমি রাজি?
বানর একইভাবে করজোড়ে বলল-
প্রভু বিশ বছর অনেক বেশি,
আমার ইচ্ছা আমি যেন দশ বছরই বাঁচি।
এবার আসলো পুরুষের পালা,
পুরুষকে তৈরির পর একইভাবে প্রশ্ন করা হলোঃ
তুমি হবে বুদ্ধিতে সেরা,প্রাণীকূলের শিরোমনি
তোমার আয়ু হবে বিশ বৎসর,তুমি রাজি?
পুরুষ করজোড়ে স্রষ্টাকে বললো-
প্রভু বিশ বৎসর আমার জন্য অল্প অতি,
ওদের ফিরিয়ে দেয়া বছরগুলো,
আমায় দিলে আপনার কি এমন ক্ষতি ?
আমার ইচ্ছে ,আমি যেন পঁচাত্তর বছর বাঁচি প্রভু!
স্রষ্টা এবারও বললেন তথাস্তু।
এরপর থেকে পুরুষ মানুষ-
পুরুষের মত বাঁচে মাত্র বিশ বছর,
পরের ত্রিশ বছর কেবল সংসারের বোঝা বয়ে বেড়ায়,
বলতে পারেন এটা কার মত?
এর পরের পনের বছর অথর্ব পুরুষ,
সন্তান সন্ততির কাজে কর্মে -
পরম সহায়তা কারীর ভূমিকায় হয় অবতীর্ন।
আর তাদেরই অনুগ্রহে পাওয়া অবশিষ্ট  খেয়ে জীবন করে ধন্য,
বলতে পারেন এটা কার মত?
সর্বশেষে বৃদ্ধ বয়সের বছরগুলো পুরুষের যায়
এ সন্তানের বাড়ি,ও সন্তানের বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করে,
তাদের নাতি-নাতনিদের আনন্দ-বিনোদন প্রদানে থেকে রত!
বলতে পারেন এটা কার মত?
চোখ ভারী হয়ে আসছে-
আর বলতে পারিনা,থাক আজকের মত।


17/10/2014
1:47 pm