বাবা জানো কি!
তোমার আঙুলে ঝুলে হাঁটতে শিখেছি,
এখন আমিও শেখাতে পারি।
মনে পড়ে?
রোজ বিকেলে তোমার ঘামে ভেজা দুর্গন্ধ জামা।
আমি কতদিন নাক চেপে ধরেছি,
এখন নিজের ঘামের গন্ধ, নাকেই আসেনা।
একটু চুপ হলেই ঘুমিয়ে যেতে,
শুরু হতো ঘুম ভাঙানো নাক ডাকা;
সে নিয়ে মা কতো বকেছে তোমায়,
সকালে পড়শীরাও করেছে নালিশ।
এমনই একটু ঘুমের জন্য কত রাত জেগে থাকি
তুমি জানোনা।
তোমার মতো সহজ হলে হয়তো …..
তোমার প্রতি মায়ের কতো অভিযোগ!
তার পুরো জীবন নষ্ট করেছো তুমি,
“হতে পাত্তেম” এর মতো মা অনেক কিছুই হতে পারতো।
ধাক্কাটাও তুমি দাওনি।
ঈদে আমাদের নতুন জামা কাপড়ে
তোমার পুরনোতেই সেকি আনন্দ। আমি
আজও ভুলিনি,
বোশেখী মেলায়,
কলের জাহাজ কিনে দিতে পারনি বলে
আমার দু-চোখে কতো অভিমান,
এত দিনের পর দেখি তোমার সেই… ব্যর্থ মুখ, আমার চোখে আগুনের মতো জ্বলে ওঠে।
ঠান্ডা শীতে তোমার চাদরে কতদিন ঘুমিয়ে গেছি,
প্রতি শীতেই চাই নতুন জ্যাকেট,
কিন্তু শীত ভাঙে কই!
অথচ দেখ,
তোমার সে চাদর তুমি এখনও গায়ে মাখো।
তার উষ্ণতার লোভ আমার আজও হয়।
তোমার ক্ষয়ে যাওয়া চটি আর মশে ধরা জামার বদলে
আমাদের গায়ে পায়ে রঙিন জামা জুতো।
সে চটিতে মাথা ঠেকাবারে
মালিক-এ-জাহান যদি অনুমতি দিতো;
হয়তো সে দেনার দায় কিছুটা শোধ হতো।
তোমার হাতুড়ি পেটানো কড়া পড়া হাতে
আমাদের এতো নরম করে কি করে গড়ো!
রোজ ন’মাইল, তোমার র‌্যালি সাইকেল,
তুমি আমি সেই সাইকেলে চেপে কতদিন
মোটর বাইকের গল্প করেছি,
গল্প রেখে সেও বিকিয়ে গেল।
পান্তা তোমার কেন প্রিয় ছিল
সেকথা এখন জেনেছি যখন,
রেজালা রেখে খিচুড়ি খায় আয়েশ করে।
আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে তোমাতে,
দিনে দিনে আবিষ্কার করে চলেছি তোমায়।
তুমি আমার বাবা, আমি কাউকে দেব না ভাগ
শুধু আমারই বাবা, কেবলই আমার…