(৮+৬ পর্ব বিন্যাসে অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা)


হাসু মণ্ডল, যে ছিল, বিগত সন্ধ্যায়,
আজকে সে ছিলতেই হ’লো সীমাবদ্ধ।
দম্ভের লেশ ছিলনা, ছিলনা শঠতা;
হাসতে জানে হয়তো; তাইতো সে হাসু।
সাতচল্লিশে পা রেখে - ব্যর্থ শুভদৃষ্টি,
ফটোতে দেখা কনেটি - হ’লো চির-ব্রাত্য।
বহুকষ্টে; রুগ্নাবাসে করোনা-কালীন-
সেকেন্ডারি সিমটোম শেষে হ’লো জানা।


তোমরা যারা সকলে একত্রে বসতে;
একই সাথে উল্লাসে থাকতে উন্মত্ত;
কেউ বা আসতে চেপে ফোর হুইলারে,
বন্ধুত্বের দায় নিয়ে হতে সমোস্বর।
চায়ের কাপে তুলতে আমফানী ঝড়,
রাজনীতি-মঞ্চ থেকে পরিবার নীতি,-
কিছুই যেতনা বাদ, তবু দেখ বন্ধু!-
করোনায় ভীত হয়ে সঙ্গটুকু দিতে-
সকলের-ই ব্যস্ততা, হায়! মানবতা!
হাসপাতালেই হাসু মৃত্যু সনে যুঝে
হলো আজ চির-পর, দৃষ্টির ওপার।


আজ দেখি তোমরাই রয়েছো সমুখে;
লাশের গাড়িটি দিব্যি চালিয়ে গঙ্গায়।
কত বন্ধু আগে পিছে, কত কর্ম-যজ্ঞ,
কত হৈ চৈ, কোলাহল, আরও কত কি!
একি মৃত্যুর উল্লাস প্রিয় বন্ধু! নাকি;-
পুড়ে ছাই সিগারেটে শেষ সুখটান!
হয়তো চায়ের কাপে আবার তুলবে-
তর্কের ঝড়,- সে ছিল; অতি ভাল লোক।



হাসু মণ্ডল, বয়স ৫০ এর আসে-পাশে, অবিবাহিত। কিছুদিন পরেই একজন ডিভোর্সি পাত্রীর সঙ্গে শুভদৃষ্টি সংঘটিত হবার কথা ছিল। সে ছিল বড়ভাই/দাদার মতো, আমাকেও তিনি ছোট ভায়ের মতোই দেখতেন। গতকাল মধ্যরাতে হঠাৎ অসুস্থতায় তার প্রয়াণ ঘটে। তার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন যাদের সাথে একসাথে বসা, চা খাওয়া, আড্ডায় মেতে থাকতেন অথচ, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেবার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি, করোনার সিমটোমস ভেবে।  অনেক কষ্টে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। আজ সকালে যখন তার লাশটি সকল বন্ধু মিলে বয়ে নিয়ে গেল শ্মশানে, সেই দৃশ্যটি আমার কাছে ছিল খুবই মর্মঘাতী। তারই স্মরণে আমার আজকের উপস্থাপন এবং সকলের কাছে তার বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করি।