সনেট ১৮৬, করোনা - ১
বন্ধু, আজ তবে আসি, বাকি পথ লেখা থাক হাতের রেখায়,
রয়ে গেল তোর কাছে- এক কাপ অন্তরঙ্গ সময়ের ঋণ।
কতশত বসতির ইতিহাস লিখে রাখে প্রবাল প্রাচীন,-
এও সে অমুদ্রণীয় হরফের শব্দ এক- পলিত পাতায়!
অয়োময় হৃদয়ের মনে পড়া কত কথা চোখের কোণায়-
খেলে যায়, মাঝে-মাঝে ঢেউ তুলে ভিজে যায় বালুর পুলিন।
দেখে নিস একদিন, বাঁধভাঙা নদী হবে ঠিকানাবিহীন-
এই বুকে, একদিন এই বুক মুছে নেবে জোয়ারের দায়।


কাচকুপী হাতে নিয়ে পুরনো বসন্ত যদি ঢেলে দেয় সুরা;
দেখবে সে সাকি তার অবাক দু’চোখে এক আজন্ম মাতাল,-
পিয়ে গেছে সবটুকু দুর্বিষহ শরাবের আতিক্ত পেয়ালা।
বন্ধু, দেখবি সেদিন, গজাবে সবুজ ঘাস, ভরবে কিনারা,-
মরালীর আবাহনে রাখবে পায়ের ছাপ - সফেদ মরাল,
সেখানেই রাখা হবে পথের অমনিবাস, নিরুদ্দিষ্ট মালা।


সনেট ১৮৭, করোনা – ২
এখানেই রাখা হবে পথের অমনিবাস,- নিরুদ্দিষ্ট মালা,
সাজানো বেদীর পরে এক সুরে গীত হবে গায়েবী কোরাস,-
হয়তো আবার---, থাক, তোকেইবা কেন বলি যতো ছাই-পাঁশ!
এসব প্রলাপ শুধু, ঘুমঘোরে ক্ষণিকের শিশুর দেয়ালা।
ইচ্ছে করে তোর সাথে আরেকটা সারাদিন- শুরু করি চলা,
আরেকটা বাঁকে এসে পথভোলা বানে ভেসে ভাঙ্গুক বিশ্বাস!
আরেকটা আঠারোকে - লুট করে নিয়ে যাক কালের সন্ত্রাস;
আবার বিপন্ন হোক - নিরাশ পরাগ সম – প্রাণবন্ত বেলা!


স্বখাত-সলিলে ডুবে বহুবার- করে গেছি নিজেরে লঙ্ঘন।
দেখেছি কবরে শুয়ে, আঁধারটা খুব বেশি আঁধার ছিলনা,-
নামের ফলক পুঁতে একে একে চলে গেছে প্রবহ জীবন।
লিখে রাখা কবিতার ব্যবচ্ছেদে খোঁজে সবে- আমার ঠিকানা,
কতকিছু আছে লেখা! শীতের কুয়াশা থেকে সুদূর প্লাবন,-
লিখেছি যা এতোদিন; একটিও তার ঠিক কবিতা হলোনা!


শব্দ ব্যাখ্যাঃ
পলিত > পুরনো অর্থে
কাচকুপী > সুরাপাত্র
মরাল > রাজ হংস
দেয়ালা > স্বপ্ন দেখে শিশুর হাসা কেঁদে ওঠা



এটি সনেট পরম্পরা বা Sonnet Sequence ধারার কবিতা, যেটি ১৫টি সনেটের গুচ্ছ (Lot)। সনেটগুলি লেখা হয়েছে সনেট করোনা (Sonnet Corona) বা ক্রাউন অব সনেট (Crown of Sonnets) রীতিতে।