ঘটনাটা !  তা প্রায় বছর আট, নয় আগের হবে,
জুলাই মাসের অরন্য সপ্তাহের কোনো এক দিনে,
কলকল করে আলোচনা চলছিলো ছেলের স্কুলে,
আগ্ৰহ নিয়ে বললো আমায় ছেলেদের মায়েরা সবে।
কথাটা নতুন শুনলাম,  ফরেস্ট অফিসে নাকি,
হরির লুটের মতো গাছের চারাও করা হয় বিলি___
এমন খবর ওরা আমাকেই তো শোনাবে!


তার কদিন আগেই স্কুলের গেটের দক্ষিণ পাশে,
পাম গাছের তলে, শিশু পাম চারা গুলো বেশ হাসে।
আমি ওদের অন্ততঃ একজনকেও বাঁচাবো ভেবে,
অতি যত্নে, সাবধানে মাটি খুঁড়ে তুলে এনেছি বাড়ি।
দেখে ওরা মনে ভাবে,আছে এদের কোনো জমিদারী,
একদিন এই চারাটাও বড় হবে, নিজেকে কি ভাবে ?
বালিকা না অবোধ শিশু ? পড়নে তো দেখি শাড়ি !


স্কুলের মতোই বাড়ির গেটের পাশে আজ তার গুঁড়ি।
সেদিন গাড়িতে চেপে মা-ছেলে, হাজির দুজনে মিলে,
অফিসার মাথাপিছু একটা গাছ পছন্দ করতে দিলে,
ছোটোবেলা থেকেই লাল কৃষ্ণচুড়া ফুলের ডাল !
হাতছানি দেয় আমাকে, যেন লাল সবুজের ভেলকি!
মনে পড়ে বাবার লাগানো সাদা ইউক্যালিপটাস,
সরকারি কোয়ার্টারে পাতা ঝরিয়ে ছড়াতো সুবাস।


ঝটপট দুটো চারা গাছ পছন্দ করে ফেলি নিমেষেই,
ছেলে ও আমি মুখে দরাজ হাসি নিয়ে ফিরি দুজনেই,
শেকড়ে আছে মাটি, জানি, গাছ দুটো বেঁচে যাবেই !
দিন যায়, ওরা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, কিন্তু হায় !
নানা লোকে বাড়ি বয়ে এসে নানা কথা বলে যায়।
বছরখানেক পর লোকের কথা শুনে শুনে শেষমেষ, ইউক্যালিপটাস চারা, উঠিয়ে বহু দূরে লাগানো হয়।


কৃষ্ণচূড়া বড় হয়,বছরের পর বছর ধরে নিজের মনে, সংগোপনে ঝুর ঝুর করে সারাদিন ধরে পাতা ঝরায়।
রাস্তায় একটু ছায়া দেয়, কেউ ওখানে জিরিয়ে নেয়,
আমরা থাকি ওর ফুল ফুঁটে উঠবার অপেক্ষায়।
সেদিন হঠাৎ দেখি মাটিতে খান কয়েক লাল পাপড়ি, পড়ে আছে আমাদের সকলের অগোচরে !
নিঃশব্দে রক্ত ঝরেছে ? ফুল ফুটেছে নাকি তাহলে !  


তাকিয়ে দেখি, পাম গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে,
কৃষ্ণচুড়ার সবুজ ঝিরিঝিরি পাতার ডালের মাঝে,
কয়েকটা লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া সত্যিই ধরেছে !
এবছরেই লালে লাল নাইবা হতে পারলো গাছটা,
সবুজে লালে গাছটাকে যেন আরও মানিয়েছে !
মানুষ হয়তো মানুষকে ভালোবেসে কষ্ট দিয়েছে,
গাছকে ভালোবেসে মানুষ শুধু আনন্দই পেয়েছে।