*একটি নদীর কাহিনী যার নাম অঞ্জনা।সে বয়ে গেছে কৃষ্ণনগর ও আরও অনেক শহরের মধ্য দিয়ে।এ নদী আর নদী নেই।পড়ুন।
***********
ইতিহাস বলে আমার জন্ম নাকি এখানে,
শ্মশান কালীবাড়ি—তোমাদেরি কারও হাতে;-
সেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের শাসনকালে ৷
তারপর থেকে আমি বয়েছি কত ভার
আমার এ পাগলী মা;-জলঙ্গী’র—বর্ষার প্লাবনে
অথবা প্রখর গ্রীষ্মে—আমার প্রাণের উপর দিয়ে
বহে গেছে সে ভার—কত শতাব্দী হয়েছে পার !
কত পথ কত খেত,গেরাম,নগর আমি পেরিয়ে
এসেছি—আমি অঞ্জনা—আমি মিলেছি চূর্ণীর সাথে—
তাঁরে ভালোবেসে আমি পেয়েছি স্বাদ গঙ্গার;-
আবার পেয়েছি ঠাঁই আমারি মা’র কোলে—
এ কি এত সোজা!তোমরাই বলো সদলে ৷
তোমরা গড়েছো কত গেরাম কত নগর
আরও কত উন্নত কিছু;-মোর দু’পারে আঁচলের ‘পর—
তোমরা করেছো চাষ—এখনও করে চলেছো ৷
আমার বুকের উপর দিয়ে তোমরা বয়েছো
কত মালবাহী,প্রাণবাহী তরী সারে সারে—
যখন ছিল না যান—চলে আজ যা এ ধরাসংসারে ৷
আমি দিয়েছি সাথ আমার জন্মদাতা রাজার—
আর হয়েছি কঠিন হিংস্র শাসকের কাছে—যারা
দাঁড়িয়েছে মোর পারে রক্তমাখা হাতে-নিয়ে হিংসার ধারা ৷
আমারি শীতল পবিত্র নীরে খেলেছে তোমাদের
কচিকাঁচা—আবার তোমরাও নেয়েছো কভু দু’বেলা—
চড়িয়েছো সারাদিন মাছ ধরিবার ভেলা ৷
আমার মায়ার কোলে খেলেছে আরও কত প্রাণ,
অজানা কত পশু কত পাখপাখালি ভোরের
নিয়েছে আমার সিক্ত অমলিন দেহের ঘেরাণ—
স্নান করেছে কত লতাপাতা আমার দু’কূলের ৷


তোমাদেরি হাতে আজ আমি হয়েছি খুন—
আমার মুখগহ্বরে ঠুসেছো কঠিন মাটি,কলিচুন ৷
তোমরা দিয়েছো শত আঘাত আমার মননে—
আমার গলায় চাপিয়েছো পাথর মাটির বোঝা,
দিয়েছো কত শত বাঁধ—এ বোঝা বওয়া কি এত সোজা !
শেয়াল শকুনের মতন টেনে টেনে ছিঁড়েছো
আমার শরীর—বিদীর্ণ করেছো আমার অন্তর—
আমার আঁচলের কাপড় তোমরা কেড়ে নিয়েছো
ধর্ষকের মত;-কেউ কি দেবে সেই কাপড় !
নাকি আমি লজ্জায় ঝাঁপ দিব এ তীব্র দহনে !
আজ আমার বক্ষ ‘পরে তোমরা করো নিক্ষেপ
তোমাদের ব্যবহৃত মলিন বস্তু-না ক’রে ভ্রুক্ষেপ ৷
শহর নগরের পচা গলা জল—কালকূট হেন—
দিবসরজনী করিতেছি পান বিষকণ্ঠ হ’য়ে—
তোমরা বুঝি ভাবো আমি সহ্য করি এসব ভয়ে;-
ভয় নয়,ভয় নয়—আমার ভালোবাসা জেন ৷


এখনো থরথর ক’রে কাঁপে আমার অধর জোড়া
কঠিন মাটি আর কলিচুনের তলায়—বেদনভরা
হৃদয়ে;-অশ্রু শুকানো আঁখে;-জলঙ্গী’র এ বাঁকে—
যেখানে জলঙ্গী’র জল আজও আছড়ে পড়ে হাঁকে;-
ঢেউগুলো এখনো মাথা ঠুকে মরে ধীরে
শ্মশান কালীবাড়ির পাশে-জলঙ্গীর বা’তীরে ৷
মা আমার ধীরে ডেকে কয় মোর কানে-ওরা
ছিঁড়েছে তোঁর আমার নাড়ীর বন্ধন টা কে ৷
জানি না আর পাবো কিনা মোর গতিপথ ফিরে—
আবার চলিতে পারবো কিনা তোমাদের ভিড়ে!
তবে আশা নেই—হয়তো আমার নাম নদীকুলে
পাবে না খুঁজে আর—ধীরে ধীরে খাল;-তারপর
সরু নালা—তোমরাও আমায় যাবে ভুলে;-
বাড়ি,আকাশছোঁয়া দালান র’বে মোর বক্ষ ঘিরে ৷
একদিন জানি তোমাদের ইতিহাসের পাতায়
আমার নাম মুছে যাবে—মুছে যাবে অঞ্জনা;
ভুলে যাবে সেও—সেই পাখি-নাম ‘খঞ্জনা’ ৷
অথবা র’য়ে যাবো আমি তোমাদের গাঁয়—
আমার নাম মিশে র’বে খালে অথবা ডোবায়—
যদি বাঁচি;-বাঁচি তোমাদের করুণায় !  
             ***********
                   *****
                       *