কবিতা কি পথ হারিয়েছে? হয়তো তাই। কবি হয়তো বেড়েছে,  কিন্তু বাংলায় প্রকৃত কবিরা কোথায় ? কবিতা কি ক্রমে ক্রমে সরে যাচ্ছে বাঙালির জীবন থেকে? দোষটা কার? কবির না কবিতার? না কি আধুনিকতা, মোবাইল ,অথবা উচ্চ প্রযুক্তি'র সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে পরিবর্তিত জীবনধারা তারুণ্যের আদর্শ বদলে দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতার সর্বনাশে? নাকি কবিতা কোনো উচ্চাসনে বসে অচেনা পোশাকে চোখে চোখে কথা বলছে কবিদের সঙ্গে? কবিতা তুমি কি এখন কেবল স্বপ্ন না স্মৃতি? কোথায় কবিতার সেই জ্যোৎস্না মাখা স্নিগ্ধতায় জড়ানো রজনী? কবিতা চায় আবার টগবগিয়ে খুনের রক্তের স্বাদ। কবিতা মেতে উঠতে চায় নতুন করে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। মিলের খিল খুলে পাঠকরা চায় আবার নতুন করে কথার ছন্দ যা কিনা কন্ধকাটা পাঁঠার মতন ছটফটাবে আর লটপটাবে লুচির লেচির আটার মতন। চায়না সে আধুনিক কবিতার জটিলতা, চায় সরলতা।


কবিতা এখন আর বাঙালির শয়নে,স্বপনে বা হৃদয়ে বিস্তার করেনা।ক্রমে ক্রমে কবিতা হয়ে উঠছে শো-কেসে সাজানো কিউরিও। সেই বাঙালি তরুণ কোথায় আজ? যারা উদাস হয়ে ঘুরে বেড়াতো বাঁশি বাজিয়ে,ছন্দ গেঁথে? বাঙালি তো জন্ম কবি! তাহলে আমরা আর জন্ম উদার বা মহৎ প্রাণ নই কেন ? আমরা যে বাঙালি! তাইতো আমরা ভাবতে চাই আমাদের চিরকবি, চির প্রেমিক, রোমান্টিক। ভাবতে চাই সুক্ষ রুচির ও কবিতা শিল্পের সুকুমার অনুভূতির সর্বস্বত্তাধীকারী । কবিতা অন্তর্লোকের। কবিতা আত্মার প্রতীক। অবগুণ্ঠনবতি,অন্তর্জগতের বাসিন্দা কবিতাকে একমাত্র কবিতার পাঠক এখন শ্রোতা হয়ে কানের ভেতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করিয়ে কবিতাকে প্রাণবন্ত করে রেখেছেন।


বর্তমান সমাজব্যবস্থায় কবিতা পাঠের সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কবিতার শ্রোতার সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। কারণ যুগটা অডিওভিসুয়াল এর যুগ। পাঠ করার সময়ে কবিতার শ্রুতিসাফল্য নিয়ে ভাবা হতোনা, কিছুটা আনমনে পড়তেন পাঠক,যেন নিজের কাছে নিজেই।কিন্তু কবিতার আসর যখন ব্যক্তিগত ঘরের কোনের চা-মুড়ির পরিবেশ থেকে বেরিয়ে পড়ে মঞ্চে গিয়ে উঠলো, তখনই তার কবিতা চয়নের নীতি গেলো বদলে। তখন আর শুধু একমুঠো কবিতা প্রিয় পাঠকের নয়, হয়ে উঠলো কবিতা মনোরঞ্জনের।কবিতা একটা শিল্প। কে বলেছে যে শিল্পকে ব্যবসায়িক হলেই মন্দ হতে হবে? কখনোই নয়। গানের শিল্পী যদি গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন তাহলে একজন আবৃত্তিকার কেন তার কবিতা শুনিয়ে অর্থ দাবি করতে পারেন না? আধুনিক কবিতার সঙ্গে সঙ্গে কবিতা পাঠেও আধুনিকতা এসেছে। কবিতার সঙ্গে এখন আলোকসম্পাত, ও কবিতার থিমের সঙ্গে মিলিয়ে মিউজিক। কবিতার মধ্যে সুপ্ত যে ছবিটা থাকে তাকে অক্ষর ছাড়াও সরাসরি শ্রোতার ইন্দ্রিয়ের কাছে পৌঁছে দেবার একটা সর্বাঙ্গীন চেষ্টা আবৃত্তিকার রা নিরলসভাবে করে চলেছেন। শ্রোতার কাছে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে কবিতার স্বকীয় মূল ভাবটি সোজাসুজি। প্রান্তিকভাবে অডিওভিসুয়াল ই বাংলা কবিতাকে জীবিত রাখবে।


উপসংহার:-
আমরা কবিরা আপন কর্মের মর্যাদা দিই না, যথেষ্ট মূল্য দিই না কবিতাকে। আবৃত্তিকারের কল্যানে কবিতা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।


টিকা:
আধুনিক কবিদের কাছে একটাই খালি অনুরোধ ...


অঙ্কলক্ষ্মীর ভয়ে কাব্যলক্ষ্মী যেন  কুঁকড়োর মতন কুঁকড়ে না থাকে।