আজকের আধুনিক যুগে সারা পৃথিবী জুড়ে আমার আপনার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও আদরের শব্দ কি ?
উত্তর একটাই আর সেটা হচ্ছে গুগুল। এক লিখে তার পরে একশটি শূণ্য বসালে যে বৃহৎ সংখ্যাটি পাওয়া যায়  তাকে গণিত শাস্ত্রে বলা হয় এক গুগল। বিখ্যাত মার্কিনি গণিতবিদ এডওয়ার্ড ক্যাসনার তাঁর ১৯৪০ সালে রচিত  Mathematics and the Imagination এ উল্লেখ করেছেন যে তাঁর নয় বছরের ভাইপো 'মিল্টন সিরোটা' (১৯১১-১৯৮১) ১৯২০ সালে প্রথম তাঁর চাচার কাছে এই নামটি প্রস্তাব করেছিল নেহাতই খেলার ছলে।এই শব্দটির জনপ্রিয়তা অর্জন করে যখন আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগ্‌ল এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এর মনে নামটি গেথে গেলো।কিন্তু বানান ভুল করে তারা googol-এর বদলে google লেখেন । ব্যাস একটা শব্দের জন্ম নিলো সংখ্যা তত্ব থেকে।


আসুন এবারে নিয়ে আসি আমাদের কবিগুরুকে। রবীন্দ্রনাথ সবে তখন কবিতা লেখা শুরু করেছেন। কিন্তু তিনি যে কবিতা লেখেন লোককে জানাতে হবেতো? একদিন বাড়িতে এলেন 'ন্যাশনাল পেপার' এর সম্পাদক নবগোপালবাবু। তাঁর প্রিয় দাদা জ্যোতিদা কে দিয়ে প্রস্তাবটা রাখলেন। রবি একটা কবিতা লিখেছে একটু শুনবেন? তাঁর আনন্দ আর ধরেনা। অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে উচ্চস্বরে কবিতাটি ওনাকে শোনালেন। কাব্যিকতা আনার জন্যে একটি শব্দ 'ভ্রমর' এর পরিবর্তে ব্যবহার করলেন 'দ্বিরেফ' । নবগোপাল বাবু হেসে জিজ্ঞেস করলেন তা ওই 'দ্বিরেফ' শব্দটা কি? জবাব দিলেন যে ভ্রমরের মাথার ওপরে দুটো রেফের মতো যে শুঁড় থাকে তাই ওই শব্দটা উনি ব্যবহার করেছেন। দুই সংখ্যা টি থেকে হয়ে গেলো এই 'দ্বিরেফ' শব্দের সৃষ্টি।
একটু ওনার নিজের মুখে শোনা যাক।
" দ্বিরেফ" এবং "ভ্রমর" দুটোই তিন অক্ষরের কথা। ভ্রমর শব্দটা ব্যবহার করলে ছন্দের কোনো অনিষ্ট হতোনা। ওই দুরূহ শব্দটা কোথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছিলাম মনে নাই। সমস্ত কবিতার মধ্যে ওই শব্দটার ওপরেই আমার আশাভরসা সব চেয়ে বেশি ছিল। নবগোপালবাবু হাসিলেন বটে কিন্তু 'দ্বিরেফ" শব্দটা মধুপানমত্ত ভ্রমরের মতো স্বস্থানে অবিচলিত রহিয়া গেলো।"(জীবনস্মৃতি পৃষ্ঠা ২৯)


সংখ্যা মানুষকে প্রভাবিত করেছে তার জীবনযাত্রার প্রতি স্তরে। সংখ্যা স্থান করে নিয়েছে তার ক্রিয়াকর্মে তার মুখের ভাষায়।  নানা সমাসবদ্ধ শব্দ ও শব্দবন্ধে ঘটেছে তাদের প্রকাশ। কোন কোন সংখ্যা শুভসূচক বিবেচনায় সামাজিক ক্রিয়াকর্মে ও ধর্মীয় আচরণে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে অন্যদের তুলনায় বেশি পরিমাণে ।
যেমন ধরুন 'সাষ্টাঙ্গ প্রণাম'। মোট আটটি অঙ্গের সমাহারে সুসম্পন্ন হয় এই প্রণাম, তাই এই নাম। এই আটটি অঙ্গ হল - জানু, চরণ, হস্ত, বক্ষ, মস্তক, চক্ষু, দৃষ্টি ও বাক্য। চতুর্ভুজ’ শদের আর এক অর্থ হল ‘নারায়ণ’ যাঁর চারটি বাহু । দশভুজা অর্থাৎ দেবী দূর্গা।চতুর্বেদ — ঋক্‌ সাম যজুঃ অথর্ব। নবগ্রহ — সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। (১) এক সংখ্যাটির ম্যাজিক দেখুন এবারে --একতরফা, একচালা, একমুঠো, একশৃঙ্গ, একবস্ত্র,  একনিষ্ঠ ,একপত্নীক ইত্যাদি। এবারে দেখি (২ ) সংখ্যার সৃষ্টি --দুপেয়ে, দুআনি, দোচালা, দোফসলি, দোভাষী, দোমোহানি ,দুতরফা ইত্যাদি।
সংখ্যা নিয়ে বাংলার নিজস্ব শব্দ অথবা শব্দবন্ধ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যার নিজের অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থবাহী। কিছু শব্দ লক্ষ করলে দেখবেন যে সংখ্যা থেকে সৃষ্টি কিছু শব্দের পুংলিঙ্গ নেই যেমন --ত্রয়োদশী, চতুর্দশী, ষোড়শী,সপ্তদশী, অষ্টাদশী।


শেষ করি রবীন্দ্রনাথ কে দিয়ে -- 'ওগো তুমি পঞ্চদশী, পৌঁছিলে পূর্ণিমাতে'।


এইরকম আরো অনেক শব্দই সংখ্যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে।  পাঠক-পাঠিকারা একান্তে’ বসে ভাবতে পারেন।


আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই আসরের সকল কবিবন্ধুদের।