কবিতার মাধ্যমে শেখা শিশুদের নির্দিষ্ট ধারণা আরও ভালভাবে মিলিত হতে সহায়তা করে। শিশুদের কবিতা অভিব্যক্তিগত ক্ষমতাও বিকাশ করে। ছোটদের ছড়া কবিতা বা ছড়া হলো ছন্দে রচিত পদ্য। ছড়া সাধারণত স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত হয়। ছড়াসাহিত্যকে শিশুসাহিত্যের অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্যে যারা ছড়া লিখে বিখ্যাত হয়েছেন তাদের সবাইকেই কবি বা শিশু সাহিত্যিক বলে ডাকা হয়। শিশুদের সাহিত্য সম্পর্কে জানার প্রথম সিঁড়ি হলো ছড়া। ছড়াকে কবিতার মধ্যেই ফেলা যেতে পারে। কারণ ছড়াও কবিতা, শধুমাত্র শিশুদের উপযোগী করা লেখা হয় বলে একে ছড়া কবিতা বলা হয়। বাঙালি শিশুর মুখ দিয়ে বুলি শুরু হয় কবিতা দিয়ে। মায়ের কোলে শুয়ে থাকা শিশুটির কানে জন্ম থেকে ধ্বনিত হতে থাকে মায়ের মুখ থেকে ক্রমাগত শোনা ---


"ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি
মোদের বাড়ি এসো,
খাট নাই পালং নাই
খোকার চোখে বসো।
বাটা ভরে পান দিবো
গাল ভরে খেয়ো,
খোকার চোখে ঘুম নাই
ঘুম দিয়ে যেয়ো।"


"ছেলে ঘুমালো পাতা জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দিবো কিসে?"


"আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা,
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
মাছ কাঁটলে মুড়ো দিব,
ধান ভাংলে কুড়ো দিব,
কালো গরুর দুধ দিব,
দুধ খাবার বাটি দিব
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।"


"ঢোল ঢোল ঢুলোনি
রাঙ্গা মাথায় চিরুনি
বর আসবে এখনি
নিয়ে যাবে তখনি।"


"বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এলো বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে
তিন কন্যা দান।
এক কন্যা রাধেন বাড়েন
এক কন্যায় খান,
আরেক কন্যা না খেয়ে
বাপের বাড়ি যান।"


"বাক বাকুম পায়রা
মাথায় দিয়ে তায়রা
বৌ সাজবে কালকি
চড়বে সোনার পালকি"


এ ছাড়া আছে আরো অনেক শিশুদের ছড়া যা মায়েদের কাছে ক্রমাগত শুনতে শুনতে পিতা মাতার অজান্তেই শিশুর মগজে গড়ে ওঠে এক কবিতার পাঠশালা। মানুষের দ্রুততম বিকাশ হয় শৈশবের শুরুতে।  জন্মের পর থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত থাকে বিকাশের এই পর্ব।ছয় মাসের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক গঠিত হয়ে যায় এবং আট বছরের মধ্যে তৈরি হয় ৯০ শতাংশ। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ, সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক সম্ভাবনা বিকাশের জন্য কবিতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমার ধারণা। বাংলার গ্রামে গঞ্জে  শিশুর যত্ন ও প্রতিপালন বিষয়ে মা-বাবাদের জ্ঞান ও সচেতনতা খবুই সীমিত। ছোট শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অধিকাংশই জানে না। সেক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে মায়েদের মুখ থেকে শোনা ছড়াগুলো জীবনের শুরুর দিকে উৎসাহ যোগানো ও বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। কথা বলা, পড়া, গান গাওয়া, ধাঁধাঁর সমাধান এবং অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলা শিশুর ওপর সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশু মনোযোগ দিয়ে শোনে, কথায় সাড়া দেয়, শব্দের অনুকরণ করে, প্রথম অর্থবোধক শব্দ বলে, বড়দের কাজ-কর্ম অনুকরণ করে, বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, সমস্যার সমাধান করে ও খেলাধুলা শুরু করে। তিন থেকে পাঁচ বছরে শিশুরা নতুন নতুন বিষয় শেখা উপভোগ করে, দ্রুত ভাষা রপ্ত করতে থাকে, কোনো বিষয়ে বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা অর্জন করে এবং নিজের মতো করে কিছু করতে চায়।


পৃথিবীর আলোয় যখন আসে আমাদের শিশুটি তার জন্যে আমরা সবাই চেষ্টা করি তার জন্যে একটি সাজানো বাগান গড়ে দিতে। আর সেই বাগানের প্রথম বীজটি আমরা রোপণ করি মায়ের মুখ থেকে শোনা কবিতা দিয়ে।  মা-বাবার ঘরটাই 'সুকান্তের সেই বাসযোগ্য পৃথিবী।'  শিশুটিকে আমরা যদি বড় করে তুলি আপন মমতায়, সঠিক বিকাশে  তাহলে সে হয়তো তার পৃথিবীটাকে তার মতো করেই বাসযোগ্য করে তুলবে। মনের মতো সাজাবে আপন পৃথিবীর বাগানটাকে আর কবিতার বাগানটিকে।  


কবিতা এভাবেই  শিশু মনকে বিকশিত করে।


আমার কথাটি ফুরালো।


ভালোবাসায় সবাই ভালো থাকুন আসরের কবি বন্ধুরা।