দুই বাংলাতেই এতো কবিতার উৎপাদন বোধহয় বিশ্বের আর কোথাও হয়না। কবিতার বিশাল ভান্ডার তৈরী হয় এই কারখানায়। কারখানার নাম লিটল ম্যাগাজিন। কবি ও কবিতার উৎপাদন এই ছোট পত্রিকা গুলোর পাতায় পাতায়। যে কোনো অল্পবিস্তর বই-মনস্ক বাঙালি একবার না ছুলে ঘুম হয়না। যেমন হয়েছে আমাদের এই কবিতার আসরে সদস্যদের অবস্থা। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেন বাথরুম যাওয়া আর দাঁত মাজার মতো দৈনন্দিন রুটিনের মতো হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে কতক্ষনে কম্পিউটারটা খুলবো আর আসরের পাতাটা খুলবো তার জন্যে মনটা ছটফট করতে থাকে। কবিতা বুঝি যৌবনেরই জৈব আনুষঙ্গিক। পাবেন এইসব পত্রিকায় কবিতার শব্দঝংকার, শব্দঝরনা, শব্দযন্ত্রণা। লিটল ম্যাগাজিনের প্রধান উপজিব্য কবিতা। আ ল্যান্ড মেড ফর পোয়েট্রি ? মাঝে মাঝে ভাবি হয়তো তাই। তবু জানিনা কেন মনে হয়  যে 'বাঙালি জাতকবি '  যখন বলি আমরা তখন মেয়েদের কথা মনে রাখি না। জাতীয় চরিত্র তো স্ত্রী পুরুষ উভয়ের পক্ষেই প্রযোজ্য হবে তাইতো ? যদি বলি বাঙালি কবিতা ভালোবাসে তাহলে কেও কেও বলবেন মেয়েরা বাদে। এমনটা কেন? আর যদি বলি বাঙালি মাছ ভাত খায় তাহলে তো স্ত্রী পুরুষ উভয়ের পক্ষেই প্রযোজ্য? অথচ দেখুন পুরুষের কবিতা লেখার প্রেরণা কিন্তু নারী। নারী সবসময় তুলনীয় পুষ্পের সঙ্গে , বৃক্ষের সঙ্গে নয়। তার আত্মা নেই, ইন্দ্রিয় আছে।  চিন্তা নেই, সজ্জা আছে।  এইসব অসঙ্গত ধারণা নিয়ে আমরা যতদিন দিগ্ভ্রান্ত করে রাখবো নিজেকে ততদিন শিল্প সত্যের নাগাল পাবনা। যাই হোক না কেন তরুণ বাঙালি হৃদয়ের দুর্দমনীয় নেশা এই কাব্যচর্চা। বুক থেকে কবিতা আর বুক পকেট থেকে চাঁদা --এই দুটি বস্তু ঠিকমতো যোগান হোলে আজকের তরুণ কবিরা অক্লান্ত পরিশ্রমে রুগ্ন সন্তানের মতো অতিযত্ন করে লিটল ম্যাগাজিনের কারখানা গুলোকে সেবা করে বাঁচিয়ে রাখবে। বাংলা কবিতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে ঠিক এভাবেই কবিতা-বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে। তবে একটা জিনিস লক্ষ করার মতো যে কাব্যজননীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে নাতো? কবি বাড়ছে ঠিকই কিন্তু ভালো কবিতা বাড়ছেনা। ক'জন নতুন কবি এসেছেন পাঠকের হৃদয় গভীরে প্রবেশ করতে? পপুলেশন এক্সপ্লোশানের মতো কবিতা এক্সপ্লোশান ঘটবে নাতো? এই গুরুতর সমস্যাটি নিয়ে প্রতিটি কবির দুশ্চিন্তা করা খুব জরুরি। কবিতার পাঠকেরাও এ নিয়ে কিন্তু দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। কবিতাপিপাসুর চোখ যেন অন্য ঘাটে না চলে যায়।বাঙালির কবিতাপ্রীতি আমার মতে একটা  জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ যেভাবেই হোক রক্ষা করা দরকার।তাই কবিদের প্রতি অনুরোধ আপন সৃষ্টির প্রতি যত্নবান হন। কবিতা বড়ো ধৈর্যের ধন। কবিতা পাবলিসিটি নয়, কবিতা-শিল্প প্রেমই কবিতার পূর্ণতা। কবিতার সত্যই হয়ে উঠুক জীবনের সত্য। কবিতা চিরজীবী হোক।