প্রথমত ব্যঙ্গ কবিতা কোনো মৌলিক সাহিত্য নয় ! ব্যঙ্গ কবিতা কোনসময় অনুকরণমূলক অথবা এক কবি আর এক কবিকে তার কোনো কবিতা বা রচনা কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা ! তবে যদি ব্যঙ্গকবিতায় গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা যায় তাহলে এটাও সুসাহিত্যের পর্যায়ে পড়তে পারে ! ব্যঙ্গ কবিতা অনেকসময় কবিদের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণ ঘটাতে পারে ! নীচের এই উদাহরণটি দিলে আমার বক্তব্য পরিস্কার হবে ! কাজী নজরুল ইসলাম এবং কবি মোহিতলাল মজুমদার ছিলেন পরস্পরের খুব ঘনিষ্ঠ ! দুজনেই ছিলেন সমসাময়িক কবি !
নজরুলের "বিদ্রোহী" কবিতাটা  যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে কবি মোহিতলাল দাবি করে বসলেন যে এই কবিতাটি তার 'মানসী' পত্রিকায় প্রকাশিত 'আমি' নামক প্রবন্ধ থেকে চুরি করা হয়েছে ! মোহিতলাল নজরুলকে ব্যঙ্গ করে "ব্যাঙ" নাম দিয়ে এক ব্যঙ্গ কবিতা লিখলেন !
"আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং ,
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাঙ
আমি ব্যাঙ ,
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবন-নিশার পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে ‘বাপ বাপ’।


এই কবিতা লেখার পরে মোহিতলাল আর নজরুলের বন্ধুবিচ্ছেদ হয়ে যায় !


মাইকেল এর 'মেঘনাদ বধ' ও এর থেকে রেহাই পায়নি ! যে কাব্য হিমালয়ের মতো আজ ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ! প্রধান ক্রিটিক ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ! তিনি বললেন এটাকে 'ছুঁচোবোধ কাব্য' ! কথাপ্রসঙ্গে বলি যে বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ এর মধ্যেও সম্পর্কে চির ধরেছিলো !


শেষ করার আগে বলি রবীন্দ্রনাথ এর 'শরৎ' কবিতাটি নিয়ে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ব্যঙ্গ কবিতা !


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শরৎ'


আজি কি তোমার মধুর মূরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে!
হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।


যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘শরৎ’


আজি কি তোমার বিধুর মূরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে!
হে মাত বঙ্গ, মলিন অঙ্গ
ভরি গেছে খানা ডোবাতে।


তাই যারা ব্যঙ্গ কবিতা লেখেন (আমিও লিখি) তাদের সবসময় খেয়াল রাখা উচিত যেন তাতে কেও মনে আঘাত না পায়! যেমন সুকুমার রায় !
একদিন সুকুমার রায়ের "মন্ডা ক্লাব এর সম্পাদক কোথায় ডুব দিলেন জানা নেই। ‘সভ্যদের মাথায় তো প্রায় বজ্রাঘাত হবার জোগাড়। তখন তিনি শোকের চিহ্ন কালো বর্ডার কবিতাটির চারিদিকে এঁকে নোটিশ বোর্ডে কবিতাটি লিখে ঝুলিয়ে দিলেন ! এটাও কিন্তু সম্পাদক মহাশয়কে ব্যঙ্গ করে লেখা কিন্তু সবাইকার মনে হাস্যরসের সৃষ্টি করে !


“সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব-
এদিকেতে হায় হায়
ক্লাবটি ত যায় যায়।
তাই বলি, সোমবারে
মদগৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধুলি
ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।
রকমারি পুঁথি যত
নিজ নিজ রুচিমত
আনিবেন সাথে সবে
কিছু কিছু পাঠ হবে।
করজোড়ে বারবার
নিবেদিছে সুকুমার।”


আসরের বন্ধুদের যদি এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে আমার লেখা সার্থক বলে জানবো !
সবাইকে জানাই প্রীতি ও শুভেচ্ছা !