সব শিক্ষার লক্ষ্য কি?শিক্ষার আসল লক্ষ্য এমন একটি পৃথিবী চাওয়া, যা মানবজাতি, প্রকৃতির সাথে নির্ভীক উষ্ণতা,বিশ্বাস এবং স্বাধীনতার পরিবেশে সহযোগিতা করতে পারে। শিক্ষার ওপরে রবীন্দ্র দর্শনের এটাই শেষ কথা।বর্তমান অশান্ত পরিবেশে কথাটা হয়তো পুরোনো রোমান্টিক কণ্ঠস্বরের মতো শোনাবে।কিন্তু একজন কবি স্বাভাবিকভাবেই দাবি করতে পারেন যে জীবনের সহজ জিনিষগুলোতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া। সমবেদনা হলো মৌলিক মূল্যবোধ। আর এটাই শিশুদের সৃজনশীল শক্তির গোপন রহস্য। সভ্যতার শেষ চরিত্র আনন্দ ও সমবেদনা। সৃজনশীলতা মানবজাতির জন্যে ঈশ্বরের এক অনন্য উপহার।
"সভ্যতার সংকট" রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ অভিভাষণ। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে অশিতম জন্মদিন উপলক্ষে কবি এই অভিভাষণ টি রচনা করেন। সে বছরে বাংলা নববর্ষের দিন শান্তিনিকেতন আশ্রমের উদয়নের সামনে কবিগুরুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট শ্রী ক্ষিতিমোহন সেন (নোবেল জয়ি অমর্ত্য সেনের পিতামহ) প্রবন্ধটি প্রথমবার পাঠ করেন। প্রবন্ধটিতে কবি ইতিহাস বিশ্লেষণ করে মানব সভ্যতার বর্তমান সংকটের একটি ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন। আর ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন ইংরেজ শাসনের আসন্ন সমাপ্তি। তাই প্রবন্ধের শেষে সংকলিত হয়েছে :-


এই কথা আজ বলে যাব, প্রবলপ্রতাপশালীরও ক্ষমতা মদমত্ততা আত্মম্ভরিতা যে নিরাপদ নয় তারই প্রমাণ হবার দিন আজ সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে; নিশ্চিত এ সত্য প্রমাণিত হবে যে-


"অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি ।
ততঃ সপত্নান্‌ জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি ॥"


"ঐ মহামানব আসে ।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে ।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ ,নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের লগ্ন ।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন ।
উদয়শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব
নবজীবনের আশ্বাসে ।
‘জয় জয় জয় রে মানব - অভ্যুদয়'
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে ।"


উপসংহার ;-
যদি আমাদের শিক্ষা ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার শিকড় হয়ে থাকে, তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করেন, এটি মানুষকে এই বিভ্রান্ত বিভেদের বিভেদমূলক ধারণার উপরে কিভাবে উঠতে পারে তা শিখতে পারে, এবং শান্তিপূর্ণভাবে সহ-অস্তিত্ব হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাটি ওপরে প্রযোজ্য ছিল। স্কুলগুলির মধ্যে দৃঢ় শৃঙ্খলা ছিল ভয়ের উপর ভিত্তি করে, সহানুভূতি নয়। যান্ত্রিকভাবে আরোপিত ব্যবস্থা ছাত্রদের মনের বা শরীরের হিসাব গ্রহণ করে না, এটি তাদের উপর তাদের নিয়ম বাধ্যতামূলকভাবে শেষ হয় তাদের আত্মার প্রাণনাশ।


আপনাদের পাঠ করে কেমন লাগলো জানতে পারলে খুশি হবো ।  
সবাইকার জন্যে রইলো আমার আন্তরিক আলিঙ্গন ও উষ্ণ অভিনন্দন।