কবিতার নাম:  'সিফিলিস'
কবির নাম : Girolamo Fracastoro  -- ইতালিও চিকিৎসক কবি
জন্ম -১৪৭৮
মৃত্যু :১৫৫৩
মোট ১৩০০ লাইনের কবিতা -- তিনটি স্তরে লেখা


আসলে এটি একটি এপিক (Epic) অর্থাৎ মহাকাব্য। বীরগাথা। বিশাল বড়ো কবিতা, দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেচিন্তে গুরুত্ব দিয়ে লেখা।
যৌন সংক্রামিত মারাত্মক রোগ "সিফিলিস'। রোগটি সম্বন্ধে অজানা কারুর নেই। কিন্তু প্রথম এই অজানা তথ্য সারা বিশ্ববাসীকে অবহিত করলেন এই মহান কবি শুধু একটি কবিতার মাধ্যমে। কবিতার কি মহান শক্তি!!
যদিও এটি ল্যাটিন ভাষায় লেখা কিন্তু অনেক ভাষাতেই এই কবিতার অনুবাদ হয়েছে। তা কবিতার নামকরণ হটাৎ সিফিলিস হলো কেন ? আসলে নায়কের নাম 'সিফালাস"। ছিল সে মেষপালক। ঈশ্বর আর ধর্মের নিন্দা করে বেড়াতো এই মেষপালক। ঈশ্বর তাই তাকে এই রোগের দ্বারা শাস্তি দেন। তাই কবি এই মিথের ওপর ভিত্তি করে কবিতাটির নাম দিলেন 'সিফিলিস' আর সেই থেকে রোগের নাম হয়ে গেলো সিফিলিস।একটি বিজ্ঞানের গবেষণা সৃষ্টি করলো একটি মহান কবিতা।
তিনটি স্তরে তিনি লিখেছিলেন এই কবিতা ............


প্রথম স্তরে লিখলেন সংক্রমণের উৎস অর্থাৎ কিভাবে রোগটি ছড়ায়?


আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যৌন সঙ্গম করলে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে পায়ুপথে সঙ্গম কিংবা মুখ মৈথুন করলে অথবা চুম্বন বিনিময় করলে।
রক্তসঞ্চালন কিংবা ইনজেকশনের মাধ্যমে।
গর্ভাবস্খায় আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে।
দ্বিতীয় স্তরে লিখলেন ..........
৬ সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর সব শরীরে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। মাথার চুল পড়ে। মাথা ব্যথা, সামান্য জ্বর এবং গ্রন্থিগুলো ফোলা হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি তীব্রভাবে সংক্রমিত হয়, তার মুখের ত্বক যদি ছিঁড়ে যায় তাহলে চুমুর মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। প্রায় এক বছরের মধ্যে রোগের চিহ্নগুলো মিলিয়ে যায়।
শেষ ও তৃতীয় স্তরে লিখলেন ........
রোগটি শরীরের যেকোনো অংশকে আক্রমণ করতে পারে। সাধারণত হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুরুজ্জু আক্রান্ত হয়। অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মুখে ঘা, ত্বক, হাড় ও লিগামেন্টের ক্ষয়। বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অন্ধ হয়ে যাওয়া, অঙ্গ অসাড়, উন্মাদনা এবং মৃত্যু। শারীরিক ক্ষতি পূরণ করা যায় না।


জন্মগত সিফিলিস : গর্ভাবস্খায় আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে গর্ভফুলের মাধ্যমে গর্ভস্খ শিশু সিফিলিসে আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের এক-তৃতীয়াংশেরই গর্ভপাত হয় কিংবা মৃত সন্তান প্রসব ঘটে। প্রাথমিক গর্ভাবস্খায় মায়ের চিকিৎসা করালে শিশু রক্ষা পায়।


ওপরের প্রত্যেক স্তরগুলি তিনি কবিতার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কবিতাটি মোটামুটি ১৫৩০ সালে লেখা । কবিতাটি প্রকাশের পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল আর সাধারণ মানুষ এই মারাত্মক যৌন ব্যাধিটির কথা জানতে পেরেছিলেন।


পাদটীকা:
বিখ্যাত ফরাসি কবি 'গি দ্য মোপাসঁ'  দুর্ভাগ্যবশত তারুণ্যের শুরুতেই তিনি সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হন, যা তাঁকে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। শেষে মারাত্মক মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়ে ১৮৯২ সালের ২ জানুয়ারি কন্ঠনালী কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্যারিসের একটি প্রাইভেট অ্যাসাইলামে ভর্তি করা হয়, এবং সেখানেই পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯৩ সালের ৬ই জুলাই, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে, মৃত্যুবরণ করেন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিক।


আমার কথা আজ এখানেই ফুরালো কবি বন্ধুরা ! আবার দেখা হবে !
আমার অগ্রিম আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই সব পাঠকদের !


তথ্য সংগ্রহ ......উইকিপিডিয়ার বদান্যতায়