আমার কবিতাগুচ্ছ


প্রথম পর্ব



কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর


নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ সমগ্র


——–:)(:———


প্রথম প্রকাশ-15ই ডিসেম্বর, 2018

——–:)(:———


ভুমিকা


2018 এর শেষ সীমানায় এসে দাঁড়িয়ে আজ নতুন কবিতাগুচ্ছ লেখা হলো। এই কবিতাগুচ্ছ সমগ্রের কিছু কবিতা ইতিপূর্বে বাংলা কবিতার আসর, কবিতার আলো, ও কবিকল্পলতা ওয়েব পত্রিকায়, কবিতা ক্লাব-এ প্রকাশিত হয়েছে। উত্সাহী পাঠকের কাব্যপিপাসা মেটাতে পারলে আমার কবিতা লেখা সার্থক হবে। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।


সর্বে সুখিনঃ সন্তু, সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু।


মা কশ্চিত্ দুঃখভাগ ভবেত্। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!



বিনীত কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


নতুনদিল্লী-110028


——–:)(:———


সূচীপত্র


প্রশ্ন কবিতা
অজয় নদী
বাংলার মাটি বাংলার জল
মন্দিরে কাঁদে তোদের দেবতা
সমাজের অবিচার


——–:)(:———


প্রশ্ন কবিতা


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



আকাশটা কেন নীল হয়


বলতো দেখি ভেবে?


গাছের পাতা সবুজ কেন


কি তার উত্তর দেবে?



সকাল হলে সূর্যিটা কেন


হাসে পূবের আকাশে?


বকেরা কেন পাখা মেলে


আকাশের গায়ে ভাসে?



আঁধার হলে আকাশে কেন


ফোটে সাঁঝের তারা?


বলতে পারো বইছে কেন


অজয় নদীর ধারা?



অজয় নদীর বাঁকে কেন


শাল পিয়ালের বন,


পাখির গানে ভুলায় কেন


সবার নয়ন মন?



রাঙা রাস্তা গিয়েছে চলে


অজয় নদীর বাঁয়ে,


সকল প্রশ্নের উত্তর পাবে


এলে আমার গাঁয়ে।



——–:)(:———



অজয় নদী


ছোটদের আবৃত্তির কবিতা


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



সকাল হোল, ফরসা হোল


ফুটল কত ফুল,


সোনার আলো রাঙিয়ে দিল


অজয়ের দু’কূল।



প্রভাত রবি আঁকলো ছবি


নদীর বালুচরে,


প্রভাত পাখি উঠলো ডাকি


কিচিমিচির করে।



গাঁয়ের পথে সকাল হতে


চলে গোরুর গাড়ি,


নদীর বাঁয়ে গাছের ছায়ে


গাঁয়ে আমার বাড়ি।



বাড়ি আমার পাথরচূড়ে


অজয় নদীপারে,


আম কাঁঠাল খেজুর তাল


আছে পথের ধারে।



গাঁয়ের রাখাল বাজায় বাঁশি


নদীর কিনারায়,


নদীর ঘাটে গাঁয়ের বধূ


জল আনতে যায়।



অজয় নদী ঘাটের কাছে


মন্দির এক আছে,


সকাল হলে পাখিরা সব


বটের শাখে নাচে।



সাঁঝের বেলা ডুবলে রবি


আঁধার নামে চরে,


চাঁদের হাসি উপচে পড়ে


সারাটা রাত ধরে।


——–:)(:———


বাংলার মাটি বাংলার জল


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



বাংলার মাটি               বাংলার জল


বাংলার নব আশা,


বাংলা মোদের              জন্মভূমি মা


বাংলা মায়ের ভাষা।



বাংলার গাছে              পাখিরা নাচে


ফুলবাগে ফুল ফোটে,


বাংলার মাঠে            চাষী ধান কাটে


ধেনু চরে গোঠে গোঠে।



বাংলার ফুল             বাংলার ফল


বাংলার নদীর জল,


বাংলার ভাষা            বাঙালির আশা


বাংলার কোলাহল।



বাংলার বাউল           একতারা হাতে


গান গায় মেঠোপথে,


বাংলার নারী             পরিধানা শাড়ি


জল আনে নদী হতে।



বাংলার জলে             মরালেরা ভাসে


দিঘির কালো জলে,


মোদের সোনার             বাংলার মাঠে


সোনার ফসল ফলে।



বাংলার মাটি                বিশুদ্ধ খাঁটি


সবুজের অভিযান,


বাংলার মাটি                সুখের ঘাঁটি


বাংলায় গাহি গান।



বাংলার সুখে,              সুখী মোরা সবে


দুঃখেতে মলিন মুখ।


বাংলার আশা              বাঙালির ভাষা


গর্বে ফুলে ওঠে বুক।


——–:)(:———


মন্দিরে কাঁদে তোদের দেবতা


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



মন্দিরে কাঁদে তোদের দেবতা


দেবতার চোখে জল,


ঘরে কাঁদে তোর আপন জননী


চোখ করে ছল ছল।



মাটির প্রতিমা কি হবে পূজে


যে মুর্তি দেয় না সাড়া,


পথে কাঁদে কত ক্ষুধাতুর শিশু


কেঁদে কেঁদে দিশেহারা।



আধপেটা খেয়ে ধরিত্রীর বুকে


লাঙল চালায় যাঁরা,


মাটিতে ফলায় সোনার ফসল


অনাহারে থাকে তাঁরা।



ওরাই মানুষ, ওরাই দেবতা


ওরাই দেশের রাজা,


বিধাতার রুদ্র অভিশাপে আজ


ওরা পায় কেন সাজা?



মন্দিরে নাই দেবতা তোদের


দেবতা তোর সামনে।


মানুষ তোদের জাগ্রত দেবতা


এদের তো চিনিস নে?



মানুষকে তুই ভালবাস ওরে


মানুষের কর পূজা,


মানুষের পূজা করলে খুশি


হয় দেবী দশ-ভূজা।



যেথা আছে জীব সেথায় শিব


জীবজ্ঞানে শিব সেবা।


জীবে প্রেম কর ঘৃণা নাহি কর


কর সেবা নিশি দিবা।



মন্দিরে কাঁদে পাষাণ দেবতা


পাথরের চোখে জল,


মানুষ দেবতা অভুক্ত রেখো না


অন্ন দাও অবিরল।



মন্দিরে কাঁদে মাটির প্রতিমা


পাষাণ দেবতা কয়,


অন্নহীনে অন্ন দানিতে এসো


হয়েছে পূজার সময়।



শোন বিশ্ববাসী এসেছে আজি


নর রূপে ভগবান,


মানবের সেবা ভগবানের পূজা


মানবের জয়গান।


সমাজের অবিচার


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



দিকে দিকে চলে কন্যা ভ্রূণহত্যা


জাগুক এবার দেশ,


জননী জঠরে কন্যা অনাদরে


জঠরেতে হয় শেষ।



পৃথিবীর আলো দেখিল না যারা


দোষ তো তাদের নয়,


বলতো তাহলে জনমের আগে


কন্যা কেন নষ্ট হয়?



লক্ষ্মীসম হয়ে এসেছিলো ভবে


তোমার আপনজন,


ঘাতকের বেশে তুমি অবশেষে


করিবে তারে নিধন?



জগতে এসেছে নতুন বারতা


কন্যা নষ্ট আর নয়,


কন্যা জন্ম দিয়ে জননী হইয়ে


করহ পূণ্য সঞ্চয়।



তুমি যে জনক সেজো না ঘাতক


দুহিতা লক্ষ্মী প্রতিমা,


তারে অবহেলে নিধন করিলে


নাহিক দুখের সীমা।



জনক জননী ভালবেসে তারে


আনো পৃথিবীর বুকে,


কন্যা রূপে তারে করিলে পালন


জীবন কাটিবে সুখে।



এসেছে এবার নব জাগরণ


জেগে ওঠো বঙ্গনারী।


বুকে তুলে নাও কন্যা সন্তানেরে


তব দু-হস্ত প্রসারী।



সূত দুহিতার সম অধিকার


দিতে হবে অধিকার,


কন্যা তবে কেন সহিবে যাতনা


সমাজের অবিচার।



জগতের কাজে নারী আসে আগে


ইতিহাসে খুঁজে পাই,


আজিকার দিনে কন্যা রত্ন বিনে


এ জীবনে সুখ নাই।