অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (তৃতীয় পর্ব )
সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।


অজয় নদের ইতিকথা। কেহ বলে নদ কেহবা বলে নদী।


কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক লিখেছেন:
বাড়ি আমার ভাঙনধরা অজয় নদীর বাঁকে,
জল যেখানে সোহাগভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।


আবার কোন কবি লিখেছেন:
অজয় নদে বান নেমেছে,
ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে।


সমালোচনায় না গিয়ে অজয় নদীর ইতিহাস বলে রাখি।
অজয় নদীর এপারে বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জন্মস্থান।
অজয় নদীর কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মেছেন কবি জয়দেব।
তিনি লিখেছেন
স্মর গরল খণ্ডণম,
মম শিরসি মুণ্ডনম,


স্বয়ং কৃষ্ণ ভগবান অসমাপ্ত শ্লোক সম্পূর্ণ করে লিখে ছেন
দেহি পদপল্লবম্ উদারম্।।


ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম দিকের নদী গুলোর মধ্যে (১) ময়ূরাক্ষী, (২) অজয়, (৩) দামোদর, (৪) দ্বারকেশ্বর, (৫) শিলাবতী ( শিলাই), (৬) কংসাবতি (কাঁসাই), (৭) রূপনারায়ন, (৮) হলদি, (৯) কেলেঘাই, (১০) সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য ।


এইসব নদীর মধ্যে অজয়, দামোদর ও ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে এবং অন্যান্য নদীগুলো পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিকের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে শিলাবতী ও দারকেশ্বর নদী দুটি মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নামে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে অবশেষে গেঁওখালির কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে । এছাড়া কেলেঘাই ও কংসাবতী নদী যুক্ত হয়ে হলদি নদীর সৃষ্টি করেছে । এইসব নদীর মধ্যে কেবলমাত্র সুবর্ণরেখা নদীটি ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, অন্য নদীগুলো ভাগীরথী-হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে । এইসব নদী প্রধানত বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীতে সারাবছর সমান জল প্রবাহ থাকে না এবং অতিবৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয় ।


অজয় নদীর জলধারা…….বয়ে চলে বারো মাস
অজয় নদীর কবিতা-৩ (তৃতীয় পর্ব)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


কুয়াশায় ঢেকেছে আকাশ
সূর্য উঠেছে মেঘের ফাঁকে,
সবুজতরুর শাখায় শাখায়
পাখিরা গায় নদীর বাঁকে।


অজয় নদীর ঘাটের কাছে
পুরানো সেই বটের তলায়,
শ্মশান কালী মন্দির মাঝে
নিত্য ঘন্টাধ্বনি শোনা যায়।


নদীর ঘাটে সরু বালিচরে
বসে গাঁয়ের বাউলের দল,
একতারা ও ডুগডুগি লয়ে
মাটির সুরে গায় অবিরল।


অজয় ঘাটে ভালুক ওয়ালা
ভালুক নাচায় দেখায় খেলা,
কলসী কাঁখে নাইতে আসে
গাঁয়ের বধূ সব দুপুরবেলা।


পড়ন্ত বিকালে দিনের শেষে
সূর্য লুকায় নদীর কিনারায়,
জোছনা হাসে তারারা ফুটে
দূরের নীল আকাশের গায়।