আজি পঁচিশে বৈশাখে
             -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আজি পঁচিশে বৈশাখে
সুপ্রভাতে যখন প্রভাতরবি
অরুণরাগে ঘোষণা করে দিবসের সূচনা।
কাননে কুসুমকলি ফুটিল রাশি রাশি,
মুক্ত বাতায়নে আজি রবির কর
পশিল গৃহকোণে। আম্রকাননে
কোকিলের কুহুতানে ভরিল অন্তর।
নিনাদিল মহাশঙ্খ সুউচ্চ রবে
দিকে দিকে আনিল শুভ বার্তা;
ঘোষিল ভুবনময় বিশ্বকবির শুভ জন্মদিন।


আজি পঁচিশে বৈশাখে
দিনের পূণ্য শুভক্ষণে-
সু-স্বাগতম- সুস্বাগতম!
প্রিয় বিশ্ববন্দিত কবি, তুমি বিশ্বকবি।
এসো এসো হে যুগান্তের কবি
প্রকৃতির কবি প্রকৃতিপ্রেমিক সঙ্গীতপ্রেমী
বিশ্বপ্রেমিক তুমি বাংলার মান, বাঙালীর কবি।
পঁচিশে বৈশাখে আজি
ক্রমে ক্রমে যখন প্রভাতরবির
তেজপুঞ্জরাশি তেজোদীপ্ত প্রভা নিয়ে
প্রকাশিত হল ভুবনময়,
বাংলার গর্ব, বাঙালীর গর্ব, বাংলার গৌরব।
বাংলার প্রাণপুরুষ তুমি বিশ্বকবি।
সেদিন যখন-
বিদেশী ভারতত্রাস, করেছিল
মোদের সোনার ভারতবর্ষকে গ্রাস।
সেই তারাই দেশের মাটিতে
কবিহস্তে তুলি দিল উপহার।
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।
দিকে দিকে প্রচারিল কবির জয়গান।
বিশ্বকবি নাম
সমগ্র জাতির বিশ্ব-সম্মান।
অথবা রচিল যবে জাতীয় সঙ্গীত
সমস্বরে গাহিল সারা ভারতবাসী।
অখিল ভুবনে সারা বিশ্বচরাচরে।
বাঁধিছিল কবি সবারে প্রেমের ডোরে।
রাখীবন্ধন নয় সে তো বিশ্বপ্রেমের বন্ধন।


আজি পঁচিশে বৈশাখে
দিবসের শেষ অন্তিম প্রহরে
যখন প্রভাতরবি নব অস্তরাগে,
ছড়াইল সোনালী দীপ্তি
তাল, খেজুর, সুপারির সারি কুসুমবাগে।
যখন বিহঙ্গ যত সবে ধায় আপনবাসায়,
দিগন্তের শেষ দিকচক্রবালে
আলোক লুকায়।
রক্তিম আভায় ঢলে অস্তাচলে।
কবিস্মৃতি স্মৃতিময় হয়ে
উঠে ভেসে সবার মানসপটে,
সারা বিশ্ববাসীর অন্তরের অন্তঃস্থলে।


আজি পঁচিশে বৈশাখে
নিশীথ রাত্রির পঞ্চমীর চাঁদ উঠে
গগনমণ্ডলে। নভোদীপ্ত আভায়
নেচে উঠে আঁধার যামিনী।
দিবসের সূর্য, শর্বরীর চন্দ্র তারকা
গাহে কবির বিজয় বার্তা।
বন্দনা করে আজি সারা বিশ্ববাসী
হে কবি! লহ মোদের প্রণাম।
সঙ্গীতে বেজে উঠে সুন্দরের আরাধনা।
মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি সহ শঙ্খধ্বনি
মিলে যায়, মিশে যায়।
বেজে উঠে বীনার ঝংকার।
দিবস-শর্বরীর কোন এক শুভক্ষণে
উঠে বেজে পিয়ানো সপ্তম সুরে।
রবীন্দ্র সুরের আলোয় মূর্ছনায়
ধীরে ধীরে আঁধার যামিনী কাটে।
শুরু হয় নবপ্রভাত প্রকৃতির আঁচলে।
অবশেষে শেষ হয় পঁচিশে বৈশাখ।


পুনর্বার প্রতীক্ষা শুধু সারাবর্ষ ধরি
আবার এসো হে পঁচিশে বৈশাখ।
শোনাও তোমার রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে
নতুন এক সুর, সু-সমৃদ্ধ সুরের ঝংকার
পুলকিত হোক এই বিশ্ব নিখিল
সারা ভুবনময় হউক আলোকময়।
সারা বিশ্বজুডে আছে যত বিশ্ববাসী
এই বিশ্ব চরাচরে।
প্রতীক্ষা শুধু আজন্ম সারা বর্ষ ধরে।
যুগ যুগ ধরে, সারা যুগান্তরের পরে।