অজয় নদীর কাব্য  
(দ্বিতীয় পর্ব)


এই সংখ্যাটির প্রথম প্রকাশ ২৫শে জানুয়ারী, ২০১৮
এই সংখ্যাটির দ্বিতীয় প্রকাশ ২৫শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৮


আমাদের ছোট নদী (কবির ৯০০তম প্রয়াস)
                         -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আমাদের ছোটনদী নামটি অজয়,
অজয়ের জলধারা অবিরাম বয়।
দুইকূলে ছোট গ্রাম সবুজ ছায়ায়,
অজয় আপন বেগে বয়ে চলে যায়।


দুই ধারে হেরি শাল পিয়ালের বন,
তরুশাখে পাখি ডাকে ভরে ওঠে মন।
বালুচরে শালিকেরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে,
দুইকূলে কাশবন অজয়ের বাঁকে।


আম কাঁঠালের বনে গলি পথ বেয়ে,
নদীঘাটে জল নিতে আসে যত মেয়ে।
নদীচরে পড়ে বেলা সূর্য্যি বসে পাটে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের ঘাটে।

চাঁদ উঠে তারা ফুটে আকাশের গায়,
নদীজল ঝিলিমিলি করে জোছনায়।


অজয় নদীর ধারা-1


“জ্যোৎস্না ঝরা রাতের আকাশ। সুরে ভরা হিমেল বাতাস।
মুচকি হেসে চাঁদ জেগেছে ঐ।
লক্ষ তারা প্রদীপ জ্বেলে। জেগে আছে নয়ন মেলে।
ব্যাকুল মনে অবাক হয়ে রই।                      
                                                       -মহঃ সানারুল মোমিন


***  ***  ***


অজয় নদীর ধারা-2


প্রাণের অজয় নদীর ঘাটে । পাশেই সবুজ শ্যামল মাঠে।
বাজায় হিমেল বাতাস মধুর সুর।
বাঁশ বাগানের ফাঁকে ফাঁকে। জোনাকিরা আজ ঝাঁকে ঝাঁকে।
ঝিঁঝিঁ পোকা আনন্দে বাজায় নূপুর”।              
                                                        -মহঃ সানারুল মোমিন


                                    ভূমিকা


অজয় নদী বহু প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা এবং কিছু উপরিভাগ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অজয় তীরবর্তী এলাকায় প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে লৌহযুগের সভ্যতার বিভিন্ন নির্দশন মিলেছে। সেদিনের অতিশয় নাব্য অজয় একদিকে যেমন পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অতীব প্রয়োজনীয় সুযোগ দান করেছিল তেমনি এর জলধারার জলজ প্রাণি সংগ্রহ এবং কৃষিকার্য পরিচালিত হত। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের নিকটবর্তী ঢাকাই পর্বত থেকে উত্থিত এই নদী চিত্তরঞ্জনের নিকট বর্ধমান জেলায় প্রবেশ করে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমান-বীরভূম জেলা দুটির সীমানা রচনা করেছে। বর্ধমান জেলায় কাঁকসা অরণ্যভূমির নিকট সাহকাহানিয়ায় কিছু প্রত্নপ্রস্তর যুগের আয়ুধ সম্ভার মিলেছে।


তবে এই অরণ্যভূমির অন্তর্গত পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে এই সময়ের বেশ কিছু খোদানাস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পাণ্ডুরাজার ঢিবি অজয়ের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। অজয় তীরের সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশের একটি উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হিসেবে পাণ্ডুরাজার ঢিবি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক-ঐতিহাসিক যুগ সন্ধিক্ষণের বহু বস্তুগত নিদর্শন এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে।


পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালনায় এখানে ১৯৫২ থেকে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কয়েকটি বিস্তৃত খনন কার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং তার ফলে এখানে প্রাচীনতম সভ্যতার ধারা প্রতি আলোকপাত সম্ভব হয়েছে। একেবারে আদি প্রস্তর যুগের কিছু নিদর্শনসহ তাম্র ও লৌহযুগের নানা তথ্যে এই প্রাচীনতম সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রটি পরিপূর্ণ। এখানেই সর্বপ্রথম প্রাগৈতিহাসিক বাংলার মানব সংস্কৃতি ও সভ্যতার মোটামুটিভাবে সুসামঞ্জস্যের চিত্র লক্ষিত হয়। এখানের উত্থিত স্তরসমূহে বিভিন্ন প্রাচীনতম কুটিরের ধ্বংসাবশেষ, মানব সমাধি ও মৃত্পাত্র পাওয়া গিয়েছে। এর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষুদ্রাস্ত্রের সন্ধান মিলিছে। এর নিম্নস্তরগুলিতে কয়েক ধরনের প্রত্নপ্রস্তর যুগের হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে।


উপরের স্তরগুলিতে বহু লাল-কালো মৃত্পাত্র দেখা গিয়েছে। কুমোরের চাকার সাহায্যে তৈরি করে এগুলি নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় আগুনে পোড়ান হত। এখানের বাসিন্দারা ছোট ছোট গৃহনির্মাণ করে বসবাস করত। এখানে আবিষ্কৃত খুঁটির গর্তগুলি পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়েছে যে এদের গোলাকার অথবা আয়তাকার ঘরগুলির দেওয়াল ছিল শক্ত ধরনের কাঁচামাটির সাহায্যে তৈরি, যাদের উপর পাতা অথবা খড়ের আচ্ছাদন ছিল। পাণ্ডুরাজার ঢিবির সভ্যতার পরিণত পর্যায়ে কিছু ধান এবং ধানের খোসার অস্তিত্ব মিলিছে। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে এই ধান কৃষিজশ্রেণীভুক্ত। অতএব একথা মেনে নিতে কোনও দ্বিধা নেই যে পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে বসবাসকারী মানুষেরা ধান চাষে অভ্যস্ত ছিল।


এখানের তাম্রযুগ বিশেষভাবে উন্নত পর্যায়ে ছিল। নানা ধরনের মাটির পাত্রের সঙ্গে তাম্রপাত্রও নির্মিত হত। এখানের স্তরগুলিতে হাড়ের তৈরি আয়ুধ যেমন বর্শাফলক, তীক্ষ্নাগ্র ছাড়াও ঘোরানো ছুরি, মাছ ধরার বঁড়শি এবং বেশ কিছু পুঁতি পাওয়া গিয়েছে। এখানে আবিষ্কৃত সম্ভারসমূহের মধ্যে শিমুল তুলোর সরু সুতোর সাহায্যে বোনা বস্ত্রখণ্ডও রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের তাম্রপ্রস্তর যুগে বস্ত্রবয়ন শিল্পের নিদর্শন রয়েছে। কাজেই এই বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে অজয় উপত্যকায় বিকশিত পাণ্ডুরাজার ঢিবি একটি উন্নত মানের প্রাচীন বঙ্গীয় সভ্যতার নিদর্শন উপস্থাপন করেছে।


অজয় নদীর ধারা বয়ে চলেছে অবিরাম, অবিচ্ছিন্ন গতিতে। বহু ভাঙা গড়ার ইতিহাস রচিত হয়েছে অজয় নদীর তীরে। তার নীরব সাক্ষ্য হয়ে আজও অবিরত বয়ে চলে অজয় নদীর ধারা। তাই আজ আবার নব কলেবরে প্রকাশিত হলো অজয় নদীর কাব্য দ্বিতীয় পর্ব।


কাব্যখানি সকলের ভালো লাগলে আমার শ্রম সার্থক হবে।                  বিনীত কবি        ‌


২৫ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৮                                      
নতুন দিল্লি-১১০০২৮



যাঁদের লেখা কবিতা এই সংখ্যায় আছে


অজয় নদী                        রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অজয়ের কাব্য (এক)                সঞ্জয় কর্মকার
অজয়ের কাব্য (দুই)                সঞ্জয় কর্মকার
অজয়ের কাব্য (তিন)                সঞ্জয় কর্মকার
ইংরাজী অনুবাদ                সঞ্জয় কর্মকার
অজয় নদীর কথা                মহঃ সানারুল মোমিন
অজয় নদীর হৃদয়                   মহঃ সানারুল মোমিন
অজয় গাঁথা                        মূলচাঁদ মাহাত
অজয়তীরে জয়দেব মেলা           মূলচাঁদ মাহাত
অজয়ের বালুচরে                দীপ্তি রায়
অজয় নদীর তীরে                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয়ের নদীচরে                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর বাঁকে                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



অজয় নদী
      - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  


এককালে এই অজয়নদী ছিল যখন জেগে
                   স্রোতের প্রবল বেগে
            পাহাড় থেকে আনত সদাই ঢালি
       আপন জোরের গর্ব ক'রে চিকন-চিকন বালি।
  অচল বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে যখন ক্রমে ক্রমে
              জোর গেল তার কমে,
নদীর আপন আসন বালি নিল হরণ করে,
     নদী গেল পিছনপানে সরে;
                 অনুচরের মতো
     রইল তখন আপন বালির নিত্য-অনুগত।
কেবল যখন বর্ষা নামে ঘোলা জলের পাকে
                 বালির প্রতাপ ঢাকে।


পূর্বযুগের আক্ষেপে তার ক্ষোভের মাতন আসে,
           বাঁধনহারা ঈর্ষা ছোটে সবার সর্বনাশে।
আকাশেতে গুরুগুরু মেঘের ওঠে ডাক,
        বুকের মধ্যে ঘুরে ওঠে হাজার ঘূর্ণিপাক।
তারপরে আশ্বিনের দিনে শুভ্রতার উৎসবে
      সুর আপনার পায় না খুঁজে শুভ্র আলোর স্তবে।
দূরের তীরে কাশের দোলা, শিউলি ফুটে দূরে,
         শুষ্ক বুকে শরৎ নামে বালিতে রোদ্‌দুরে।
চাঁদের কিরণ পড়ে যেথায় একটু আছে জল
       যেন বন্ধ্যা কোন্‌বিধবার লুটানো অঞ্চল।
নিঃস্ব দিনের লজ্জা সদাই বহন করতে হয়,
      আপনাকে হায় হারিয়ে-ফেলা অকীর্তি অজয়।


বাংলা কবিতা আসরের সবার সেরা কবি সঞ্জয় কর্মকার মহাশয়ের
অজয় নদীকে কে কেন্দ্র করে অজয়ের কাব্য এক দুই ও তিন  
পর পর প্রকাশ দিলাম।


অজয়ের কাব্য- (এক)  
              - সঞ্জয় কর্মকার


আহা! মন হারিয়ে পথিক ভোলা
অজয় নদীর পালকি তোলা,
হারিয়ে সে পথ আকাশ নদে
হৃদ প্রাণেতে দেয় যে
দোলা।


দ্যোল দুলানি অজয় রানী
রূপের শোভা মন মাতানি,
কল কল জল লহর ডাগর
মন্দ স্রোতে বইতে
পানি।


সে পথ বাড়া জাহ্নবিতে
মন নদীতে প্রাণটি মেতে,
আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে হৃদে
অবাক চেয়ে
রই।


শাল পিয়াশাল রাশির মেলা
স্নিগ্ধ জলের আলোক ধারা,
গাইতে সে গান রবির দেশে
প্রাণটি ভুলে
সই।


আজ দখিনা হাওয়ায় মেতে
চলনা সখী অজয় ঘাটে
পরাণ মাঝি দ্বার খুলে দে
আজকে সাঁজের
বেলা।


আজ প্রেমেতে অজয় মেতে
হৃদয় সনে হৃদয় গানে
ফল্গুধারা বইতে প্রেমের
সাক্ষী অজয়
নদ।


আজ তুলেছি পালকি জলে
আজকে পরাণ অজয় জলে
আজ পরিনয় আজকে প্রনয়
অজেয় পানি
কোকোনদ।



অজয়ের কাব্য (দুই)
                 -সঞ্জয় কর্মকার


অজয় নদী অজয় নদী পুণ্য তোমার ধাম,
কুলু কুলু বইতে ধারা,
তোমায় প্রণাম।
তোমার গীতি গাইতে গান উছল রবে সুরটি তুলি,
অজয় নদী অজয় নদী-তোমার ধারায়
প্রাণটি মিলি।
তোমার গতির ধারাসনে যেমন তুমি পদ্মাবতী,
মিলতে তোমায় গাঁয়ের মানুষ
হৃদয় দিয়ে জ্বালতে
বাতি।
সোনার রবি কিরণ মেলে তোমার ছলক উছল জলে,
হাজার জোনাক জ্বালতে আলোক
সেলাম ঠুকি জয় মা
বোলে।
তোমার হৃদয় নজরুল প্রাণ দিব্য কাব্য গাঁথা,
সোনার সে ভূম দিব্য ঝলক
তোমার কতকথা।


অজয়ের কাব্য (তিন)
                  -সঞ্জয় কর্মকার


অজয় আমার প্রাণের ধারা
ঝর ঝর ঝর পানি,
স্বয়ন স্বপন আঁখির পাতে
তাহার আগমনী।


পদ্মা আমার গঙ্গা আমার
আমার ভগিরথী,
ছল ছ্ল ছ্ল উছাল পরাণ
দিতেই আরতি।


ছোট্ট যখন ছিলেম তখন
জাল দিয়ে মাঝ ধরা,
ডুবতে লহর ডুবকি দিয়ে-
জলকে স্নান করা।


ধন্য মাতা প্রণাম ধরি,
হৃদ প্রাণেতে তোরই গাঁথা,
দিস রে মা'রে চরণ তো'রি
গাইতে উপকথা।


এই কবিতার ইংরাজী অনুবাদ


You are flowing so pleasant
You, the Holy River Ajay.
The holy land that you have created,
In our village, by your virtue


We all worship it,
Oh dear river you are.
We sing your song with pleasure and
We dedicated ourselves to you.
To us, you are our mother


You are The Padma, The holy Ganga,
Oh my! Oh, my dear mom.
We love you with our heart and soul.
The luster of sun get mingled with you
Thousand and thousands firefly
At the night.


You are the land of great poet
The beloved Nazrul.
We salute you, we salute you
The holy mom
You are.



অজয় নদীর কথা
                মহঃ সানারুল মোমিন


বয়ে চলেছে মহানন্দে অজয় নদীর জল।
দিবারাতে শুনি পাখপাখালীর কোলাহল।
কত গান? কত কবিতা লিখে চিরকাল।
অজানা স্বপ্ন-ছায়া আঁকে,রুপালী বিকাল।


গান গেয়ে,দাড় বেয়ে নৌ চলে বাঁকে বাঁকে।
অজানা পাখির দল- পাড়ি দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে।
হাজার কুসুম সাজে তরু লতার শাঁখে শাঁখে।
শত নানান ফল সাজে গাছে থোকে থোকে।


নব প্রভাতে,জলের সাথে,আলোর ঝিকিমিকি।
সারা দিন শুনি শালিক গাং চিলের কিচিমিচি।
মরাণ চলে মনের সুখে মরালীর পিছে পিছে।
হরেক মাছের দল, চলে জলের নিচে নিচে।


বালুচরে,স্বপ্ন ঘিরে-বসে মানবের মিলন মেলা।
কতনা কেনা বেচা-চলে সারা বিকাল বেলা।
নৌকা বেয়ে আসে মাঝি গায় সুখে মনের গান।
হাজার রুপে সাজে- জুড়ায় অজয়ের প্রাণ।


সাঁঝের বেলা, করে খেলা রাখালের বাঁশি।
রুপোর ঝলকে জ্যোৎস্না নামে রাশি রাশি।
সাধের ধেনু,মেখে গায়ে রেণু, গৃহে ফিরে।
রাতের শেয়াল ডেকে ওঠে অজয়ের তীরে।


শান্তি নামে,অজয় ধামে, নামে চাঁদ তারা।
মনের সুখে বয়ে চলে অজয়ের বারিধারা।
এলেন কবি মুকুন্দ,লক্ষ্মণ,জয়দেব,নজরুল।
আসবে হাজার কবি, ফুটবে নানান ফুল।


অজয় কথা,হৃদয় গাঁথা, করছি কিনা ভুল।
দেখিনি যারে, রেখেছি অন্তরে আমি সানারুল।
অজয় রবে, অজয় হবে আগামীর পূণ্যধাম।
মনের খাতায় ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় এই নাম।


অজয় নদের হৃদয়
             -মহঃ সানারুল মোমিন


অজয়ের বালিচরে, হাজার মমতা ঘিরে।
আজ শুনি,মধুর সুরের কলতান।
হাঁসেরা ঝাঁকে ঝাঁকে, ডুব দেয় থেকে থেকে।
জুড়ায় সবার হৃদয়, মন প্রাণ।


খেয়া ঘাটে মাঝি,পাড়ি দিতে রাজি।
অজয়ের সুকোমল বুকে।
মাঝে মাঝে গান শুনি,আসে মধুর ধ্বনি।
মল্লারা গান গায় মহাসুখে।


বাজে ভাটিয়ালী গান,বাউল জুড়ায় প্রাণ।
আহঃ শুনি কি অমৃত সুর।
নদীর বাঁকে বাঁকে, পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে।
প্রাণের আনন্দে বাঁজায় নূপুর।


দুই পাশে দুই তীরে,মায়ের মমতা ঘিরে।
স্বপ্ন সাজানো মাটির কুঁড়েঘর।
সবাই খুবই আপন,মনে হয় অতি প্রিয়জন।
সকলের একই আত্ম,একই অন্তর।


সারাদিন কোলাহল,হয় নদী ঘোলা জল।
হয় না ক্লান্ত প্রাণের অজয়।
পেয়েছে ভালোবাসা, জুড়িয়ে মনের আশা।
সে যে মহৎ,উদার হৃদয়।



অজয় যেন চির সাথী
                       মহঃ সানারুল মোমিন


অজয়ের বাঁকে বাঁকে,
পাখিরা সব ঝাঁকে ঝাঁকে,
গায়ছে মধুর গান।


বকেরা সারি সারি,
বলে যায় “ আড়ি আড়ি”,
শুনি প্রেমের কলতান।


অজয়ের বালি তীরে,
ঝোপঝাড় কত ঘিরে,
ফুটে নানা ফুল।


নীল আনন্দ জলে,
খুশিতে মাছেরা চলে।
মাথা নাড়ে কাশফুল।


শিশুরা আদুল গায়ে-
কাজল জলে নায়ে-
খুশিতে, উল্লাসে মাতি।


আনন্দে আজ মাতোয়ারা-
খুশিতে আপন হারা,
অজয় যেন চিরসাথী।




অজয় গাঁথা-১
              -মূলচাঁদ মাহাত


অজয় নদীর জলের ধারা বইছে অবিরত।
নদীর জলে দুকূল বেয়ে কৃষক চাষে রত।।
প্রভাত কালে নদীর জলে অরুণ আলো পড়ে।
হিরে, মুক্তা, মাণিক যেন ঝিকিমিকি করে।।


নদীর জলে কোলাহলে মত্ত মরাল মরালী।
বালুচরে ঘুরে ফিরে কত না পাখ-পাখালী।।
তীরের যত গ্রাম্য বধু কাঁখে কলসী করে।
স্নান সেরে জল ভরে আলয়ে যায় ফিরে।।


মৎস সম ছেলে মেয়েরা জল কেলি করে।
ছিপ ফেলে কিছু ছেলেরা বড় মাছ ধরে।।
বৈঠা হাতে নাও বেয়ে মাঝি আসে ঘাটে।
পারাপারে যাবার তরে যাত্রী নামে উঠে।।


ঐ যে দূরে ডিঙি বেয়ে আসে কিছু জেলে।
সকাল বিকাল ধরে মাছ তারা জল ফেলে।।
রাখাল ছেলে বাজাই বেণু অজয়ের তীরে।
সাঁঝের বেলা ধেনু লয়ে নিজ গৃহে যায় ফিরে।।


তপন নামে নদীর কূলে রক্তিম আভা ফেলে।
অন্ধকার ঘনিয়ে এলে জোনাকিরা জ্বলে।।
প্রশান্তি নামে দুই নদী কূল আকাশে চাঁদ তারা।
অবিরাম বয়ে চলে তবু অজয়ের ধারা।।


মুকুন্দ, লক্ষণ, জয়দেব, আর নজরুলে।
পবিত্র করেছে মন প্রাণ অজয়ের জলে।।
বঞ্চিত মন তাই আজো দিবা নিশি কাঁদে।
অজয় গাঁথা লেখে কবি মাহাত মূলচাঁদে।।


অজয়তীরে জয়দেব মেলা
                       -মূলচাঁদ মাহাত


সাধ ছিল জন্মাবধি
দেখতে যাব অজয় নদী
              দেখতে যাব জয়দেবের মেলা।


সেই মত সুযোগ খুঁজি
দেখি কেউ যায় বুঝি
            সুযোগ পেলে করবো না অবহেলা।।


সত্যি শেষে সুযোগ এলো
"নিয়ে যাব"-একজন বলে গেল
             যাওয়াও হলো কোচ বাসের দ্বারা।


সারা রাত্রি বাস চলে
পৌছিলাম প্রভাতকালে
             গাড়ী দেখে আমি যে দিশাহারা।।


চারিদিকে গাড়ী থৈ থৈ
চারিদিকে লোকের হৈচৈ
              কুলু কুলু বহে অজয়ের ধারা।


লোহিত রঙা পুব আকাশ
পৌষ মাসে শীতল বাতাস
             সময় মত শৌচকর্মও হল সারা।।


স্নান করে কদম্বীর ঘাটে
মস্তক ঠেকায় জয়দেব ভিটে
             প্রসাদ নিয়ে মহা আনন্দে ঘুরঘুর।


চারিদিকে সাধুসন্ত
নাঙ্গাবাবা তন্ত্র মন্ত্র
            আখড়ায় শুনি বাউল গানের সুর।।


পালাকীর্তন, ভাগবৎ কথা
শ্রবণ করি যথা তথা
           মেলা প্রান্তর লোকে লোকারণ্য।


দু'চোখ ভরে দেখার মত
দেখে নিলাম মনের মত
           নিজেই নিজে হলাম অতি ধন্য।।


অজয় নদীর পূর্ণ আশ
মনের যত অভিলাষ
          আজি সফল আমার মনো কামনা।


দেখা হল জয়দেব মেলা
এবার ঘরে ফিরার পালা
         পূর্ণ হল জয়দেব-কেন্দুলির বাসনা।।



অজয়ের বালুচরে
             - দীপ্তি রায়


অজয়ের বালুচরে সাদা কাশ ফুল দোলে -
জলেতে ছেলেরা সব সাঁতারে ঢেউ তোলে।


চাষিরা মাথায় করে ধান বয় যায় ঘরে -
বালুচরে রোদ পড়ে হেথা চিক চিক করে ।
বৌ-ঝি য়ে স্নান সেরে জল কাঁখে ঘরে ফেরে ।


অস্ত রাগে রবির কিরণ পড়ে অজয়ের ঢেউয়ে –
চাষিরা স্নান সেরে বাড়ি ফেরে গায়ে গামছা দিয়ে ।


অজয়ের নদী ছাড়া কেড়ে নেয় মন -
মন পড়ে রয় সেথা রয় সারাক্ষণ ।



অজয় নদীর তীরে
              - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


প্রভাত রবির                কিরণ ছড়ায়
           অজয় নদীর তীরে,
হাটুরেরা সবে              আসে দলেদলে
          কিনারায় তরী ভিড়ে।


ছাড়িল তরণী              কেহ ডাকে শুনি
          ডেকে বলে মাঝিভাই,
একটু দাঁড়াও              চড়ি তব নাও
          ওপারেতে যেতে চাই।


নিম কাঠি দিয়ে            মুখ ধোয় কেহ
         দেখি স্নান করে কেহ,
কেহ স্নান করি            শুচি বস্ত্র পরি
         চলিছে আপন গেহ।


নদীর এপারে             পথের দুধারে
         শাল পিয়ালের বন,
তরু শাখেশাখে           বিহগেরা ডাকে
         ভরে ওঠে মোর মন।


শালিকের দল            হেরি অবিরল
          উড়ে আসে বালুচরে,
হেথা হেরি দুটি           কপোত কপোতী
         একসাথে খেলা করে।


মাটির কলসী             কাঁখে লয়ে সবে
         বধূরা নাইতে আসে,
দুটি পাখা মিলে           শঙ্খচিল ওড়ে
         দূরে সুনীল আকাশে।


স্নান হলে সারা           গাঁয়ের বধূরা
         চলে নিজ নিজ ঘরে,
ছোট ছোট ছেলে          মার সাথে চলে
         মায়ের হাতটি ধরে।


নদী ঘাটে এক            ধবল বলাকা
         বসে আছে বালুচরে,
ঠোঁট দিয়ে তুলি          ছোট মাছগুলি
          চায় খেতে প্রাণভরে।


দূরে নদীপাড়ে          কাশ-ঝোঁপঝাড়ে
          শিস দেয় বনটিয়া,
কোকিলের ডাক         শুনি থেকে থেকে
          পুলকিত হয় হিয়া।


ধীরেধীরে ঘাটে          পড়ে আসে বেলা
         সূর্য হয়ে ওঠে লাল,
শ্মশানের ঘাটে          জ্বলে উঠে চিতা
         আসে নেমে সন্ধ্যাকাল।


দিবসের শেষে           শেষ অস্তরাগে
         হেরি সূর্য বসে পাটে,
দিবা অবসানে           অন্ধকার নামে
         অজয়ের ঘাটে ঘাটে।


অজয়ের নদীচরে
               - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


অজয়ের নদীচরে সোনা রোদ হাসে,
খেয়াঘাটে তরীখানি নদীজলে ভাসে।
এগাঁয়ের সোনামাঝি বৈঠা বেয়ে যায়,
শক্ত করে ধরে হাল ভাটিয়ালি গায়।


সোনারোদে চিকচিক করে বালিয়াড়ি,
দুই কূলে উঁচু গ্রাম নীচু তার পাড়ি।
নদীপাড়ে গাছে গাছে পাখি গীত গায়,
নীল আকাশের গায় চিল উড়ে যায়।


নদীঘাটে ছেলেমেয়ে কোলাহল করে,
বধূরা নাইতে আসে রাঙাশাড়ি পরে।
কলসীতে জল ভরি, কেহ ঘরে যায়,
সাদা বক নদী বাঁকে মাছ ধরে খায়।


বেলা বাড়ে ধীরে ধীরে সূর্য অস্তাচলে,
পশ্চিমেতে লাল হয়ে শেষে পড়ে ঢলে।
দিবসের শেষে হেরি আলোক লুকায়,
চাঁদ ওঠে তারা ফোটে আকাশের গায়।


অজয় নদীর তীরে
                  - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


প্রভাত রবির                কিরণ ছড়ায়
           অজয় নদীর তীরে,
হাটুরেরা সবে              আসে দলেদলে
          কিনারায় তরী ভিড়ে।


ছাড়িল তরণী              কেহ ডাকে শুনি
          ডেকে বলে মাঝিভাই,
একটু দাঁড়াও              চড়ি তব নাও
          ওপারেতে যেতে চাই।


নিম কাঠি দিয়ে            মুখ ধোয় কেহ
         দেখি স্নান করে কেহ,
কেহ স্নান করি            শুচি বস্ত্র পরি
         চলিছে আপন গেহ।


নদীর এপারে             পথের দুধারে
         শাল পিয়ালের বন,
তরু শাখেশাখে           বিহগেরা ডাকে
         ভরে ওঠে মোর মন।


শালিকের দল            হেরি অবিরল
          উড়ে আসে বালুচরে,
হেথা হেরি দুটি           কপোত কপোতী
         একসাথে খেলা করে।


মাটির কলসী             কাঁখে লয়ে সবে
         বধূরা নাইতে আসে,
দুটি পাখা মিলে           শঙ্খচিল ওড়ে
         দূরে সুনীল আকাশে।


স্নান হলে সারা           গাঁয়ের বধূরা
         চলে নিজ নিজ ঘরে,
ছোট ছোট ছেলে          মার সাথে চলে
         মায়ের হাতটি ধরে।


নদী ঘাটে এক            ধবল বলাকা
         বসে আছে বালুচরে,
ঠোঁট দিয়ে তুলি          ছোট মাছগুলি
          চায় খেতে প্রাণভরে।


দূরে নদীপাড়ে          কাশ-ঝোঁপঝাড়ে
          শিস দেয় বনটিয়া,
কোকিলের ডাক         শুনি থেকে থেকে
          পুলকিত হয় হিয়া।


ধীরেধীরে ঘাটে          পড়ে আসে বেলা
         সূর্য হয়ে ওঠে লাল,
শ্মশানের ঘাটে          জ্বলে উঠে চিতা
         আসে নেমে সন্ধ্যাকাল।


দিবসের শেষে           শেষ অস্তরাগে
         হেরি সূর্য বসে পাটে,
দিবা অবসানে           অন্ধকার নামে
         অজয়ের ঘাটে ঘাটে।


অজয় নদীর বাঁকে
             - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


        গাঁয়ের পাশে অজয় নদীর বাঁকে,
সাঁঝের বেলা নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা থাকে।
            রাত কেটে ভোর হলে
            আসে যাত্রী দলে দলে,
তরুর শাখে পাখিরা সব কিচির মিচির ডাকে।
বনটিয়ার দল নদীর ধারে আসে ঝাঁকে ঝাকে।


           গাঁয়ের পাশে অজয় নদী চলে,
কেউবা বলে নদ তারে আবার কেউবা নদী বলে।
            সকাল হলে গাঁয়ের মাঝি,
            ভাসায় জলে নৌকা আজি,
যাত্রী বোঝাই নৌকাখানি অতি মন্থর বয়ে চলে।
পাল তোলা নাওখানি ভাসে অজয় নদীর জলে।


           সকাল হলে লাল সূর্য ওঠে,
চিক চিক করে সরু বালি অজয় নদীর তটে।
           নদীর ঘাটেতে ধবল বলাকা,
           আসে উড়ে মেলে দুটি পাখা,
শালিক আসে ঝাঁকে ঝাঁকে কূলে কাশফুল ফোটে।
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি গরু বাছুর চরে গোঠে।


           গাঁয়ের বধূ কলসী লয়ে কাঁখে,
রাঙাপথে জল নিয়ে যায় ঘোমটায় মুখ ঢাকে।
           দূরে পথিক আদুল গায়ে,
           বসে বটের শীতল ছায়ে,
গরুগাড়ি ধুলো উড়ায়ে ছুটে চলে পথের বাঁকে।
নদীর কাছে শ্মশানঘাটে মৃতদেহ জ্বলতে থাকে।


            নদীর ঘাটে দুপুর হলে পরে,
গাঁয়ের বধূরা রোজ নাইতে আসে রাঙা শাড়ি পরে।
           সেই নদীতে গাঁয়ের জেলে
           মাছ ধরে ওরা জাল ফেলে
শঙ্খচিলেরা পাখা মেলে নীল আকাশ পানে উড়ে।
বনের ধারে বাঁশির সুরে মোর পরান পাগল করে।


              বিকাল হলে পড়ে আসে বেলা,
নদীর ধারে সবুজ মাঠে পাড়ার ছেলেরা করে খেলা।
              পশ্চিম কোণে সূর্যটা লাল হয়ে,
              ডুবে দেখি নীলপাহাড়ের গায়ে,
নদীর ঘাটে আঁধার আসে নেমে, হলো সাঁঝের বেলা।
নির্জন ঘাটে রাত্রি নামে নীল আকাশে তারার মেলা।