পৌষ বা মকর সংক্রান্তিতে সূর্য ধনুরাশি থেকে মকরে সঞ্চারিত হয়, তাই এর নাম 'মকর সংক্রান্তি'। একে 'উত্তরায়ণ সংক্রান্তি'-ও বলে, কারণ এইদিন থেকে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে। এই সংক্রান্তির ব্রহ্মমুহূর্তে যমুনা নদীতে মকর-স্নান করলে আয়ুবৃদ্ধি হবে -- এই বিশ্বাসে মাতা যশোমতী বালক কৃষ্ণকে স্নান করাতে নিয়ে যান। পরে এদিনেই যমুনায় স্নান সেরে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধিকার সঙ্গে 'মকর-পাতায়', এ হল আত্মার সঙ্গে আত্মার দৃঢ় বন্ধন স্থাপন।


গ্রাম বাংলার অনেক স্থানে একসময় কুমারী মেয়েরা এইদিন থেকে কনকনে ঠাণ্ডার ভোরে একমাস ব্যাপী মকরস্নান-ব্রত শুরু করতো। আলস্য, নিদ্রা, তন্দ্রা, জড়তা-তামসিকতার রিপুগুলিকে জয় করার এ ছিল এক সংগ্রামী মনোবৃত্তি। ছড়া গেয়ে পাঁচ ডুব দেওয়ার নিয়ম আছে: "এক ডুব দিলে আই-ঢাই।/দুই ডুব দিলে তারা পাই।।/তিন ডুব দিলে মকরের স্নান।/চার ডুব দিলে অজয় স্নান।/পাঁচ ডুব দিলে গঙ্গাস্নান।।


পৌষ সংক্রান্তি দিনে গ্রাম-বাংলার অনেক স্থানে উঠোনে মড়াই-এর পাশে 'উঠোন লক্ষ্মী'র পুজো হয়। তিনিই কোথাও 'পৌষলক্ষ্মী'। এদিন বাড়ির উঠোন গোবরজল দিয়ে নিকিয়ে, শুচি-স্নিগ্ধ করে তোলা হয়। ধানকাটা পর্বে যে 'পৌষ তোলা'র চার-পাঁচ গুচ্ছ ধানগাছ সাদরে গৃহস্থ বাড়িতে আনা হয়েছিল, তাই গাদা থেকে নামিয়ে মাথায় বহন করে নামানো হয় উঠোনে। গোটা উঠোন জুড়েই আতপ চাল বেঁটে আলপনা দেওয়া হয়।


সোনার পৌষ যে চলে যায়, তাকে বাঁধতে হবে! তাই শিসসহ ধানগাছ পুজো করে ঘরের খুঁটি, গোলা, গোয়ালঘর, সিন্দুক ঢেঁকিশালে তা বাঁধা হয়। আর শস্য-সম্পদের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করা হয়। তারই অঙ্গ হিসাবে বাংলার মেয়েরা ছড়া কেটে পৌষ বন্দনা করেন, "পৌষ পৌষ -- সোনার পৌষ/এস পৌষ যেয়ো না/জনম জনম ছেড়ো না।/না যেয়ো ছাড়িয়ে পৌষ--/না যেয়ো ছাড়িয়ে,/পৌষ পৌষ -- সোনার পৌষ।"


পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তিতে অজয়ের ঘাটে দূরবর্তী বহু গ্রাম থেকে মকর স্নান করতে বহু লোকের জন-সমাগম হয় আজকের দিনে। তীরে তীরে বহু দোকানপাট বসে, স্নানের পরে সবাই মুড়ি মুড়কি, সিঙাড়া, আলুর চপের দোকানে ভিড় জমায়। গাঁয়ের এই মহামিলনে সকলেই সমবেত হয় অজয়ের ঘাটে।


সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। মানুষকে ভালবাসুন, মানুষের সুখদুঃখের সাথী হোন।
বাংলা কবিতার আসরে আমার প্রিয় সকল কবিগণকে শুভ মকর-সংক্রান্তির
আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


অজয়ের ঘাটে মকরস্নান
                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


অজয়ের ঘাট ভরে মানুষের ভিড়ে,
মানুষের ঢল নামে অজয়ের তীরে।
গোরু-গাড়ি চড়ি কেহ নদীঘাটে আসে,
কেহ আসে সাইকেলে কেহ মিনিবাসে।


অজয়ের ঘাট ভরে জন কোলাহলে,
মকর সিনান করে সবে নদীজলে।
জলে নামি স্নান করে যত নর-নারী,
বসেছে দোকান কত ঘাটে সারিসারি।


পূবেতে অরুণ রবি দিতেছে কিরণ,
মকর স্নানের তরে এ মহা মিলন।
টুসুর ভাসান আজি অজয়ের ঘাটে,
মহানন্দে সবাকার সারাদিন কাটে।


অজয়ের ঘাটে আজি মহা ভিড় জমে,
বেলা হলে অবশেষে ভিড় যায় কমে।


(কিছু বিশেষ কারণে গতকাল পোস্ট দিতে পারিনি। তাই এই কবিতাটি আজ একই সাথে পোস্ট করলাম। অসুবিধার জন্য বিশেষ দুঃখিত।)


ঘরে ঘরে পিঠা আজি
              লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ঘরে ঘরে পিঠা আজি মহা ধূমধাম,
পিঠাপুলি উত্সবে মেতে ওঠে গ্রাম।
তিল গুড় নারকেল দুধ চাঁছি দিয়ে,
দুধপুলি তিলপিঠা ভাজা হয় ঘিয়ে।


বাংলার ঘরে ঘরে পিঠাপুলি হয়,
মকরে পিঠা পরব সকলেই কয়।
ঘরে ঘরে সবাকার ভারি ধূম পড়ে,
চালগুঁড়ি দিয়ে সবে তিলপিঠা গড়ে।


মহানন্দে আজি সবে দুধ-পিঠা খায়,
বাটি পিঠা, সরা পিঠা, সকলি বানায়।
পিঠা গড়ে নারকেল পুর দিতে হয়,
পিঠা খেলে পেটে সয় সর্বজনে কয়।


পিঠা পুলি উত্সব, আজি ঘরে ঘরে,
ঘরে ঘরে পিঠা গড়ে আহারের তরে।
ধন্য ধন্য পল্লী-গ্রাম পিঠার পরব,
ছেলেবুড়ো শিশুদের কত কলরব।