আমার কবিতা গুচ্ছ
চতুর্থ পর্ব

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র

——–:)(:———

প্রথম প্রকাশ-19শে নভেম্বর, 2018
দ্বিতীয় প্রকাশ- 12ই ডিসেম্বর, 2018
তৃতীয় প্রকাশ- 22শে ডিসেম্বর, 2018
চতুর্থ প্রকাশ- 16ই জানুয়ারী, 2019


——–:)(:———


                             ভূমিকা
শুভ নববর্ষে সবাইকে আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাকার সহৃদয় মন্তব্যে আপ্লুত হয়ে আমার কবিতাগুচ্ছ চতুর্থ পর্ব প্রকাশিত হল। কবিতাগুলি বাংলা কবিতার আসরে ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সংশোধন ও সংযোজন করে কবিতাগুলিকে পাঠকের আরো হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।


এই পুস্তকের কিছু কিছু কবিতা অজয় নদীর কাব্য একাদশ পর্বে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার নামকরণ ও স্তবক সহযোগে পরিমার্জিত করা হয়েছে। কবিতাগুচ্ছ সমগ্র কাব্যের প্রতিটি কবিতাই পাঠকের হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা নিয়ে কবিতাগুলি প্রকাশ করা হল।


এই পুস্তক সংক্রান্ত সদুপদেশ বা সুপরামর্শ থাকলে তা মন্তব্যে লিখে  সহযোগিতা করুন। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন । সকল কবি, লেখক ও গীতিকারকে শুভ নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


বিনীত কবি
নারায়না বিহার, নতুন দিল্লি-110028
তারিখ: 16ই জানুয়ারী, 2019


——–:)(:———


সুচীপত্র
1. টুনি ও ফেরিওয়ালা
2. সবুজ ছায়াঘেরা গাঁ
3. কবি ও কবিতা
4. টুসু পূজা (গীতি কবিতা)
5. জীবন মরণ বিধির লিখন
6. অজয়নদী ও আমার গ্রাম
7. নদীঘাটে মকরস্নান
8. ঘরে ঘরে পিঠা আজি
9. প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী
10. আমার গাঁয়ে আছে ছায়া


——–:)(:———


টুনি ও ফেরিওয়ালা
              -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


“পুতুল চাই পুতুল.. ” ফেরিওয়ালা রোজ হাঁকে,
বাড়ি থেকে বেরিয়ে টুনি ফেরিওয়ালাকে ডাকে।
টুনির ডাকে ফেরিওয়ালা পিছনেতে ফিরে দেখে,
আস্তে করে মাথার বোঝাটা নামায় মাথা থেকে।


টুনি বলে, “ফেরিওয়ালা! যাচ্ছো কোথায় তুমি?
দাওনা আমায় একটা পুতুল, বাঁশি ও ঝুমঝুমি”।
মা ডেকে কয়- “এদিকে আয়, আয় বলছি এক্ষুনি”
মায়ের ডাকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ঢোকে টুনি।


বিধবা মায়ের আর কিছুই নেই মেয়েটিই সম্বল,
টুনির চোখে জল দেখে আজ মায়ের চোখে জল।
অনাহার যাদের নিত্যসাথী, বাড়িতে বাড়ন্ত চাল,
সুখের ছোঁয়া পায়না যারা, থাকে দুঃখ চিরকাল।


দেনার দায়ে বাড়িটা সেদিন টুনির মা রাখে বন্ধক,
এরপরে হায় মিটবে কি তার পুতুল কেনার শখ?
কিছুদিন পরে পুতুল নিয়ে ফেরিওয়ালা আসে গাঁয়ে,
না পায় দেখতে কচি শিশুমুখ দেখে না বিধবা মায়ে।


মাটির সেই বাড়ি নাই সেথা আর হয়েছে সে অট্টালিকা,
সারা ছাদ জুড়ে ফুলের টবেতে গোলাপ ফুল যায় দেখা।
যে ফুল না ফুটিতে ঝরে ধরণীতে বোঝে না সুখ-দুখ,
গোলাপোর ফুল ছাদে ঝরে পড়ে তবুও তো তার সুখ।


——–:)(:———


সবুজ ছায়াঘেরা গাঁ
              -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আমাদের গাঁয়ে  সবুজের ছায়ে
ছোট ছোট বাড়িঘর,
পূরব আকাশে লাল সূর্য হাসে
ছড়ায় রবির কর।

তরুর শাখায় বিহগেরা গায়
ফুল ফোটে বনে বনে,
ফুলের কাননে যত অলিগণে
ধায় মধু আহরনে।


রাঙাপথ বাঁকে বক ঝাঁকে ঝাঁকে
পাখা মেলে উড়ে চলে,
অজয়ের জলে সাদা পাল তুলে
নৌকা চলে অবহেলে।


সকালে বিকালে আসে যত ছেলে
স্নান সেরে বাড়ি যায়,
কলসী কাঁখেতে আসে বধূ ঘাটে
মুখ ঢাকা ঘোমটায়।


সবুজ ছায়ায় আমাদের গাঁয়
তাল খেজুরের বন,
রাখালিয়া সুরে বাজে বাঁশি দূরে
শুনে খুশি হয় মন।


পড়ে আসে বেলা দিবসের খেলা
অবশেষে শেষ হয়।
রাত হয় সারা অজয়ের ধারা
আপন বেগেতে বয়।


——–:)(:———


কবি ও কবিতা
              -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল বিদ্রোহী কবি,
কুমুদরঞ্জন মল্লিক কবিতায় আঁকেন পল্লীর ছবি।
বিপ্লবী কবি সুকান্ত আর কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায়,
দেশের কথা মানুষের কথা, কথা বলে কবিতায়।


মাইকেল মধুসূদন দত্ত অমিত্রাক্ষর সনেট ছন্দে,
সুকুমার রায়ের হাস্য-কবিতা পাঠ করি আনন্দে।
রজনীকান্ত সেনের কবিতা ছন্দে ছন্দে কথা হয়।
কবি জীবনানন্দ দাশকে সবাই পল্লীর কবি কয়।


সবাই কবি, সবার কবিতায় কবিতারা পায় প্রাণ,
কবি ও কবিতা সবার প্রিয় গাই তাদের জয়গান।
বিরহী কবিরা বিষাদের সুরে কবিতায় কথা বলে,
কবির কবিতা সবার কথা বলে সবার সাথে চলে।


সবার কবিতা পাঠ করি যবে মনে হয় কবি হই,
আসে না ছন্দ লিখি কবিতা নীরব হয়ে শুধু রই।


——–:)(:———


টুসু পূজা (গীতি কবিতা)
                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


পৌষ পরবে টুসু পূজিব------
আমরা টুসুর ভোগ সাজাব-
              পৌষ পরবে টুসু পূজিব।


বাড়িতে আছে চালের পিঠা
              আতপ চাল আর গুড়,
হরেক রকম গুড়ের চাকতি
              সন্দেশ আর খেজুর।


মুড়কি, খই আর বাতাসা
           টুসুকে আমরা খাওয়াব।
… … … … … … … …
পৌষ পরবে টুসু পূজিব ------
আমরা টুসুর ভোগ সাজাব-
            পৌষ পরবে টুসু পূজিব


পৌষ পরবে টুসুর পূজা
             পুরো গোটা মাস ধরে,
সাঁঝের বেলা সবাই মিলে
              টুসু গায় সুর করে।


সংক্রান্তির দিন এলে টুসুকে
              অজয় নদীর জলে ভাসাব।
… … … … … … … …


পৌষ পরবে টুসু পূজিব------
আমরা টুসুর ভোগ সাজাব-
            পৌষ পরবে টুসু পূজিব।


——–:)(:———


জীবন মরণ বিধির লিখন
             -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জীবন মরণ বিধির লিখন সারা জীবন সহে ক্লেশ,
কান্না দিয়ে জীবন শুরু কান্না দিয়েই জীবন শেষ।
প্রথম যেদিন এসেছিলে তুমি এই ধরণীর বুকে,
কেঁদেছিলে তুমি একাই, সবার হাসি ছিল মুখে।


সংসার সমরে কত ক্লেশ সহন করিলে একা তুমি,
মরণে তুমি হাসিবে সুখে, কাঁদিবে প্রিয় জন্মভূমি।
আত্মীয়বান্ধব যত সবাই কাঁদিবে শুধু মরণের দিন,
সারাজীবন কাঁদিবে জীবনসাথী শোধিবে সবার ঋণ।


জীবনের খেলাঘরে পেতেছিলে তব সুখের সংসার,
মরণের পরে কেবা তুমি? কেবা হবে তব আপনার?
বাড়ি গাড়ি, টাকা পয়সা, জমিজমা সবই পড়ে রবে,
একাই তুমি এসেছিলে, আবার একেলাই যেতে হবে।


লক্ষ্মণ বলে, অন্তিমকালে মরণে কেহ কারো না হয়,
সময় থাকতে তাই শ্রীহরি ভজ, এ সংসার মায়াময়।


——–:)(:———


অজয়নদী ও আমার গ্রাম
                   লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


অজয় নদীর ধারে গ্রামটি আমার,
সবুজ গাছের সারি তারি চারিধার।
পূর্বদিকে উঠে রবি লোহিত বরণ,
তরুশাখে পাখি সব করয়ে কূজন।


রাঙামাটি পথ ধরি আসে গরুগাড়ি,
অজয় নদীর ঘাট, রাঙা পথ ছাড়ি।
শাল পিয়ালের বন, দেখা যায় দূরে,
মাদলের তালে বাঁশি বাজে মিঠেসুরে।


দুধারে ধানের ক্ষেত পথ গেছে বেঁকে,
জল নিয়ে বধূ ঘরে আসে নদী থেকে।
তালসুপারির সারি আছে মোর গাঁয়ে,
কাঁকন তলার মাঠ, রাঙা পথ বাঁয়ে।


গাঁয়ে আছে সুখশান্তি আছে স্নেহমায়া,
গাঁয়ে হেরি তরুশাখে সবুজের ছায়া।


——–:)(:———


নদীঘাটে মকরস্নান
                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


অজয়ের ঘাট ভরে মানুষের ভিড়ে,
মানুষের ঢল নামে অজয়ের তীরে।
গোরু-গাড়ি চড়ি কেহ নদীঘাটে আসে,
কেহ আসে সাইকেলে কেহ মিনিবাসে।


অজয়ের ঘাট ভরে জন কোলাহলে,
মকর সিনান করে সবে নদীজলে।
জলে নামি স্নান করে যত নর-নারী,
বসেছে দোকান কত ঘাটে সারিসারি।


পূবেতে অরুণ রবি দিতেছে কিরণ,
মকর স্নানের তরে এ মহা মিলন।
টুসুর ভাসান আজি অজয়ের ঘাটে,
মহানন্দে সবাকার সারাদিন কাটে।


অজয়ের ঘাটে আজি মহা ভিড় জমে,
বেলা হলে অবশেষে ভিড় যায় কমে।


——–:)(:———


ঘরে ঘরে পিঠা আজি
              লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ঘরে ঘরে পিঠা আজি মহা ধূমধাম,
পিঠাপুলি উত্সবে মেতে ওঠে গ্রাম।
তিল গুড় নারকেল দুধ চাঁছি দিয়ে,
দুধপুলি তিলপিঠা ভাজা হয় ঘিয়ে।


বাংলার ঘরে ঘরে পিঠাপুলি হয়,
মকরে পিঠা পরব সকলেই কয়।
ঘরে ঘরে সবাকার ভারি ধূম পড়ে,
চালগুঁড়ি দিয়ে সবে তিলপিঠা গড়ে।


মহানন্দে আজি সবে দুধ-পিঠা খায়,
বাটি পিঠা, সরা পিঠা, সকলি বানায়।
পিঠা গড়ে নারকেল পুর দিতে হয়,
পিঠা খেলে পেটে সয় সর্বজনে কয়।


পিঠা পুলি উত্সব, আজি ঘরে ঘরে,
ঘরে ঘরে পিঠা গড়ে আহারের তরে।
ধন্য ধন্য পল্লী-গ্রাম পিঠার পরব,
ছেলেবুড়ো শিশুদের কত কলরব।


——–:)(:———


প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
                -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজীব গান্ধীর মাতা,
জাতির জননী তিনি ভারতের ভাগ্য বিধাতা।
একত্রিশে অক্টোবরে ঊনিশশো চুরাশি সালে,
মৃত্যুসংবাদ ঘোষিত হলো সেদিন সন্ধ্যাকালে।


দেহরক্ষীদের গুলিতে যাঁর ঝাঁঝরা হলো বুক,
চিরবিদায় নিলেন তিনি সহি শত দুঃখ সুখ।
ফিরে এসো এসো ফিরে, কাঁদে ভারতবাসী,
তোমার লাগি সবাই কাঁদে, কাঁদে দিবানিশি।


দেশের তরে, জাতির তরে সারা জীবন ধরি,
ভারতবাসী সবাই কাঁদে তোমায় স্মরণ করি।
দেশকে গড়ার স্বপ্ন ছিল ইন্দিরা গান্ধীর মনে,
হারিয়ে গেল স্বপ্ন রঙিন কোন এক কুক্ষণে।


বুলেটের ঘায়ে বিদীর্ণ দেহ পড়ল ভারত ভূমে,
নামল দেশে শোকের ছায়া, কান্না আসে নেমে।


——–:)(:———


আমার গাঁয়ে আছে ছায়া
                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


গাঁয়ে আছে ছায়া স্নেহ আর মায়া
আর আছে ছোট ঘর,
গায়ের মানুষ সবাই আপন
কেহ নহে মোর পর।


গাঁয়ের রাখাল লয়ে ধেনু পাল
বাঁশের বাঁশি বাজায়,
আকাশের গায় সাদা বক ধায়
গাছে গাছে পাখি গায়।


রাঙামাটি পথে আসে দূর হতে
শ্রান্ত পথিকের দল,
মাটির সরানে এ গাঁয়ের বামে
উড়ে ধূলো অবিরল।


কাজলা দিঘির ঘোলা কালো জলে
মরাল মরালী ভাসে,
জাল কাঁধে নিয়ে সেই পথ দিয়ে
গাঁয়ের জেলেরা আসে।


অজয়ের বাঁকে আসে ঝাঁকেঝাঁকে
বন শালিকের দল,
কলসীতে ভরে নিয়ে যায় জল
গাঁয়ের বধূ সকল।


দিবসের শেষে বেলা পড়ে আসে
অন্ধকার নামে গাঁয়ে,
জোনাকিরা জ্বলে বটগাছ তলে
সুশীতল তরুছায়ে।


সাঁঝের সানাই বেজে ওঠে দূরে
দেবীর আরতি হয়,
অজয়নদীর চরে জোছনার রাশি
হাসি হাসি কথা কয়।


--------:)(:---------


বাংলা কবিতার আসরের জয় হোক, বাঙালির জয় হোক, বাংলার জয় হোক।
বাংলার কবিগণের জয় হোক।


সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। কবিতা পাঠ করুন, কবিতা লিখুন
আর চোখ রাখুন, অজয় নদীর কাব্য- একাদশ পর্ব।


নতুন বছরের নতুন প্রত্যাশার নতুন কবিমনের
নতুন ভাবনার এক নতুন ফসল।


আমার এক গুচ্ছ কবিতা সমগ্র।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!