মহান 5ই সেপ্টেম্বর ও শিক্ষক-দিবস
সকল শিক্ষককে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম
তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বিশ্বব্যাপী ৫ই অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ভারতে এই দিবসটি পালিত হয় ৫ই সেপ্টেম্বর। ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি তথা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মজয়ন্তী ৫ই সেপ্টেম্বর। সেদিনই শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশে শিক্ষকদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জাহিরের জন্যই এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।


শিক্ষক দিবসের ইতিহাস:
১৯৬২ সালে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছিলেন। শোনা যায়, কয়েকজন ছাত্র, বন্ধুবান্ধব প্রখ্যাত শিক্ষাবিদের জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন। সেই সময় রাধাকৃষ্ণণ জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিন আলাদাভাবে পালন না করে সেই দিনটি দেশের সব শিক্ষকের জন্য পালন করা হলে তিনি গর্ববোধ করবেন। এই আবেদন শিক্ষকদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও সম্মানকেই প্রকাশ করে। তাই ১৯৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ডঃ রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই শিক্ষক হওয়া উচিত।


ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ সম্পর্কে কিছু তথ্য:
• ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের বাবা তাঁর ইংরেজি শিক্ষা ও স্কুল যাওয়ার বিরোধী ছিলেন। ডঃ রাধাকৃষ্ণণের বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে পুরোহিত হোক।
• মেধাবী ডঃ রাধাকৃষ্ণণ নিজের অধিকাংশ পড়াশোনাই ছাত্রবৃত্তির সাহায্যে পুরো করেছিলেন।
• ডঃ রাধাকৃষ্ণণ পড়ুয়াদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাঁর কলকাতা যাওয়ার সময় তাঁকে ফুলে সাজানো গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
• প্রখ্যাত অধ্যাপক এইচ. এন. স্পেলডিঙ্গ ডঃ রাধাকৃষ্ণণের ভাষণের এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জন্য চেয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
• শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব যোগদানের জন্য ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে।
শিক্ষক দিবস সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য:
• ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। জার্মানি, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়ার মতো কয়েকটি দেশে সেই দিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। তাছাড়া বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে পৃথক পৃথক তারিখে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক দিবস পালিত হয় লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশে।
• শিক্ষকদের অবদানকে সম্মান জানাতে ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ই অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন শুরু করে ইউনেস্কো।
• ১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে সওয়াল করেন। পরে ১৯৫৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সায় দেয়। ১৯৮০ সাল থেকে ৭ই মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। কিন্তু পরে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার এটি পালিত হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। আফগানিস্তানে ৫ই অক্টোবরই এই দিনটি পালিত হয়।


সারাবছরই আমাদের জীবনে তাঁরা থাকেন প্রবলভাবে। কখনও ভুল ধরিয়ে দেন, কখনও নতুন জিনিস শিখিয়ে দেন, কখনও বকুনি দেন, কখনও আবার স্নেহের সঙ্গে নিজের কাছে টেনে নেন। প্রত্যেকের জীবনেই শিক্ষকরাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক দিবস হল সেই বিশেষ মানুষ-পথপ্রদর্শকদের আরও একবার শ্রদ্ধা জানানোর দিন।


আমার কবিতা শিক্ষাচার্যের প্রতি
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শিক্ষার আলোক তুমি শিক্ষার জগতে,
জ্ঞানের বর্তিকা তুমি সেই জানে চিত্তে
অজ্ঞান যে। হে শিক্ষক, জ্ঞানদাতা তুমি
তব করুণায় জ্ঞান, লভিয়াছি আমি।


বিদ্যার প্রদীপ তুমি জ্বালিয়াছ আলো,
শিখেছি বুঝেছি যত সবকিছু ভালো।
তব আশীর্বাদে আমি বিদ্যাভ্যাস করি,
তোমার দয়ার দানে ভাসালাম তরী।


বন্দিব আচার্য্য আজি তব শ্রীচরণ,
জানাই বিনতি শ্রদ্ধা করিনু জ্ঞাপন।
যা কিছু সকলি মম সব তব দান,
তব শ্রীচরণে আজি জানাই প্রণাম।


শিক্ষক দিবস আজি, তাই জোড় করে,
হে শিক্ষক! শিক্ষাদাতা প্রণমি তোমারে।