পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই দিনেই পিতৃ-আবাস ছেড়ে দেবী পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসের দিকে। এই দিনেই তাই দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। রাজধানী শহর দিল্লিতে যমুনা নদীতে,  কোলকাতায় গঙ্গানদী অভিমুখে অসংখ্য প্রতিমা সারি সারি নিয়ে শোভাযাত্রা চলে সারাদিন ধরে।


পুরাণে মহিষাসুর-বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী আবির্ভূতা হন, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর-বধ করেন। বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।


তবে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দিনে যে দশেরা উদযাপিত হয়, তার তাৎপর্য অন্য। ‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘দশহর’ থেকে, যা দশানন রাবণের মৃত্যুকে সূচিত করে। বাল্মীকি রামায়ণে কথিত আছে যে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই রাবণ-বধ করেছিলেন রাম। কালিদাসের রঘুবংশ, তুলসীদাসের রামচরিতমানস, কিংবা কেশবদাসের রামচন্দ্রিকা-য় এই সূত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বলা হয়েছে, রাবণ-বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ।


রাবণ-বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষেই যথাক্রমে দশহরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। আবার মহাভারতে কথিত হয়েছে, দ্বাদশ বৎসর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শু‌ক্লা দশমীতেই পাণ্ডবরা শমীবৃক্ষে লুক্কায়িত তাঁদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ-মুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন। এই উল্লেখও বিজয়া দশমীর তাৎপর্য বৃদ্ধি করে।


বিদায়ের অশ্রুজলে সব আনন্দের হয় বিসর্জন দেবী বিসর্জনের সাথে সাথে। আবার একটি বছর ধরে চলতে থাকে প্রতীক্ষা। দুর্গাপূজা প্রবাসী বাঙালিদের সার্বজনীন। কোলকাতা সহ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যেও এই উত্সব অতি ধূমধামের সাথে পালন করা হয়। ভারতবর্ষ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের এই পূজার প্রচলন আছে।


বাংলা কবিতা আসরের সকল শ্রদ্ধেয় কবি ও সহৃদয় পাঠকবৃন্দকে জানাই শুভ বিজয়া দশমীর আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনীর শুভ আশীর্বাদ বর্ষিত হোক সবার মস্তকে। সবার জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।  মাতৃবন্দনায় জেগে উঠুক সারা বিশ্ববাসী।
বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক। বাংলা কবিতার জয় হোক। বাংলার কবিগণের জয় হোক।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু। জয়গুরু। জয়গুরু।


বিজয়া দশমী দুর্গাপূজা
             -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহা দশমীর পূজা বিধি মতে হয়,
বিজয়াদশমী আজি সকলেতে কয়।
শঙ্খ ঘণ্টা ধূপ দীপ প্রসাদের থালা,
দেবীকণ্ঠে শোভে হেরি পুষ্পহার মালা।


মন্দিরেতে পুরোহিত স্তব পাঠ করে,
জ্বলিছে প্রদীপ মালা ধূপকাঠি পুড়ে।
সুগন্ধি চন্দন আদি বিবিধ প্রকার,
ঘৃত মধু গঙ্গা জল পূজা উপাচার।


ঢাক বাজে কাঁসি বাজে হয় শঙ্খধ্বনি,
উলুধ্বনি দেয় সবে যতেক রমণী।
সিঁদুর আলতা আর সুগন্ধি চন্দন,
উলুধ্বনি দিয়ে করে দেবীরে বরণ।


আনন্দে সিঁদুর খেলে যত এঁয়োগণ,
শুভ বিজয়ার কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ।