বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু………. মহান যীশু ও তার বাণী
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



‘বড়দিন’ যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে পারি, যে দিন, “মানুষের মধ্যে মানুষের এই ‘বড়ো’র আবির্ভাব” সেদিনই আমাদের বড়দিন।


যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিনকে ইংরেজীতে ক্রিসমাস বলা হয় কিন্তু বাংলায় বলা হয় ‘বড়দিন’। ‘বড়দিন’ শব্দটি বাংলার মানুষের। ‘বড়দিন’ শব্দটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেছেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। কারণ কবি ঈশ্বরচন্দ্রগুপ্ত ‘বড়দিন’কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি কবিতা রচনা করেছেন।


‘বড়দিন’ শিরোনামের কবিতায় তিনি লিখেছেন,
“যদিও আমরা হই হিন্দুর সন্তান।
বড়দিনে সুখি তবু, খৃষ্টান সমান।”


আরেকটি ‘বড়দিন’ কবিতায় তিনি ইংরেজ সাহেব সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন,
“খৃষ্টের জন্ম দিন, বড়দিন, বড়দিন নাম।
বহু সুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম ॥”
কেরানী, দেওয়ান আদি, বড়বড় নেট।
সাহেবের ঘরে ঘরে, পাঠাতেছে ভেট।”


কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘বড়দিন’ কবিতায় যীশু খ্রীষ্ট ও কৃষ্ণকে তুলনা করে এক চমৎকার উপমা বেঁধেছেন,
“কেথলিক, দল সব, প্রেমানন্দে দোলে।
শিশু ঈশু গড়ে দেয়, মেরিমার কোলে ॥
বিশ্বমাঝে চারু রূপ, দৃশ্য মনোলোভা
যশোদার কোলে যথা, গোপালের শোভা ॥


এখানে মেরি ও যীশুর সঙ্গে যশোদা ও কৃষ্ণের তুলনা করেছেন। যে যীশু নাজারেথের যীশু, বিদেশী ইংরেজদের যীশু, সেই যীশু ও মেরী, বাঙালী ও বাংলা ভাষাভাষি মানুষের আত্মার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায় বড়দিনের অনেক চিত্র দেখতে পাই। তার পুনশ্চ কাব্যের ‘শিশু তীর্থ’ কবিতায় শিশু যীশুর চিত্র তুলে ধরেছেন।
“মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু,
উষার কোলে যেন শুকতারা।
…উচ্চস্বরে ঘোষণা করলো। জয় হোক মানুষের,
ওই নবজাতকের, ওই চিরজীবিতের।”


তিনি পুনশ্চ কাব্যের ‘মানবপুত্র’ কবিতায় লিখেছেন,
“মৃত্যুর পাত্রে খৃষ্ট যেদিন মৃত্যুহীন প্রাণ উৎসর্গ করলেন
রবাহূত অনাহূতের জন্যে,
তারপরে কেটে গেছে বহু শত বছর।
আজ তিনি একবার নেমে এলেন নিত্যধাম থেকে মর্তধামে।
চেয়ে দেখলেন, সেকালেও মানুষ ক্ষতবিক্ষত হত যে-সমস্ত পাপের মারে…।”


রবীন্দ্রনাথ ‘খৃষ্ট’ প্রবন্ধগ্রন্থের ‘যিশু চরিত’ ‘মানবসম্বন্ধের দেবতা’ ‘খৃষ্টধর্ম’ ‘খৃষ্টোৎসব’ ‘বড়োদিন’ ও ‘খৃষ্ট’ প্রবন্ধগুলোর মধ্যে যীশু খ্রীষ্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। ‘যীশু চরিত’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “তিনি আপনাকে বলিয়াছেন মানষের পুত্র। মানবসন্তান যে কে তাহাই তিনি প্রকাশ করিতে আসিয়াছেন। তাই তিনি দেখাইয়াছেন, মানুষের মনুষত্ব সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্যেরও নহে, আচারের অনুষ্ঠানেও নহে; কিন্তু মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রকাশ আছে এই সত্যেই সে সত্য। মানব সমাজে দাঁড়াইয়া ঈশ্বরকে তিনি পিতা বলিয়াছেন।… তাই ঈশ্বরের পুত্ররূপে মানুষ সকলের চেয়ে বড়ো, সাম্রাজ্যের রাজারূপে নহে।”


তিনি লিখেছেন, “মানুষকে এই মানবপুত্র বড়ো দেখিয়াছেন বলিয়াই মানুষকে যন্ত্ররূপে দেখিতে চান নাই।” অপরদিকে ‘খৃষ্টধর্ম’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, “যিনি বড়ো তিনি যে প্রেমিক। ছোটকে নিয়ে তাঁর প্রেমের সাধ্যসাধনা।… মানুষের মধ্যে মানুষের এই বড়োর আবির্ভাব, যিনি মানুষের হাতের সমস্ত আঘাত সহ্য করছেন এবং যাঁর সেই বেদনা মানুষের পাপের একেবারে মূলে গিয়ে বাজছে।


এই আবির্ভাব তো ইতিহাসের বিশেষ কোন একটি প্রান্তে নয়।… মানুষের সেই বড়ো, নিয়ত আপনার প্রাণ উৎসর্গ ক’রে মানুষর ছোটোকে প্রাণদান করছেন।” বড়দিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘বড়োদিন’ নামক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “আজ তাঁর জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে? অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না সে দিনের উপলব্ধি কি কালগণনায়? সেদিন সত্যের নাম তাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেইদিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেইদিনই বড়োদিন যে তারিখেই আসুক। …সেদিন বড়োদিন নিজেকে পরীক্ষা করার দিন, নিজেকে নম্র করার দিন।” তিনি ‘খৃষ্টোৎসব’ প্রবন্ধ শুরু করেছেন তার ‘গীতাঞ্জলি’র একটি কবিতা বা একটি গান দিয়ে,
“তাই তোমার আনন্দ আমার ’পর, তুমি তাই এসেছ নিচে।
আমায় নইলে, ত্রিভুবনেশ্বর, তোমার প্রেম হত যে মিছে।”


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ নিয়েই শুধু রচনা করেননি। তিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ দেশে বিদেশে যখন যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই পালন করেছেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমে ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম তিনি বড়দিন উৎসব পালনের আয়োজন করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ পালিত হয়ে আসছে। ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের মন্দিরে যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন পালন করা হয়। ধ্বনিত হয় যীশু খ্রীষ্টের প্রার্থনা সঙ্গীত, নাম জপ ও বাইবেল পাঠ। ধ্যান প্রার্থনার পর সবাই জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে ছাতিমতলায় সম্মিলিত হয়।


আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার লেখনীর মাধ্যমে যীশু খ্রীষ্টের নাম ও বড়দিনের বিষয়ে তুলে ধরেছেন। তার বিষের বাঁশি কাব্যগ্রন্থের ‘সত্য-মন্ত্র’ কবিতায়, খ্রীষ্টনাম উচ্চারিত হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “চিনেছিলেন খ্রীষ্ট বুদ্ধ
কৃষ্ণ মোহাম্মদ ও রাম
মানুষ কী আর কী তার দাম।”
তিনি প্রলয়-শিখা কাব্যের নমষ্কার কবিতায় লিখেছেন,
“তব কলভাষে খল খল হাসে বোবা ধরণীর শিশু,
ওগো পবিত্রা, কূলে কূলে তব কোলে দোলে নব যিশু।”
চন্দ্রবিন্দু কাব্যগ্রন্থের গ্রন্থের ‘ভারতকে যাহা দেখাইলেন’ সেই কবিতায় তিনি লিখেছেন,
“যীশু খ্রীষ্টের নাই সে ইচ্ছা
কি করিব বল আমরা!
চাওয়ার অধিক দিয়া ফেলিয়াছি
ভারতে বিলিতি আমড়া।”


‘বড়দিন’ শিরোনামের কবিতায় তিনি অসাম্যের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে লিখেছেন,
“বড়লোকদের ‘বড়দিন’ গেল, আমাদের দিন ছোটো,
আমাদের রাতকাটিতে চায় না, খিদে বলে নিবে ওঠো।
পচে মরে হায় মানুষ, হায়রে পঁচিশে ডিসেম্বর।
কত সম্মান দিতেছে প্রেমিত খ্রীষ্টে ধরার নর।
ধরেছিলে কোলে ভীরু মানুষের প্রতীক কি মেষ শিশু?
আজ মানুষের দুর্গতি দেখে কোথায় কাঁদিছে যীশু!”


তার বিখ্যাত কবিতা ‘দারিদ্র্য’-এর মধ্যে দারিদ্র্যের জয়গান করতে গিয়ে তিনি যীশু খ্রীষ্টের উপমা তুলে ধরেছেন।
“হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কণ্টক মুকুট শোভা।”


আবার ‘বারাঙ্গনা’ কবিতায় মা মেরীর মাতৃত্বের জয়গান গেয়েছেন।
তিনি এখানে মা অহল্যা ও মা মেরীর উপমা তুলে ধরেছেন,
“মুনি হ’ল শুনি সত্যকাম সে জারজ জবালা শিশু,
বিস্ময়কর জন্ম যাহার-মহাপ্রেমিক যীশু!
অহল্যা যদি মুক্তি লভে না, মেরী হতে পারে দেবী।


ক্রুশের উপরে যীশুর
শেষ সাতটি বাণী
THE SEVEN LAST WORDS
OF JESUS ON THE CROSS
(Bengali)
লেখক : ডঃ আর. এল. হাইমার্স, জুনিয়র|
by Dr. R. L. Hymers, Jr.
2016 সালের, 20শে মার্চ, প্রভুর দিনের সন্ধ্যাবেলায় লস্ এঞ্জেল্সের
ব্যাপটিষ্ট ট্যাবারন্যাক্ল মন্ডলীতে এই ধর্ম্মোপদেশটি প্রচারিত হয়েছিল
A sermon preached at the Baptist Tabernacle of Los Angeles
Lord’s Day Evening, March 20, 2016
‘‘পরে, মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া, তাহারা তথায় তাঁহাকে, এবং সেই দুই দুষ্কর্মকারীকে ক্রুশে দিল, এবং একজনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে, ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল’’ (লূক 23:33)|


যীশুর শারীরিক দুঃখভোগ ছিল অতি তীব্র| এটা হয়েছিল চাবুকের আঘাতের দ্বারা যা আক্ষরিক অর্থেই তাঁর গায়ের চামড়া ফালি ফালি করে ছাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পিঠে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল| ঐরকম চাবুকের আঘাতের ফলে অনেক লোক মারা যেত| এরপর, তারা একটা কাঁটার মুকুট নিয়ে তাঁর মাথায় চেপে বসিয়ে দিয়েছিল| তীক্ষ্ণ কাঁটা তাঁর মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, আর রক্তের ধারা তাঁর মুখমন্ডল বেয়ে নেমে এসেছিল| তারা তাঁর মুখন্ডলেও আঘাত করেছিল, তাঁর গায়ে থুথু দিয়েছিল, এবং নিজেদের হাত দিয়ে তাঁর দাড়ি উপড়িয়ে নিয়েছিল| তারপরে তারা তাকে নিজের ক্রুশ যিরূশালেমের রাস্তা দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল, সেই বধ্যভূমি পর্যন্ত যাকে বলা হয় কালভেরী| শেষ পর্যন্ত, বড় বড় পেরেক তাঁর পায়ের এবং হাতের তালুতে অর্থাৎ যেখানে হাতের তালু এবং কবজি সংযুক্ত হয়েছে, সেখানে বিদ্ধ করা হয়েছিল| এইভাবে তিনি ক্রুশের সঙ্গে পেরেকবিদ্ধ হয়েছিলেন|


বাইবেল বলছে:
‘‘মনুষ্য অপেক্ষা তাঁহার আকৃতি [তাঁহার দৃষ্টিগোচরতা] মানব সন্তানগণ অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত [বিকৃত চেহারা] বলিয়া, [মনুষ্যের পছন্দের বাহিরে বিকৃত] যেমন অনেকে তাঁহার বিষয়ে হতবুদ্ধি হইত’’ (যিশাইয় 52:14)|


আমরা চলচ্চিত্রে বলিউড অভিনেতাদের যীশুর চরিত্র অঙ্কন করা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি| এই চলচ্চিত্রগুলি কখনো ক্রুশারোপনের সেই গভীর আতঙ্ক এবং যন্ত্রণাকর বর্বরতা বিশদভাবে দেখায় না| আমরা চলচ্চিত্রে যা দেখতে পাই সেটা কিছুই নয় যখন তার সঙ্গে যীশু ক্রুশের উপরে প্রকৃতপক্ষে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তার তুলনা করা হয়| ততক্ষণ নয় যতক্ষণ না ‘‘খ্রীষ্টের আবেগ’’ আমরা দেখতে পাই যা প্রকৃতপক্ষে তাঁর প্রতি ঘটেছিল| সেটা সত্যি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল|


তাঁর মাথার খুলিতে চিড় ধরেছিল| তাঁর মুখমন্ডল এবং ঘাড় বেয়ে রক্ত নিচে নেমে আসছিল| তাঁর চোখদুটি ফুলে উঠে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল| সম্ভবত তাঁর নাক ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং সম্ভবত কন্ঠার হাড়ও ভেঙ্গেছিল| তাঁর দুটি ঠোঁট ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং রক্ত ঝরছিল| তাঁকে চিনতে পারা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল|
তবুও এটাই হচ্ছে ঠিক সেই কথা যা দুঃখভোগরত ভৃত্যের বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যবাণী করেছিলেন, ‘‘মনুষ্য অপেক্ষা তাঁহার আকৃতি মানব সন্তানগণ অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত বলিয়া, যেমন অনেকে তাঁহার বিষয়ে হতবুদ্ধি হইত’’ (যিশাইয় 52:14)| বিদ্রূপ এবং থুথু ছেটানোর কথাও সেই ভাববাদীর মাধ্যমে আগেই বলা হয়েছিল: ‘‘আমি প্রহারকদের প্রতি আপন পৃষ্ঠ, যাহারা দাড়ি উপড়াইয়াছে তাহাদের প্রতি আপন গাল পাতিয়া দিলাম; অপমান ও থুথু হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিলাম না’’ (যিশাইয় 50:6)|


এটা আমাদের ক্রুশের কাছে নিয়ে আসছে| রক্তক্ষরণরত অবস্থায়, যীশুকে সেখানে ক্রুশারোপিত করা হল| যখন যীশু ক্রুশের উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি সাতটি সংক্ষিপ্ত বাণী প্রদান করেছিলেন| আমি চাই যেন আমরা সকলে ক্রুশের উপরে যীশুর সর্বশেষ সেই সাতটি বাণীর বিষয়ে চিন্তা করি|


I. প্রথম বাণী – ক্ষমা
‘‘পরে, মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া, তাহারা তথায় তাঁহাকে, এবং সেই দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে, ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল| তখন যীশু কহিলেন,পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর; কেননা ইহারা কি করিতেছে তাহা জানে না’’ (লূক 23:33-34)|
এই কারণেই যীশু ক্রুশে গিয়েছিলেন – আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য| যিরূশালেমে যাওয়ার বহু আগে থেকেই তিনি জানতেন যে তিনি নিহত হতে চলেছেন| নতুন নিয়ম শিক্ষা দেয় যে আপনার পাপের দেনা শোধ করার জন্য তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে ক্রুশারোপনের জন্য সমর্পণ করেছিলেন|
‘‘কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি অধার্ম্মিকদের নিমিত্ত, যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান’’ (I পিতর 3:18)|
‘‘শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট
আমাদের পাপের জন্য মরিলেন’’ (I করিন্থীয় 15:3)|
যীশু প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর,’’ যখন তাঁকে ক্রুশে ঝোলানো হচ্ছিল| ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন| যারা সম্পূর্ণভাবে যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করেন তাদের প্রত্যেককেই ক্ষমা করা হয়| ক্রুশের উপরে তাঁর মৃত্যু আমাদের পাপের সমস্ত দেনা শোধ করে| তাঁর রক্ত আপনাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে দূরে সরিয়ে দেয়|


II. দ্বিতীয় বাণী – পরিত্রাণ
যীশুর দুই পাশে দুই দস্যুকে, ক্রুশারোপিত করা হয়েছিল|
‘‘আর যে দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে [অপরাধীকে] ক্রুশে টাঙ্গানো গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে একজন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট, আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর| কিন্তু অন্যজন উত্তর দিয়া, তাহাকে অনুযোগ করিয়া কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না, তুমি ত একই দন্ড পাইতেছ? আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দন্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি: কিন্তু ইনি অপকার্য্য [মন্দ কার্য্য] কিছুই করেন নাই| পরে সে কহিল যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন| তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে’’ (লূক 23:39-43) |
দ্বিতীয় দস্যুর মন পরিবর্তন খুবই প্রকাশমূলক| এটা আমাদের কাছে প্রকাশ করছে
1. জলব্যাপ্তিস্মের দ্বারা অথবা মন্ডলীর সদস্যপদ গ্রহণের দ্বারা পরিত্রাণ হয় না – সেই দস্যু ইহাদের কোনটিই করে নাই|
2. ভাল উপলব্ধির দ্বারা পরিত্রাণ আসে না – দস্যুর শুধুমাত্র মন্দ উপলব্ধি ছিল – তাহাকে ক্রুশারোপিত করা হইয়াছিল আর সেইসঙ্গে পাপের অপরাধীও সাব্যস্ত করা হইয়াছিল|
3. সম্মুখে আগাইয়া যাওয়া অথবা আপনার হস্ত উত্তোলনের দ্বারা পরিত্রাণ আসে না – দস্যুর পদদ্বয়ের সহিত্, তাহার দুই হস্তও ক্রুশের সহিত পেরেকবিদ্ধ ছিল|
4. ‘‘যীশুকে আপনার হৃদয়ে আহ্বান করিবার’’ দ্বারা পরিত্রাণ আসে না| দস্যুটি সম্ভবত আশ্চর্য্যান্বিত হইত যদি তাহাকে কেহ ঐরূপ করিতে বলিতেন!
5. ‘‘পাপীর প্রার্থনা’’ করিবার দ্বারা পরিত্রাণ আসে না| সেই দস্যু এই প্রার্থনা করে নাই | সে শুধুমাত্র যীশুকে বলিয়াছিল তাহাকে স্মরণে রাখিতে|
6. যেভাবে আপনি জীবন-যাপন করিতেছেন তাহার পরিবর্তন ঘটাইলে পরিত্রাণ আসে না| সেই দস্যুর এইরূপ করিবার সময় ছিল না|


এই দস্যুকে যেভাবে পরিত্রাণ পেয়েছিল সেইভাবে আপনিও অবশ্যই পরিত্রাণ পাবেন:
‘‘প্রভু যীশুতে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে’’ (প্রেরিত 16:31)|
সমগ্র অন্তঃকরণ দিয়ে যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করুন, এবং তিনি তাঁর রক্ত এবং ধার্ম্মিকতা দিয়ে আপনাকে উদ্ধার করবেন সেইভাবে, ঠিক যেভাবে ক্রুশারোপিত দস্যুকে তিনি উদ্ধার করেছিলেন|


III. তৃতীয় বাণী – আবেগ |
‘‘আর যীশুর ক্রুশের নিকটে তাঁহার মাতা, ও তাঁহার মাতার ভগিনী, ক্লোপার [স্ত্রী] মরিয়ম এবং মগ্দলিনী মরিয়ম, ইহাঁরা দাঁড়াইয়া ছিলেন| যীশু মাতাকে দেখিয়া, এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারি, ঐ দেখ তোমার পুত্র ! পরে তিনি সেই শিষ্যকে কহিলেন, ঐ দেখ তোমার মাতা ! তাহাতে সেই দন্ড অবধি ঐ শিষ্য তাঁহাকে আপন গৃহে লইয়া গেলেন’’ (যোহন 19:25-27)|


যীশু যোহনকে তাঁর মায়ের যত্ন নিতে বলেছিলেন| আপনার উদ্ধার পাওয়ার পরে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনের প্রতি আরও কিছু থেকে যায়| আপনার সেইগুলির যত্ন নেওয়ার দরকার আছে| খ্রীষ্ট তাঁর প্রিয় মাকে প্রেরিত যোহনের হাতে অর্পণ করেছিলেন| তিনি আপনাকে স্থানীয় মন্ডলীর অধীনে অর্পণ করছেন| স্থানীয় মন্ডলীর যত্ন এবং স্নেহ ছাড়া খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে কেউ এই কাজ করতে পারে না| সেটা যে সত্যি তা আজকের দিনে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই|
‘‘আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল প্রভু দিনদিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত [যিরূশালেমে] সংযুক্ত করিতেন’’ (প্রেরিত 2:47)|


IV. চতুর্থ বাণী – নিদারুণ যন্ত্রণা |
‘‘পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল| আর নয় ঘটিকার সময় যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া ডাকিয়া, কহিলেন, এলী, এলী, লামা শবক্তানী? অর্থাৎ, ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:45-46)|
যীশুর এই নিদারুণ বেদনাময় কান্না দেখাচ্ছে ত্রিত্বের সত্যতা, স্বর্গীয় প্রকৃতি| পিতা ঈশ্বর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, যখন পুত্র ঈশ্বর ক্রুশের উপরে আপনার পাপ বহন করছিলেন| বাইবেল বলছে:
‘‘কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বর ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য খ্রীষ্ট যীশু’’ (I তিমথীয় 2:5)|
V. পঞ্চম বাণী – দুঃখভোগ


‘‘ইহার পরে যীশু, সমস্তই এখন সমাপ্ত হইল জানিয়া, শাস্ত্রের বচন যেন সিদ্ধ হয়, এই জন্য কহিলেন,আমার পিপাসা পাইয়াছে | সেই স্থানে সিরকায় পূর্ণ একটি পাত্র ছিল: তাহাতে লোকেরা সিরকায় পূর্ণ একটি স্পঞ্জ, এসোব নলে লাগাইয়া, তাঁহার মুখের নিকটে ধরিল’’ (যোহন 19:28-29)|
এই পদ আমাদের দেখাচ্ছে যে আমাদের পাপের দেনা শোধ করার জন্য যীশুকে কি গভীর দুঃখভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল:
‘‘তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন’’ (যিশাইয় 53:5)|


VI. ষষ্ঠ বাণী – প্রায়শ্চিত্ত |
‘‘সিরকা গ্রহণ করিবার পর, যীশু কহিলেন, সমাপ্ত হইল’’ (যোহন 19:30)|
আমি এতক্ষণ অবধি যা যা বলেছি তার অনেকটাই একজন ক্যাথলিক যাজক বলে দিতে পারতেন| কিন্তু এই ষষ্ঠ বাণীর উপরে প্রোটেস্ট্যান্ট পুনঃজাগরণ ঝুলে রয়েছে, সেই সঙ্গে আছে যুগ যুগ ধরে ব্যাপটিষ্টদের বিশ্বাস| যীশু বলেছিলেন, ‘‘ইহা সমাপ্ত হইল|’’
যীশু কি সঠিক ছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইহা সমাপ্ত হইল’’? ক্যাথলিক মন্ডলী বলছে, ‘‘না|’’ তারা বলেন যে তাঁকে নিশ্চয়ই নতুন করে ক্রুশারোপিত করতে হয়েছিল, এবং প্রতিটি জমায়েতে আবার উৎসর্গ করতে হয়েছিল| কিন্তু বাইবেল বলছে যে এটা ভুল হচ্ছে|
‘‘যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবার উৎসর্গ করণ দ্বারা আমরা পবিত্রীকৃত হইয়া রহিয়াছি’’ (ইব্রীয় 10:10)|
‘‘কারণ যাহারা পবিত্রীকৃত হয় তাহাদিগকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করিয়াছেন’’ (ইব্রীয় 10:14)|
‘‘আর প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়, সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না: কিন্তু ইনি [যীশু], পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া, ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন’’ (ইব্রীয় 10:11-12)|
যীশু ক্রুশের উপরে, একবার এবং আমাদের সকলের জন্য, সমস্ত পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত উৎসর্গ করেছিলেন|
যীশু সকলই শোধ করিয়াছেন,
সকলের জন্য আমি তাঁহার কাছে ঋণী;
পাপ গাঢ় কলঙ্ক রাখিয়া গিয়াছে,
তিনি উহা তুষারের ন্যায় শুভ্র করিয়া ধৌত করিয়াছেন|
(“Jesus Paid It All” by Elvina M. Hall, 1820-1889) |


VII. সপ্তম বাণী – ঈশ্বরের প্রতি দায়িত্ব অথবা সমর্পণ |
‘‘আর যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, কহিলেন, পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি : আর এই বলিয়া, তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন’’ (লূক 23:46)|
মৃত্যুর আগে দেওয়া তাঁর সর্বশেষ বিবৃতিতে যীশু পিতা ঈশ্বরের প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ সমর্পণকে দেখিয়েছেন| যেমন মহান স্পারজিয়ন নির্দেশ করেছেন যে, এটা প্রতিফলিত করছে যীশুর সেই নথিভূক্তকৃত প্রথম বাণীটিকেই, ‘‘আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে ইহা কি জানিতে [পূর্বে জ্ঞাত হওয়া] না?’’ (লূক 2:49)| প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত, যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছাই পালন করেছিলেন|


রুক্ষ অমার্জিত শতপতিদের মধ্যে একজন যিনি তাঁকে ক্রুশের সঙ্গে পেরেকবিদ্ধ করেছিলেন তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে এই সাতটি বাণী শুনছিলেন| সেই শতপতি এর আগেও অনেক ক্রুশারোপন দেখেছেন, কিন্তু যখন যীশুর জীবন-রক্ত প্রবাহিত হয়ে চলেছে তখনও এক বিস্ময়কর ধর্ম্মোপদেশ প্রচাররত অবস্থায় যেভাবে তিনি মারা যাচ্ছেন, সেইভাবে কোন মানুষকে এর আগে মারা যেতে তিনি কখনও দেখেননি|
‘‘যাহা ঘটিল তাহা দেখিয়া, শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া, কহিলেন, সত্য এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক ছিলেন’’ (লূক 23:47)|
সেই শতপতি একটুক্ষণ যীশুর সম্বন্ধে ভাবলেন, এবং তারপরে বললেন,
‘‘সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন’’ (মার্ক 15:39)|
তিনি হলেন ঈশ্বরের পুত্র! তিনি মৃত্যু থেকে – জীবন্ত, স্বশরীরে – পুনরুত্থিত হয়েছেন| তিনি স্বর্গে আরোহণ করেছেন| তিনি ঈশ্বরের ডান দিকে বসে থাকেন| ‘‘প্রভু যীশুকে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে’’ (প্রেরিত 16:31)|
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা ভাবেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলে সেটাই যথেষ্ট| কিন্তু তারা ঠিক নন| কেবলমাত্র ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা কোন মানুষই পরিত্রাণ পেতে পারেন না| যীশু স্বয়ং বলেছেন, ‘‘আমা দিয়া না আসিলে, কেহ পিতার নিকটে আইসে না’’ (যোহন 14:6)| ডঃ এ. ডব্লিউ. টোজার বলেছিলেন, ‘‘ঈশ্বরের নিকট পৌঁছাইবার অনেকগুলি পথের মধ্যে খ্রীষ্ট না হইতেছেন শুধু একটি পথ, না হইতেছেন সবগুলি পথের তুলনায় সর্বোত্তম পথ; তিনি হইতেছেন একমাত্র পথ’’ (That Incredible Christian, p. 135)| যদি আপনি যীশুকে বিশ্বাস না করেন, আপনি হারিয়ে যাবেন| আপনি কত “উত্তম” সেটা কোন ব্যাপার নয়, আপনি কত ঘন ঘন মন্ডলীতে উপস্থিত হচ্ছেন বা বাইবেল পাঠ করছেন, সেগুলো কোন ব্যাপার নয়, আপনি যদি যীশুতে বিশ্বাস না করেছেন তাহলে আপনি হারিয়ে গেছেন| ‘‘আমা দিয়া না আসিলে, কেহ পিতার নিকটে আইসে না|’’ একমাত্র যীশুই রক্ত দিয়ে আপনার পাপ থেকে আপনাকে ধৌত করেন| আমেন|


ক্রিসমাস বড়দিন ধর্মীয় কবিতা।
কলমে -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ক্রিসমাস বড়দিন এলো আজ ভাই,
ঘণ্টা ধ্বনি শুনি তাই গীর্জায় গীর্জায়।
শিশু বৃদ্ধ যুবা সব আসে দলে দলে,
যীশুর প্রার্থনা করে খ্রিষ্টান সকলে।


ক্রিসমাস বৃক্ষ এক রাখি সযতনে,
সুশোভিত ফুলমালা গীর্জার প্রাঙ্গণে।
মহা ধুমধাম আজি গীর্জা অভ্যন্তরে,
আনন্দেতে নাচে গায় উপভোগ করে।


বাইবেলে আছে লেখা মিথ্যা কভু নয়,
যীশুর পুনরুত্থান শাস্ত্রে লেখা হয়।
সবাকার পাপভার নিজ স্কন্ধে লয়ে,
ত্যজিলেন প্রাণ যীশু ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে।


ফিরে এসো এসো প্রভু হে যীশু আমার!
এক বর্ষ তরে পুনঃ প্রতীক্ষা আবার।