বৃষ্টি কাব্য – দ্বিতীয় খণ্ড


কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতাগুচ্ছ
বৃষ্টিতে ভেজা বৃষ্টির কবিতা
……………………………………


ভূমিকা


কবিতা হোক প্রকৃতির অপরূপ, মানবতা, সামাজিক মূল্যবোধ, বৈষম্য, অধিকার, নৈতিকতা, অধিকার, শোষণ-বঞ্চনা, আদর্শ, অবক্ষয়, আর ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ছন্দের অভিবন্দনা। কবিতার মুক্তবাণী ডানা ছড়াবে দিগন্তে। মানবিক বিবেক জাগ্রত করে এগিয়ে যাওয়ার আশার আলো দেখাবে।


কবিতা মানুষের কথা বলে, কবিতা জীবনের কথা বলে। কবিতা প্রকৃতির কথা বলে। কবিতা বৃষ্টির কবিতা বলে। কবিতাগুচ্ছে নিয়ে এবার প্রকাশিত হলো বৃষ্টিকাব্য দ্বিতীয় খণ্ড। কবিতাগুলি ইতিপূর্বে শব্দনীড় ও বাংলা কবিতার আসরে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি প্রথম খণ্ডের মতো বৃষ্টিকাব্য দ্বিতীয় খণ্ডও পাঠকের দরবারে সমাদর পাবে। প্রত্যাশা রাখি।


কবিতার বিপ্লবে আজ যোগ দিয়েছেন বহু নাম জানা অজানা কবি। তাদের সবাইকে জানাই বাংলা কবিতার আসরের পক্ষ থেকে
সংগ্রামী অভিনন্দন।
জয়গুরু!


বিনীত কবি
নারায়ণা বিহার
নতুন দিল্লী-১১০০২৮
……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-১
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
ঘন মেঘ গরজায়,
কালো মেঘের অন্তর হতে
বিজুলি চমকি চায়।


আকাশ জুড়ে আলোর খেলা
চারিদিক অন্ধকার,
অজয় ঘাটে নৌকাটি বাঁধা
বন্ধ খেয়া পারাপার।


খেয়ার ঘাটে নাই কো মাঝি
চলে গেছে মাঝি ঘরে,
দূরের গ্রামে বাদল নামে
অঝোরে বরিষা ঝরে।


গাঁয়ের পথে সকাল হতে
লোকজন নাহি চলে,
অঝোর ধারে ঝরিছে বৃষ্টি
পথ ঘাট ভরে জলে।


বর্ষায় ভেজা সরস মাটি
মাটিতে সবুজ ঘাস,
চাষীরা খেতে লাঙল চষে
সারাদিন করে চাষ।


দিনের শেষে ক্লান্ত চাষীরা
ফিরিছে আপন ঘরে,
বৃষ্টি নেমেছে মুষল ধারে
অজয় নদীর চরে।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-২
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ়ের কালো মেঘ ঘন বরষায়,
ঘন কালো মেঘ ভাসে আকাশের গায়।
গুরু গুরু ডাক শুনি আসে কোথা থেকে,
জ্বলিছে বিজুলীধারা মেঘে এঁকে বেঁকে।


আষাঢ়ে বাদল নামে আমাদের গাঁয়ে,
সীমানায় নদী ঘাট রাঙা পথ বাঁয়ে।
নদী মাঠ ভরে যায় বরষার জলে,
কাদাপথে চাষীভাই হাল নিয়ে চলে।


খেয়াঘাটে মাঝি নাই কেহ নাই কূলে,
নদীতে প্রবল বন্যা নদী উঠে ফুলে।
দুরন্ত বরিষা নামে আমাদের গ্রামে,
আসিল প্রলয় বুঝি আজি ধরাধামে।


মুষল ধারায় নামে বাদলের ধারা,
অজয় ছুটিয়া চলে পাগলের পারা।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৩
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ় মাসে
বাদলা দিনে
আজও বৃষ্টির দেখা নাইরে, বৃষ্টির দেখা নাই।


বাদল দিনে
মেঘের কোণে
কালো মেঘের দেখা নাই রে, মেঘের দেখা নাই।


গুরু গম্ভীর
ডাকে না দেয়া
ঘন মেঘের গর্জন নাই রে, মেঘের গর্জন নাই।


আকাশ পারে,
ভরা আষাঢ়ে,
বিজুলির আলো নাই রে, বিজুলির আলো নাই।


কড়া রোদ্দুরে
জীবন পুড়ে
শীতল জল কোথায় পাই রে জল কোথায় পাই।


অজয় পারে
নদীর ধারে
অজয় নদীতে বান নাই রে নদীতে বান নাই।


দিনের শেষে
পাহাড় ঘেঁষে
পশ্চিমেতে সূর্য ডুবে যায় রে সূর্য ডুবে যায়।


সাঁঝের বেলা
জোনাকি মেলা
চাঁদের আলো কোথাই পাই রে আলো কোথায় পাই।


আঁধার হলো
ফুটলো তারা
রাতে নীল আকাশের গায় রে নীল আকাশের গায়।


রাত ফুরালো
সকাল হলো
আজও বৃষ্টির দেখা নাই, তাই বৃষ্টির দেখা নাই।
আসছে বৃষ্টি, তাই বৃষ্টির পদধ্বনি শুনতে পাই।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৪
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


কালো মেঘ আকাশটাকে
রেখেছে আজকে ঢেকে,
রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ে
আজকে সকাল থেকে।


বৃষ্টি পড়ে মুষল ধারায়
অজয় নদীতে বান,
একতারাতে মধুর সুরে
বাউল ধরেছে গান।


পথের বাঁকে কলসী কাঁখে
বৃষ্টি ভেজা রাঙাপথে,
রাঙা বধূ জল নিয়ে আসে
অজয়ের ঘাট হতে।


বৃষ্টিতে ভিজে পাখিরা সব
তরুর শাখায় বসে,
বৃষ্টিতে ভিজে চাষীরা সব
মাটিতে লাঙল চষে।


বৃষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটা
বৃষ্টিতে ভিজতে চায়,
না নিয়ে ছাতা বৃষ্টির দিনে
ভিজে ভিজে ঘরে যায়।


বৃষ্টি কাব্যের কবিতারা সব
বৃষ্টির দিবসে ভিজে।
বৃষ্টিকে নিয়ে কবিতা লিখে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী নিজে।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৫
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


সেদিন দেখি বাদল নামে
আমার মাটির ঘরে,
সকাল হতে বৃষ্টির ধারা
অবিরত পড়ে ঝরে।


ভাঙা পাঁচিলে বসেছে কাক,
আমার বাড়ির পাশে,
মুষলধারে বাদল নেমেছে
মেঘ কালো হয়ে আসে।


কালো মেঘে বিজুলি আলো
ঘন ঘন চমকায়,
গুরু গম্ভীর মেঘ ডাকে ঐ
দূর আকাশের গায়।


মোর বাড়ির উঠোনটাতে
জমে এক হাঁটু জল,
বৃষ্টির জলে ব্যাঙের দল
করে কত কোলাহল।


বর্ষা প্রবল পথে জলকাদা
পথ চলা হলো দায়,
জলে কাদায় মাটির পথে
ভিজে ভিজে সবে যায়।


সকাল হতে সারাটা দিন
অবিরাম জল ঝরে,
বর্ষার দিনে বৃষ্টির কাব্য
লিখে কবি প্রাণভরে।
……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৬
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আকাশ ঘিরে কালো মেঘের
গুরু গম্ভীর গর্জন,
সকাল হতে নেমেছে আজ
অতি প্রবল বর্ষণ।


অজয় নদে এসেছে বান
বইছে প্রবল ঢেউ,
ছাড়েনি নৌকা গাঁয়ের মাঝি
নাই আজ কূলে কেউ।


বর্ষায় ভিজে রাঙী গাইটি
ঘন ঘন ডাক ছাড়ে,
মরাল আসে মরালী পাশে
নয়ন দিঘির পাড়ে।


বর্ষায় ভিজে ইস্কুলে যায়
এ গাঁয়ের যত ছেলে,
বর্ষায় আজ ময়ুরী নাচে
আপন পেখম মেলে।


বর্ষার দিনে গাঁয়ের চাষী
লাঙল চালায় মাঠে,
বৃষ্টিতে ভিজে লাঙল চষে
সারাদিন মাঠে কাটে।


সকাল হতে বর্ষা নেমেছে
জল ঝরে অবিরাম,
ভেঙেছে বাঁধ ঢুকছে জল
কেঁদে ওঠে সারাগ্রাম।
……………………………………
বৃষ্টি কবিতা-৭
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ়ে নেমেছে বৃষ্টি অঝোর ধারায়,
অজয়ে এসেছে বান গ্রাম ভেসে যায়।
পথ ঘাট দিঘি খেত ডুবে আছে জলে,
রাঙাপথে লোকজন ভিজে ভিজে চলে।


ওপারে বাদল নামে, এপারেও নামে.
ভেঙে গেছে নদীবাঁধ জল ঢুকে গ্রামে।
অবিরাম জল ঝরে কালো মেঘ ডাকে,
কালো মেঘ অন্ধকারে চারদিক ঢাকে।


তরুর শাখায় বসে বিহগের দল,
নীড়হারা পাখি সব করে কোলাহল।
গাঁয়ের চাষীরা সব মাঠে করে চাষ,
অবিরত বারি ঝরে আষাঢ়ের মাস।


কালো মেঘ চারদিকে ছাইল গগন,
বৃষ্টি কাব্য লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।
……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৮
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ়ের মাসে
কালোমেঘ ভাসে
আকাশের আঙিনায়।


মেঘের গর্জন,
প্রবল বর্ষণ,
চারিদিকে বসুধায়।


বরষা নেমেছে
পুকুর ভেঙেছে
জল ঢুকে মোর গাঁয়।


ছিঁড়ে গেছে পাল
মাঝি ধরে হাল
আনে তরী কিনারায়।


ঘাটে কেউ নাই
মাঝি ঘরে যায়
আঁধারে গগন ছায়।


বৃষ্টি থেমে যায়
রাতের বেলায়
চাঁদতারা হাসে গায়।
ফুটফুটে জোছনায়।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-৯
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জল ঝরে সারাদিন সারা রাত ধরে,
পথ ঘাট নদী মাঠ জলে আছে ভরে।
থেকে থেকে শোনা যায় মেঘের গর্জন,
রিম ঝিম সারা দিন প্রবল বর্ষণ।


অজয়েতে এলো বান কানায় কানায়,
বাড়িঘর ভেঙে পড়ে জল ঢুকে গাঁয়।
অজয়ে এসেছে বান কূলে নাই কেউ,
নদীজলে ভেসে চলে কূল ভাঙা ঢেউ।


অবিরত বারি ধারা ঝরে অবিরল,
পথেঘাটে জল কাদা হয়েছে পিছল।
রাখাল বালক আসে নিয়ে গরুপাল,
ফিরিছে গাঁয়ের চাষী কাঁধে নিয়ে হাল।


অবিরাম বারি ধারা হয় বরিষণ,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।


……………………………………


বৃষ্টি কবিতা-১০
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে
সারা আকাশ কালো,
গর্জন করে মেঘ অবিরল
চমকে বিজলি আলো।


আষাঢ় মাসের বাদলা দিনে
অবিরত বৃষ্টি ঝরে,
গাঁয়ের পথে জল জমেছে
মাঠঘাট জলে ভরে।


অজয় নদে বান নেমেছে
নাইকো ঘাটে মাঝি,
নদীর ঘাটে নাইকো কেহ
বাদল ঝরে আজি।


ঝম ঝমা-ঝম বৃষ্টি পড়ে
আজকে সকাল হতে,
সবেগে বয়ে যায় জল
রাঙা মাটির পথে।


ধান খেত জলে আছে ভরে
শূন্য গরুর বাথান,
বেণু মাধব একতারা নিয়ে
গাইছে বাউলগান।


রিম ঝিম-ঝিম বৃষ্টি পড়ে
নামল এবার জোরে,
সকাল হতে অঝোর ধারায়
বাইরে বৃষ্টি পড়ে।