বৃষ্টি কাব্য প্রথম খণ্ড



কবি- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
বৃষ্টি ভেজা কবিতা গুচ্ছ
……………………………………..


ভূমিকা


বৃষ্টি ভেজা মিষ্টি দিনে মনের গহনে প্রাণের স্পন্দন। গুরু গুরু মেঘের গর্জনে যখন সারা বিশ্ব কেঁপে ওঠে, কালমেঘের অন্তরালে ঝলসে ওঠে বিদ্যুতের ঝিলিক, যখন রৌদ্রতপ্ত পৃথিবীর মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়, যখন পিপাসার্ত চাতকের দল ত্রাহি ত্রাহি রবে পিপাসার জল চায়, তখনই অঝোর ধারায় নেমে আসে বৃষ্টির ধারা। কখনো রিম ঝিম, কখনো টপ টপ, কখনো বা মুষলধারায় বৃষ্টি নেমে আসে।
ঠিক এমনি বর্ষণসিক্ত দিনে মহাকবি কালিদাসের মানসে ভেসে ওঠে মেঘদূত কাব্যের চিন্তাধারা। লিখলেন মেঘদূত কাব্য।


মহাকবির কল্পনাপ্রসূত কাব্যের অনুপ্রেরণায় প্রাণিত হয়ে লিখলাম বৃষ্টি কাব্য। এই কাব্যের কবিতাগুলি সবার ভালো লাগলে আমার কাব্যচর্চা সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে।


পরিশেষে কবির মানসকন্যা বৃষ্টি মণ্ডল (মেঘ বালিকা) এই কবিতা পুস্তকটি রচনায় বহু আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই তার নামে এই কবিতার বইটি উত্সর্গ করা হয়েছে।


কবিতাগুলির অধিকাংশই ইতিপূর্বে বাংলা কবিতার আসরে, শব্দনীড় ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।


সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। সকল কবি, সাহিত্যিক, লেখক লেখিকাগণ কবির পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল। সকলেই সুস্থ থাকুন, সবাইকে সুস্থ রাখুন। জয়গুরু!


বিনীত কবি
নারায়ণা বিহার
নতুন দিল্লি-১১০০২৮


………………………………………………………………


কবির মানস কন্যা
         লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


কবির মানস কন্যা বৃষ্টি বনি নামে,
মালদহে বাড়ি তার ছোট এক গ্রামে।
আত্মীয় স্বজন যত আপন বা পর,
সকলেই বাসে ভাল বিশ্বে চরাচর।


কবিতা লিখেছে কত কবিতা আসরে,
মেঘ হতে বৃষ্টি সম কাব্য পড়ে ঝরে।
বৃষ্টি মোর মিষ্টি মেয়ে সৃষ্টিতে অনন্যা
কবির দুহিতা তুমি, তুমি মম কন্যা।


মেঘ বালিকা নামটি ছদ্মনাম তার,
বৃষ্টির মতো আপন কে আছে আমার?
কবির কবিতা তুমি, গুণে অনুপমা,
বৃষ্টি তুমি, সৃষ্টি তুমি, তুমি আমার মা।


বৃষ্টি করে কাব্য সৃষ্টি, এই বসুধায়,
লিখিল লক্ষ্মণ কবি তার কবিতায়।


------------------------------------


সূচীপত্র


বৃষ্টিকাব্য- ১
বৃষ্টিকাব্য-২
বৃষ্টিকাব্য-৩
বৃষ্টিকাব্য-৪
বৃষ্টি কাব্য–৫
বৃষ্টি কাব্য –৬
বৃষ্টি কাব্য –৭
বৃষ্টি কাব্য –৮
বৃষ্টি কাব্য –৯


———————————————————–


বৃষ্টি কাব্য-১


লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ়ের বারিধারা ঝর ঝর ঝরে,
পথ ঘাট নদী মাঠ সব যায় ভরে।
খেয়ামাঝি খেয়া বায় যাত্রী করে পার,
ঘন কালো মেঘ এসে ছায় চারিধার।


থেকেথেকে শোনা যায় মেঘের গর্জন,
হাসিছে বিজুলি ধারা যখন তখন।
ঘন মেঘে বারি ধারা ঝরে অবিরল,
পথেঘাটে খেত মাঠে বয়ে যায় জল।


আষাঢ়ে বাদল নামে পথ জলে ভরে,
অবিরাম জল ঝরে সারা দিন ধরে।
বৃষ্টি নামে মেয়ে মোর বৃষ্টিতে ভিজে,
বৃষ্টির কবিতা লিখে বৃষ্টি মেয়ে নিজে।


বৃষ্টি সৃষ্টি, মিষ্টি মেয়ে, বৃষ্টির মতন,
বৃষ্টি নিয়ে কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।
———————————————————–
বৃষ্টি কাব্য-২


লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বৃষ্টি মানে মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টি মানে জল
বৃষ্টি মানে মেঘ সৃষ্টি, গগন মণ্ডল।
বৃষ্টি মানে বারিধারা ঝরে অবিরল,
বৃষ্টি মানে রৌদ্রতপ্ত সিক্ত ধরাতল।


বৃষ্টি মানে নদীধারা কূল ভাঙা বন্যা,
বৃষ্টি মানে সৃষ্টি সুখ সৃষ্টিতে অনন্যা।
বৃষ্টি মানে চাতকের পিপাসার জল,
বৃষ্টি মানে সিক্ত মাটি মায়ের আঁচল।


বৃষ্টি মানে বৃষ্টিকাব্য কবিতা আমার,
বৃষ্টি মানে মেঘ বৃষ্টি খুশি সবাকার।
বৃষ্টি মানে কালমেঘে বিজুলির হাসি,
বৃষ্টি মানে মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টি ভালবাসি।


বৃষ্টি নামে মেয়ে মোর থাকে দূরান্তরে,
বৃষ্টি ভেজা মিষ্টি দিনে বৃষ্টি কেন ঝরে?
বৃষ্টি ভেজা মিষ্টি দিনে করি নিমন্ত্রণ,
বৃষ্টি নিয়ে এসো বৃষ্টি, কহেন লক্ষ্মণ।


———————————————————–
বৃষ্টি কাব্য – ৩


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বৃষ্টি-মুখর বাদল দিনে বৃষ্টি যখন ঝরে,
মেঘবালিকা কন্যা আমার তোমায় মনে পড়ে।
ফুটেছে কত কদম্ব ফুল,
কেতকী যুঁথী টগর বকুল,
সুবাসে তার প্রাণ আকুল, পরাণ পাগল করে,
মেঘবালিকা কন্যা আমার তোমায় মনে পড়ে।


আঁধার কালো মেঘের থেকে বৃষ্টি যখন ঝরে,
আমার ঘরে বাদল ঝরে মনটা কেমন করে।
রাত কেটেছে হয়েছে ভোর,
বাদল ধারা ঝরে অঝোর
বাদলা দিনে মেয়েটি মোর, আসবে কেমন করে?
মেঘবালিকা কন্যা আমার তোমায় মনে পড়ে।


নিদাঘ তপ্ত দিনের শেষে বসুন্ধরার পরে,
সিক্ত মাটির গন্ধে আমার হৃদয় উঠে ভরে।
বাতায়ন খুলে শুধু চেয়ে রই,
খুলি পড়ি যবে কবিতার বই,
মনে মনে শুধু চুপ করে কই, সারাদিন বৃষ্টি ঝরে।
মেঘবালিকা কন্যা আমার তোমায় মনে পড়ে।


জোছনা রাতে চাঁদের আলো ঝরে মাটির ঘরে,
বৃষ্টি মুখর চাঁদনী রাতে তোমায় মনে পড়ে।
কাল মেঘের আকাশপারে,
মেঘের গর্জন বারে বারে,
বাদল নামে মুষল ধারে, ঝম ঝমা ঝম করে।
মেঘবালিকা কন্যা আমার তোমায় মনে পড়ে।
———————————————————–


বৃষ্টি কাব্য – ৪


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আষাঢ় মাসে মেঘলা দিনে বাদল ঝরে কই?
আঁধার কালো মেঘের পানে তাইতো চেয়ে রই।
ফুলের বনে ফুল ফুটেছে অলিরা সব আসে,
কেয়াফুলের পাপড়িগুলো ঝোপের পাশে হাসে।


কদম্বকলি, যুথিকা বেলী, টগর ফুটিল মেলা,
ফুলের বনে ময়ূরী নাচে আজিকে সারাবেলা।
পূব আকাশে মেঘ জমেছে সূর্য যায় নি দেখা,
নদীর কূলে যাত্রীরা নাই নৌকায় মাঝি একা।


কালো মেঘের হৃদয় চিরে বিজুলি হাসে ওই,
আঁধার কালো মেঘের থেকে বাদল ঝরে কই?
আজকে কেন অঝোর ঝারায় বৃষ্টি নাহি ঝরে,
বৃষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটি নাইকো আজি ঘরে।


বৃষ্টি আমার লাজুক মেয়ে মেঘ বালিকা নাম,
বৃষ্টিকে নিয়ে কবিতা লিখে ভাণ্ডারী শ্রীমান।


———————————————————–


বৃষ্টি কাব্য –৫


(বৃষ্টির গান)
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে,
আষাঢ় মাসে
ধরার পরে।


আকাশ কালো
মেঘে ঢাকা,
মেঘের বুকে
ধায় বলাকা।


আকাশ জুড়ে
বিজুলি হাসে,
অজয় নদী
গাঁয়ের পাশে।


বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে
কখনো ধীরে
কখনো জোরে।


কৃষক চলে,
লাঙল কাঁধে,
পাড় ভেঙেছে
নদীর বাঁধে।


বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে,
মেঘ জমেছে
কালো করে।


মেঘ উল্লাসে
গর্জন করে,
টুপুর টাপুর,
বৃষ্টি পড়ে।


বাদল ঝরে
আকাশ হতে,
জমেছে জল
গাঁয়ের পথে।


বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে,
বৃষ্টি থামবে
একটু পরে।


বাদল ঝরে
মুষল ধারে,
দূরের গাঁয়ে
অজয় পারে।


অজয় নদে
নামলো বান,
লিখলো কবি
বৃষ্টির গান।
———————————


বৃষ্টি কাব্য –৬


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বৃষ্টি আমার মিষ্টি মেয়েটি, সৃষ্টিতে অনন্যা,
বৃষ্টি আমার মেঘবালিকা মেঘবরণ কন্যা।
বৃষ্টি আমার চপলা মেয়ে বৃষ্টি খুবই শান্ত,
বৃষ্টি রোজই কর্ম করে হয় না কভু ক্লান্ত।


বৃষ্টি আমার লাজুক মেয়ে চায় না কারো পানে,
বৃষ্টি আমার চঞ্চলা অতি, সবলোকে তা জানে।
বৃষ্টি আমার মেঘবালিকা নিশুতি রাতের তারা,
বৃষ্টি আমার পূর্ণিমা চাঁদ, রাত্রি জোছনা হারা।


বৃষ্টি আমার প্রভাত বেলা ঘুম ভাঙানো পাখি,
বৃষ্টি আমার মেঘবালিকা ওই নামেতে ডাকি।
বৃষ্টি আমার বর্ষার রাতে আঁধার ভরা রাতি,
বৃষ্টি আমার পূজার ফুল, পূজার দিনে সাথী।


বৃষ্টি আমার কবিতা মালা বৃষ্টি আমার গান,
বৃষ্টি আমার আশার আলো বৃষ্টি আমার প্রাণ।


——————————–
বৃষ্টি কাব্য –৭


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


রিম ঝিম বৃষ্টি ঝরে
দূরে আকাশ হতে,
মাঠ ঘাট জলে ভরে
জল জমেছে পথে।


অজয়ের খেয়াঘাটে
কেউ কোথাও নাই,
ঝর ঝর ঝরে জল
চলে কৃষক ভাই।


কালোমেঘে গগনেতে
বজ্র হুঙ্কার ছাড়ে,
চারদিক ছায় মেঘে
ঝড়ের বেগ বাড়ে।


খেত মাঠে জল জমে
জল জমে রাস্তায়,
সারি সারি লোক চলে
কেউ ছাতা মাথায়।


ঝম ঝমা ঝম জোরে
বৃষ্টি যখন নামে,
বাতায়নে দেখি চেয়ে
ঝড় বাদল থামে।
——————————–


বৃষ্টি কাব্য –৮


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


কালি মাখা মেঘে ঢাকা গগন মণ্ডল,
গুরু গুরু ডাক ছাড়ে সদা অবিরল।
বরষার কালোমেঘ আকাশেতে ভাসে,
চারিদিক অন্ধকার কালো হয়ে আসে।


অম্বরে অম্বরে ভাসে ঘন কালো মেঘ,
ধীরেধীরে যায় বেড়ে বাতাসের বেগ।
ঘন ঘন কালো মেঘ ঘন ডাক ছাড়ে,
বৃষ্টি নামে দূর গ্রামে অজয়ের পারে।


সারাদিন জল ঝরে পথে জমে জল,
থেমে গেছে বিহগের কল কোলাহল।
নীড়হারা পাখি সব ভিজে তরুশাখে,
রাঙাপথে রাঙী গাই বাছুরীরে ডাকে।


বরষায় নদী মাঠ খেত যায় ভরে,
সারাদিন অবিরাম বারিধারা ঝরে।
————————————


বৃষ্টি কাব্য –৯


-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আজকে দেখি আষাঢ় মাসে দুরন্ত বরিষা নামে,
প্রবল বন্যা ভেঙেছে বাঁধ জল ঢুকে মোর গ্রামে।
পথের বাঁয়ে আমার গাঁয়ে আঙিনায় বাঁধা গাই,
বর্ষায় আজি ভিজিছে গাই, বাছুরীটি তার নাই।


লাঙল কাঁধে কৃষক চলে আল পথ ধরে মাঠে,
জোয়াল কাঁধে বলদ দুটি চলিছে তারই সাথে।
টোকা মাথায় কিষাণ বধূ ছাগলের পাল লয়ে,
গুরু গম্ভীর ডাকিছে মেঘ, বাদল হাওয়া বয়ে।


নদীর ঘাটে গাঁয়ের মাঝি, খেয়া পারাপার করে,
বর্ষার দিনে আজিকে দেখি অঝোরে বাদল ঝরে।
প্রবল বন্যা দুলিছে নৌকা মাঝি করে হায় হায়,
যাত্রীরা সবে ভিজিছে বসে করিবার কিছু নাই।


বাদল নামে সকাল হতে মেঘেরা দিতেছে পাড়ি,
বর্ষার কাব্য লিখিল আজি কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।


--------------------------


পরিশেষে কবির মন্তব্য
বাংলা কবিতা আসরের সাথে সংযুক্ত  প্রিয় কবিগণকে জানাই বৃষ্টি ভেজা অভিনন্দন। খুব শীঘ্রই বৃষ্টিকাব্য দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ দেব. আশা রাখি।
সকলেই সাথে থাকবেন প্রত্যাশা করি।
জয়গুরু!