বুদ্ধ পূর্ণিমা ও বুদ্ধদেবের বাণী (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বৌদ্ধ ধর্মের মানুষদের এক বিশেষ উৎসব হল বৌদ্ধপূর্ণিমা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। কথিত আছে, এই দিন গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। অহিংসার বাণীর প্রচারে আবির্ভাব হয়েছিল গৌতম বুদ্ধের। শাস্ত্র মতে, বৈশাখ মাসের পূর্ণিমার দিন রাজা শুদ্ধোদন ও রাণী মায়াদেবীর সন্তান হিসেবে জন্ম হয় ভগবান বুদ্ধের। তিনি ছিলেন বিষ্ণুর নবম অবতার। আর এই একই দিনে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।


প্রচলিত ধারণা অনুসার, ভগবান বুদ্ধের জন্মবার্ষিকীতে পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। নেপালের লুম্বিনী নামক স্থানে ৫৬৩ খ্রিস্ট পূর্বে জন্ম হয়েছিল গৌতম বুদ্ধের। ২৯ বছর বয়সে সত্য অনুসন্ধানের জন্য তিনি পরিবার ত্যাগ করেন। তারপর তিনি বোধি গাছের নীচে বসে ৪৯ দিন কঠোর তপস্যা করেন। সে কারণে তাঁর আরেক নাম বোধিসত্ত্ব। তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষক। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অহিংসা ও করুণার বার্তা প্রচার করে গিয়েছেন। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমায় তাঁর জন্ম হয়েছিল। সে কারণে প্রতি বছর এই তিথিতে পালিত হয় বৌদ্ধ পূর্ণিমা।


এই দিনটি শুরু হয় শোভাযাত্রা দিয়ে। বিভিন্ন মঠে সকালে শোভাযাত্রা করে থাকেন ভক্তরা। তারপর প্রদীপ জ্বালিয়ে, পুজো ও প্রার্থনা করা হয়। এই দিনে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পুজো, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন অনেকে দরিদ্রদের দান করে থাকেন। অনেক ভক্ত আবার উপবাস করে পুজো করেন। ধ্যান ও পবিত্র স্তোত্র পাঠের রীতি আছে। এদিন গৌতম বুদ্ধের বাণীর প্রচার করা হয়ে থাকে।


বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি
ধর্মং শরণং গচ্ছামি
সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।


বুদ্ধের বাণী
* অনিয়ন্ত্রিত মন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে চিন্তাগুলোও তোমার দাসত্ব মেনে নেবে।
* প্রত্যেক অভিজ্ঞতা কিছু না কিছু শেখায়। প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা আমাদের ভুল থেকেই শিখি।
* শান্তি মনের ভীতর থেকে আসে, তাই সেটা ছাড়া শান্তির অনুসন্ধান করো না।
* জীবনের প্রথমেই ভুল হওয়া মানেই এই নয় এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাও।
* যে ব্যক্তি মানুষকে ভালোবাসে, সে দুঃখের দ্বারা ঘিরে থাকে এবং যে কাউকে ভালোবাসেনা, তার কোনো সংকট নেই।
* অতীত নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ো না, ভবিষ্যতের স্বপ্নে হারিয়ে যেও না, বর্তমানের দিকে মনোযোগ দাও, এটাই সুখী হওয়ার একমাত্র উপায়।
* লক্ষ্য বা গন্তব্যে পৌঁছানোর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেই যাত্রাকে ভালোভাবে পূরণ করা হয়ে থাকে।
* সন্দেহের অভ্যাস সবচেয়ে ক্ষতিকারক, এটা মানুষকে দূষিত করে । সন্দেহ একটা ভাল বন্ধুত্ব ও ভাল সম্পর্কে ধ্বংস করে দেয়।
* সব কিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, চিন্তাশীল হও। আগে ভাবো তুমি কী হতে চাও।
* জীবনে ব্যাথা থাকবেই, কিন্তু কষ্টকেই ভালোবাসতে শেখো।


বুদ্ধ পূর্ণিমা (ধর্মীয় কবিতা)
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শ্রীবুদ্ধ পূর্ণিমা আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
বৌদ্ধ মঠে উপনীত হয় ভক্তগণ।
জ্বলিছে প্রদীপ কত মঠে সারিসারি,
প্রার্থনায় রত সবে বৌদ্ধ নর-নারী।


সমবেত প্রার্থনায় শুদ্ধ হয় মন,
গৌতমবুদ্ধের বাণী করিয়া শ্রবণ।
অষ্টাঙ্গিক মার্গ আর পঞ্চশীল নীতি,
ব্যবহার, আচরণ, শিখিবার রীতি।


বুদ্ধ পূর্ণিমায় যেবা বিষ্ণু পূজা করে,
অনায়াসে শান্তি পায় পূজি ভক্তিভরে।
আজিকার দিনে যেবা চন্দ্রপূজা করে,
মহাসুখী সেই জন চিরদিন তরে।


বুদ্ধ পূর্ণিমায় দীনে কর অন্ন দান,
নাহি কেহ পূণ্যবান তাহার সমান।
বুদ্ধ পূর্ণিমার কাব্য অমৃত কথন,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।