দামিনীরা আজও কাঁদে। কাঁদে আকাশ, বাতাস, পশুপাখি, স্থাবর জঙ্গম, পর্বত-কন্দর, নদনদী।যুগ যুগ ধরে নারীজাতির প্রতি অবমাননা চলে আসছে পুরুষজাতির । কিন্তু তাতেও নারীর নারীত্ব কমে নি। বরং সেটা অপমান গোটা পুরুষজাতির।


নারী লেখাপড়া শিখেছেন, তিনি একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় বিমান সেবিকার চাকরিও করেন। তাঁকে বাঁচাতে বা লেখাপড়া শেখাতে সরকারি উদ্যোগ দরকার হয় নি, কিন্তু এখন সম্মান বাঁচাতে তাঁর সরকারি উদ্যোগ আজ একান্ত প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।

প্রতিদিন চোরাই মাল খোঁজার অছিলায় যে ভাবে তাদের নগ্ন করে তল্লাসি করা হচ্ছে তাতে তাঁর মনে হচ্ছে শুধু বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও না,সরকারের উচিত বেটির সম্মান রক্ষা কর এই স্লোগানকেও সামনে আনা। নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া তিনি স্পাইসজেটের বিমান সেবিকা,বললেন প্রতিদিন যে ভয়াবহ নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তাতে মনে হয় সরকার যদি মেয়েদের এই হেনস্তা দুর করতে এগিয়ে না আসে তা হলে এই কাজ আমরা আর বেশীদিন করতে পারবো না।


রবিবার কলকাতার একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে,স্পাইজেট বিমান সংস্থা তাঁদের বিমান সেবিকাদের বিমান নামার পর নিজস্ব আধিকারিকদের দিয়ে নগ্ন করে তল্লাশি করান।অভিযোগ তল্লাশির নামে শরীরের গোপন অঙ্গে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখা হয়, এমনকী কারোর ঋতুস্রাব চললে তাঁকে প্যাড খুলতেও বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ।স্পাইজেট কর্তৃপক্ষের দাবি নানা সময়ে যাত্রীদের মুল্যবান জিনিস পত্র খোয়া গেছে এরকম অভিযোগ পেয়েই বিমানসেবিকাদের মহিলা আধিকারিকদের দিয়ে তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।তবে কেউ যদি নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তবে বিমান সেবিকাদের অধিকাংশেরই অভিযোগ চরম হেনস্তা করা হচ্ছে তাদের।বিমান নামার পর তল্লাশির আগে কাউকে টয়লেটে পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয় না।এই অন্যায় হেনস্তার প্রতিবাদে শনিবার স্পাইজেটের বিমান সেবিকারা একজোট হয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করায় বিমান ছাড়তে ঘন্টা খানেক দেরি হয়।


স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই ঘটনায়  সরকার ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসবে না কেন? যে অভিযোগ উঠেছে তা মহিলাদের সম্মান হানি বিষয়ে গুরুতর, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও স্লোগানের পাশাপাশি বেটির সম্মান রক্ষায় একটু উদ্যোগ নিলে হয় না!সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে চুপ থেকে য়ায় কেন সেটাও একটা রহস্য। আসলে এই সব বিমান সংস্থাগুলো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে, এই সব অর্থবান বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আবার এ দেশের নেতা নেত্রীদের দৃঢ় যোগসাজস থাকে, সেই যোগাযোগে নানা প্রকার দেনা পাওনার হিসেব থাকে। আর সেই হিসেব ফিঁকে করে দেয় মহিলাদের সম্মানহানি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার তাগিদ। আর ঐ বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, কিংবা এ রাজ্যে কন্যাশ্রী, রুপশ্রী সবই তো ভো়ট দখলের কৌশল,ভোটের স্বার্থ বাদ দিয়ে গুটি কয়েক বিমান সেবিকার নারীত্বের লাঞ্ছনা নিয়ে এদেশের সরকার কতটুকুই ভাবছেন সেটার মূল্য মান করবে আজকের জনগণ।


মায়ের বস্ত্রহরণ, এ কোন সভ্যতায় আমরা…..???


জেগে উঠুক দেশ, জেগে উঠুক জাতি, মনে রাখুন, নারীর সম্মান, জাতির স্বাভিমান।
আসুন, সমগ্র নারীজাতির চোখের জল মুছিয়ে, তাদের উপযুক্ত সম্মান দিয়ে
মায়ের আসনে বসিয়ে পূজা করি। তাহলেই দেশ বাঁচবে, জাতি বাঁচবে।
সমাজ জীবন সুখের হবে। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!


দামিনীরা আজও কাঁদে
          লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


সারাদেশ জুড়ে দামিনীরা আজ বিষাদ ব্যথায় জাগে,
মুছে ফেল কালো আঁধার যামিনী সূর্য ওঠার আগে।
মরেছে দামিনী অভিমান নিয়ে ত্যজিয়া গেছে কায়া,
সেইদিন হতে নিখিলজগতে নেমেছে শোকের ছায়া।


মরেনি দামিনী আজও বেঁচে আছে সারা বিশ্বের মাঝে,
অপমানিতের দারুণ বেদনা আজ সবার হৃদয়ে বাজে।
রমণীকুলের চরম লাঞ্ছনা আর মাতৃ-জাতির অপমান,
দেশের মাটিতে লাঞ্ছিতা জননীরে দিতে হবে সম্মান।


কান পেতে শোন কাঁদে কারা ঐ দামিনী মায়ের দল,
রাতের আঁধারে মৃত্য-ফাঁদ পেতে কারা হাসে খলখল?
মোছ আঁখিজল আগুন জ্বলুক, দামিনীরা জাগে আজ,
অসুর সংহারে ছুটে এস নারী ভুলে যেতে হবে লাজ।


নারীর অপমান জাতির অপমান, বাঁচাও জাতির মান,
কবিতার পাতায় আমি শুধু গাই নারীজাতির জয়গান।