দীপান্বিতার আলো
দীপাবলী সংখ্যা
১৪২৫


——–:)(:———

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতাগুচ্ছ


——–:)(:———


ভূমিকা


দুর্গাপূজা ও লক্ষ্মীপূজার পর আসে কালীপূজা। কালীপূজার আনন্দে মেতে ওঠে সারা বিশ্ববাসী। শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকের তালে তালে বিশ্ববাসী শক্তির আরাধনায় রত হয়।দীপাবলীর আলোকে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় কোনায় অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোকে আলোকিত হয়ে উঠে। তাই এই দীপাবলীর উত্সবে আমরা সাজাই আমাদের গৃহপ্রাঙ্গণকে, ফটকা আর আতসবাজির শব্দে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়। এই পূণ্য শুভক্ষণে প্রকাশিত হল কবিতার আসর কাব্যমেলার পক্ষ থেকে দীপান্বিতার আলো -দীপাবলী সংখ্যা। এতে রয়েছে আমার কবিতাগুচ্ছ ও মহাকালীর আগমনী সহ স্তবগাথা। কবিতাগুলি সবার ভালো লাগলে আমার শ্রম সার্থক হবে। এই প্রত্যাশা নিয়ে সম্পাদকীয় কলম শেষ করছি।


সকল কবি ও লেখকগণকে শুভ কালীপূজার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। কালীপূজার আনন্দমুখর দিন ও শুভ দীপাবলীর দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক।


সকলের জন্য শুভ দীপাবলীর শুভকামনা রইল। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!            


——–:)(:———


বিনীত কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
স্থান- নারায়না বিহার, নতুন দিল্লী-১১০০২৮


——–:)(:———

  সূচীপত্র


১      ভোরের আলো
২     গাঁয়ের কবিতা
৩     প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরাগান্ধী
৪     দেবী মহাকালী আগমনী স্তুতি
৫     দেবী মহাকালীর পূজা
৬     ঊড্ডিশ তন্ত্রকথা, কালীকা দেবীর জন্ম রহস্য
৭     ভিন্ন ভিন্ন রূপে মহাকালী
৮    মহাকালী স্তবগাথা
৯     শুভ ভাইফোঁটা
১০    শীতের সকাল

——–:)(:———

ভোরের আলো

ভোরের আলো ছড়িয়ে দিলো
আলোক ভুবনময়,
পূব আকাশে অরুণ হাসে
প্রভাত হাওয়া বয়।

টগর বেলি জুঁই, শিউলি
ফুটে আছে ফুল বাগে,
তরুর শাখে পাখিরা ডাকে
শীতের আমেজ লাগে।

ঘাসের পরে শিশির ঝরে
সোনালী সকাল বেলা,
ধানের খেতে উঠলো মেতে
সোনা রোদ করে খেলা।


অজয় তীরে স্নিগ্ধ সমীরে
বটগাছ তলে বসি,
মধুর সুরে কেমন করে
বাজায় বাঁশি শশী।

মন মাতানো বাঁশির সুরে
পরাণ পাগল করে,
কলসী কাঁখে গাঁয়ের বধূ
জল নিয়ে যায় ঘরে।

দিঘির বাঁকে মরাল থাকে
পানকৌড়িরা আসে,
নীল আকাশে মেঘেরা ভাসে
ফড়িং লাফায় ঘাসে।

ডুবলে বেলা সাঁঝের তারা
ওঠে সন্ধ্যার আকাশে,
জোছনা রাতে তারার সাথে,
চাঁদ বুঝি তাই হাসে।


——–:)(:———


গাঁয়ের কবিতা


পূবের আকাশ ফরসা হোল
উঠলো রাঙা রবি,
ঊষার আলো মুছিয়ে কালো
আঁকে রঙিন ছবি।


সোনালি রোদ ঘাসের পরে
মুক্তো হয়ে ঝরে,
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি
চিত্ত ওঠে ভরে।


কেমন করে বাজায় বাঁশি
এ গাঁয়ের রাখাল,
সকাল হলে মাঠেতে চলে
নিয়ে গরুর পাল।


দিঘির বাঁকে মরাল থাকে
পানকৌড়িরা আসে,
নীল আকাশে মেঘেরা ভাসে
ফড়িং লাফায় ঘাসে।


ডুবলে বেলা সাঁঝের তারা
ওঠে সাঁঝ আকাশে,
জোছনা রাতে তারার সাথে,
চাঁদ খুশিতে হাসে।

——–:)(:———

প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজীব গান্ধীর মাতা,
জাতির জননী তিনি ভারতের ভাগ্য বিধাতা।
একত্রিশে অক্টোবরে ঊনিশশো চুরাশি সালে,
মৃত্যুসংবাদ ঘোষিত হলো সেদিন সন্ধ্যাকালে।

দেহরক্ষীদের গুলিতে যাঁর ঝাঁঝরা হলো বুক,
চিরবিদায় নিলেন তিনি সহি শত দুঃখ সুখ।
ফিরে এসো এসো ফিরে, কাঁদে ভারতবাসী,
তোমার লাগি সবাই কাঁদে, কাঁদে দিবানিশি।

দেশের তরে, জাতির তরে সারা জীবন ধরি,
ভারতবাসী সবাই কাঁদে তোমায় স্মরণ করি।
দেশকে গড়ার স্বপ্ন ছিল ইন্দিরা গান্ধীর মনে,
হারিয়ে গেল স্বপ্ন রঙিন কোন এক কুক্ষণে।

বুলেটের ঘায়ে বিদীর্ণ দেহ পড়ল ভারত ভূমে,
নামল দেশে শোকের ছায়া, কান্না আসে নেমে।


——–:)(:———

দেবী মহাকালী আগমনী স্তুতি


প্রণাম মন্ত্র:
কালী কালী মহাকালী কালিকে কালরাত্রিকে।
ধর্ম কাম প্রদে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।


দেবী মহাকালী আগমনী


দেবী আসছেন! বেজে ওঠে মহাশঙ্খ।
ঢাকের শব্দে, কাঁসরের ঝংকারে
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়।
চতুর্ভূজা মা কালী দেবীচণ্ডিকার আবির্ভাবে
তাঁর আগমনী বন্দনা গীতিতে
বিশ্ববাসীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়।

“কোথা তুমি শঙ্খ চক্র খড়্গ মহাস্ত্রধারিণী
কালী কপালিনী মা ছিন্নমস্তা!
তুমি ওঠো তুমি জাগো।
তুমি না জাগলে সন্তানকূল ঘুমিয়ে পড়বে।
সন্তানকে অভয় দাও মা আদ্যাশক্তি মহামায়া”।


তুমি শক্তি, তুমি ভক্তি!
তুমি কলাকাষ্ঠা, কালরূপে অবস্থিতা,
তোমার পূণ্য স্তবগাথায় দিকে দিকে
ধ্বনিত হোক মঙ্গলশঙ্খ, জ্বলে উঠুক
মঙ্গল দীপ, প্রজ্বলিত হুতাশনের
দেদীপ্যমান কিরণে ধরণীর কোণে কোণে
ঘনঘোর তমসা বিদুরিত হোক।
ধরণী হোক প্রাণময়ী। হে মা কল্যাণময়ী!
তোমার আগমনে সারা বিশ্বচরাচরে
বিশ্ববাসীর স্বীয় কল্যাণে বিশ্ববাসী
গেয়ে উঠুক–

তারা তুমি, তুমি মা কালী,
তুমি দুর্গা মহামায়া।
তুমি শক্তি, তুমি মা ভক্তি
তুমি কালরূপী ছায়া।



প্রণাম মন্ত্র:
কালী কালী মহাকালী কালিকে কালরাত্রিকে।
ধর্ম কাম প্রদে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:
ওঁ কালি কালি মহাকালি কালিকে
পাপহারিনি দেবী নারায়ণী নমস্তুতে,


এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||


মহিষাঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী
আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমস্তুতে ।
এষ পুস্পাঞ্জলিঃ শ্রীমদ্দদক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ।
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ মহাকালিকায়ৈ নমঃ


——–:)(:———

আর তো মাত্র কয়েকটা দিন তারপর আসছেন মা রণচণ্ডী কালী কপালিনী মা ছিন্নমস্তা। কবিতার আলো কবিতার আসরের ও সাহিত্য আসরের সকল কবি, লেখক, সাহিত্যিক, কাব্য-গীতিকার, চিত্রশিল্লী, আবৃত্তিকার ও সহৃদয় পাঠকবর্গকে জানাই শুভ দীপাবলীর আগাম শুভেচ্ছা। জয়গুরু!


——–:)(:———



দেবী মহাকালীর পূজা


অমাবস্যার ঘনান্ধকারে, গভীর নিশাকালে, দেবী মহাকালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবী তুষ্টা হয়ে উগ্রা মূর্তি ত্যাগ করে শান্ত সৌম্যা শ্যামা মূর্তিতে আবির্ভূতা হন। বিশ্বচরাচরে পূজিতা হন। কোথাও বা ছিন্নমস্তা কালীর পূজা করা হয়ে থাকে। উগ্রচণ্ডা কালীর দক্ষিণ হস্তে থাকে খড়্গ ও ত্রিশুল। তিনি ভীমা ভয়ংকরী মূর্তিতে রণচণ্ডিকা রূপে কালরাত্রিতে বিরাজমানা। শ্যামা কালীর বাম হস্তে থাকে খড়্গ ও নরমুণ্ড। বরাভয় দান করে তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করেন।
ভয়ার্ত বিশ্ববাসী আর্তকণ্ঠে বলে ওঠে—
দেবী কালী চণ্ডিকা, করালিনী মা ছিন্নমস্তা-
তুমি শক্তি, তুমি ভক্তি!
তুমি কলাকাষ্ঠা, কালরূপে অবস্থিতা,
তোমার পূণ্য স্তবগাথায় দিকে দিকে
ধ্বনিত হোক মঙ্গলশঙ্খ, জ্বলে উঠুক
মঙ্গল দীপ, প্রজ্বলিত হুতাশনের
দেদীপ্যমান কিরণে ধরণীর কোণে কোণে
ঘনঘোর তমসা বিদুরিত হোক।
ধরণী হোক প্রাণময়ী। হে মা কল্যাণময়ী!
তোমার আগমনে সারা বিশ্বচরাচরে
বিশ্ববাসীর স্বীয় কল্যাণে বিশ্ববাসী
গেয়ে উঠুক–

তারা তুমি, তুমি মা কালী,
তুমি দুর্গা মহামায়া।
তুমি শক্তি, তুমি মা ভক্তি
তুমি কালরূপী ছায়া।

প্রণাম মন্ত্র:
কালী কালী মহাকালী কালিকে কালরাত্রিকে।
ধর্ম কাম প্রদে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:

ওঁ কালি কালি মহাকালি কালিকে
পাপহারিনি দেবী নারায়ণী নমস্তুতে,
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
মহিষাঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী
আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমস্তুতে ।
এষ পুস্পাঞ্জলিঃ শ্রীমদ্দদক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ। এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ মহাকালিকায়ৈ নমঃ

——–:)(:———
  
ঊড্ডিশ তন্ত্রকথা, কালীকা দেবীর জন্ম রহস্য।


একবার হিমালয়ের সুকমল রমনীয় স্থানে মহাকাল ভৈরব এবং নন্দী সহ আরো অনেক শক্তি গণদেবতা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন। সহসা সেখানে চারিযুগে অমর ঋষি মার্কেণ্ডেয়। তাকে দেখে নন্দী এবং অন্যান্য দেবগণ অতীব আনন্দিত হলেন।


অতঃপর কথোপকথোনের এক সময় উন্মত্ত ভৈরব ঋষিকে দেবী কালীর জন্ম তত্ত্ব জানাতে অনুরোধ করলে, তিনি বলেন ব্রহ্মা প্রকৃতির সহায়তায় ১০ জন মানুষ সৃষ্টি করলেন যথা “”মরীচি, অত্রি, অজ্ঞিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রেতু, বশিষ্ঠ, দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। এরা প্রত্যেকেই সত্তঃগুণসম্পন্ন হওয়ায় কেউই বংশ বিস্তারে রাজী হলেন না।


তখন ব্রহ্মা দক্ষকে বেছে নেন এবং তার উপর রজোগুন প্রয়োগ করে প্রজা সৃষ্টির প্রেরণা জাগালেন। অতঃপর তিনি কন্যা লাভের জন্য তাকে মহাকালীর তপস্যা করতে বলেন। দক্ষ পিতার আদেশ মেনে ১০০০০ বছর তপস্যা করে মহাকালীর দেখা পান। কিন্তু তাকে দেখেই দক্ষ ভয়ে প্রকম্পিত হলেন। মহাকালীর উগ্র রূপ, করাল বদন, সুবিশাল অস্ত্র সমেত বাহু দেখে দক্ষের প্রাণ ভয়ে কাঁপতে লাগলো। দেবী তার ভীত অবস্থা দেখে পরম মাতৃরূপে তাকে দেখা দেন।


দক্ষ দেবীর এই রূপ দেখে স্বস্তি ফিরে পেলো এবং দেবী কন্যা রূপে পাবার আকাংক্ষা ব্যক্ত করলেন। দেবীও তাকে তার প্রথম কন্যা হয়ে জন্ম নেবার প্রতিশ্রুতি দেন। তখন দক্ষ দেবীকে তার সম্পর্কে জানতে চাইলেন।


দেবী বললেন: আমি পরম শক্তি, সৃষ্টির বাহক, পরিচালক, ধারক, তড়িত এবং লয়। এই সকল আমারি শক্তি। সৃষ্টির অন্তরালে আমি যোগমায়া রূপে কর্ম, জ্ঞান, শ্রদ্ধা, বুদ্ধি, বিবেক ও চেতনা দ্বারা মুক্তির এবং মোক্ষ প্রদানের শক্তি দাত্রী।  অপরদিকে পঞ্চ মহা তত্ত্ব, ও ছয় রিপু নিয়ন্ত্রণ করে জীবগনের জীবন রচনাকারক মহামায়া আমি। আমাতেই সমস্ত শক্তি একীভুত এবং আমার থেকেই বিভিন্ন ধারায় তা প্রবাহিত।


হে দক্ষ একমাত্র শক্তিদায়ীনি আমি। সমস্ত সৃষ্টগণ যে শক্তি লাভ করে তা আমিই দিয়ে থাকি। হে দক্ষ, ঈশ্বর ছাড়া যেমন সৃষ্টি হবে না ঠিক আমি শক্তি না দিলে সেই সৃষ্টি মুল্যহীন। এই কথা শুনে প্রজাপতি দক্ষ অতীব প্রীত হলেন। এবং বারংবার দেবীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্তব দ্বারা তুষ্ট করলেন।


অতপর দেবীর নিকট বিদায় নিয়ে সে সংসারে মনোযোগী হলো। দক্ষের মোট ২৮ টি কন্যা হয় এবং প্রথম কন্যাটি ছিলেন দেবী। তিনি সতী নামে জন্ম নেন এবং শিবেরস্ত্রী হন। অপর কন্যাদের বিয়ে হয় চন্দ্রের সাথে এবং তারা যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন নক্ষত্র হয়ে চাঁদের পাশে অবস্থান করবে। ঋষির মুখ থেকে দেবীর জন্ম তত্ত্ব শুনে সকলেই খুব আনন্দ পেলেন এবং এই তত্ত্ব তাদেরকে জানানোর জন্য ঋষিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালেন।
ঊড্ডিশ তন্ত্রকথা, কালীকা দেবীর জন্ম রহস্য সমাপ্ত।

——–:)(:———

ভিন্ন ভিন্ন রূপে মহাকালী


দেবী কালীকার প্রচলিত যে রূপটি পূজিত হয়, সেইরূপটির নাম দক্ষিণাকালী। বলা হয়, এই রূপটি এনেছেন তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। এটি তাঁরই মানসচক্ষে পাওয়া মূর্তি। এ বার তাঁর কল্পিত মূর্তির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা কী আছে বা তার তাৎপর্য কী, সেটা দেখে নেওয়া যাক।


(১) কালী শব্দটির ব্যাখ্যা:
‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ ‘কালী’। এই শব্দের অর্থ ‘কালো’ বা ‘ঘোর বর্ণ’।


(২) দক্ষিণাকালী কেন বলা হয়:
শাস্ত্রকারেরা বলছেন, দক্ষিণদিকের অধিপতি যম কালীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করেছিলেন, সে জন্য তাঁর নাম দক্ষিণাকালী।


(৩) কালীর পদতলে শিব:
এখানে মা কালী শবরূপী শিবের উপর দণ্ডায়মান। শিব হচ্ছেন স্থির বা নীরব। আর কালী হচ্ছেন ‘গতির প্রতীক’। এখানে শিব দেখতে সাদা আর মায়ের রূপ কালো বা ঘন নীল। সাধারণত যাঁরা যোগী বা সাধক, তাঁরা সাধন কালের ‘কূটস্থ’ দর্শনকালে শুভ্র রং বেষ্টিত কালো দেখে থাকেন।


(৪) দেবীকে ঘন কালো দেখনোর কারণ কী:
এখানে কালো মানে বর্ণাতীত। সকলেই জানেন কালোর মধ্যে সব বর্ণ মিলে যায়। কালো জগতের আলো। সাধকেরা দেবীকে অনেক সময় গাঢ় নীল বর্ণের দেখে থাকেন, কারণ তিনি গাঢ় নীল আকাশের মতোই অনন্ত অসীম।


(৫) তিনি মুক্তকেশী:
তাঁর মাথার ঘন কালো চুল বাঁধা অবস্থায় থাকে না। যোগশাস্ত্রে মুক্তকেশ বৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি চিরবৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা লৌকিক বা জাগতিক সকল বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন।


(৬) দেবীকে ত্রিনয়নী দেখানো হয়েছে কেন:
ত্রিনয়ন হচ্ছে সূর্য, চন্দ্র ও সমস্ত রকম অগ্নির প্রতীক। তিনি আমাদের ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’ অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোতে বা জ্যোতিতে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আবার সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের অধিপতি। অর্থাত্ তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও অবস্থান করবেন।


(৭) দেবী সাদা দাঁত দ্বারা রক্তবর্ণ জিহ্বাকে কামড়ে ধরেছেন:
এখানে লাল রং রজো গুণের প্রতীক আর সাদা সত্ত্ব গুণের। দাঁতের দ্বারা জিহ্বা স্থির রেখে বলতে চাওয়া হয়েছে ত্যাগের দ্বারা ভোগকে জয় করা।


(৮) দেবীর মুণ্ডমালিনীর ব্যাখ্যা কী:
দেবীর গলায় ৫০টি পিশাচের কাটা মুণ্ডের মালা বা হার। প্রকৃতি অর্থে ৫০টি কাটা মুণ্ড ৫০টি অক্ষর, ১৪টি স্বরবর্ণ আর ৩৬টি ব্যঞ্জন বর্ণ। এখানে প্রতিটি বর্ণ মানে প্রতিটি বীজমন্ত্র। শব্দ ব্রহ্ম। তাই এখানে অক্ষর রূপ বীজমন্ত্রগুলি শক্তির উৎস। দেবী এখানে স্বয়ং শব্দব্রহ্মরূপিণী।


(৯) দেবীর কোমরবন্ধ মানুষের কাটা রক্তঝরা হাত দিয়ে তৈরির তাৎপর্য:
এখানে কাটা হাত কর্ম বা কর্মফলকে বোঝানো হয়েছে। তাই কাটা হাত কর্মের প্রতীক। মানুষের মৃত্যুর পর জীবাত্মা দেবীর অঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে থাকে, তিনি আবার সমস্ত কর্মের ফলদাত্রী। পরবর্তী জন্মে তাদের কর্মফল অনুসারে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন গর্ভে জন্মগ্রহণ করে থাকে।


(১০) দেবী নগ্নিকা বা দিগম্বরীর তাৎপর্য:
এক দিকে দেবী বিশ্বমধ্যে, আবার অন্য দিকে তিনি বিশ্বব্যাপী ও বিশ্বাতীত। যাঁর স্বরূপ এমন, তাঁকে কি কোনও বস্ত্র দিয়ে আবরিত করা সম্ভব! কার কী এমন সাধ্য আছে তাঁর ওই রকম বস্ত্র তৈরী করার? তাই তিনি ঋষি কল্পনায় দিগম্বরী বা নগ্নিকা।

——–:)(:———



মহাকালী স্তবগাথা


জ্বলিছে আলোকমালা চারিদিকে আজি,
মহাশব্দে চৌদিকে পুড়িছে আতসবাজি।
বাজিছে কাঁসর ঘণ্টা জয়-ঢাক বাজে,
শ্মশানমাঝে মন্দিরে কালী মা বিরাজে।


দেবীর সম্মুখে হেরি ফলমূল মালা,
পঞ্চগব্য কোষাকুষি প্রসাদের থালা।
শুভক্ষণে দেবীপূজা করে ভক্তিভরে,
পুরোহিত শুদ্ধ চিত্তে মন্ত্র পাঠ করে।


মহা রাত্রি কাল-রূপা নৃমুণ্ড-মালিনী,
ছিন্নমস্তা তুমি কালী করাল বদনী।
উগ্রচণ্ডা মহাকালী তুমি মা শঙ্করী,
অমাবস্যা শুভক্ষণে ঘোর বিভাবরী।


নিশিকালে কালীপূজা বিধিমতে হয়,
যূপ-কাষ্ঠে পশু বধ শাস্ত্র মতে কয়।
হোম যজ্ঞ পাঁঠাবলি, শাস্ত্রের লিখন,
কালীর বন্দনা গাহে ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ।


——–:)(:———


শুভ ভাইফোঁটা উত্সব

আজ শুভ ভাইফোঁটা উত্সব। এই দিনটি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবেও পরিচিত। এই দিনটিতে ভাইবোনের মিলনোৎসব পালিত হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ভাই-বোন উভয়েই উভয়ের মঙ্গল কামনা করে থাকে। বাঙালিদের কাছে এই দিনটি ‘ভাইফোঁটা’ হিসেবেই অধিক পরিচিত। কালীপুজোর একদিন পর অর্থাৎ, শুক্ল দ্বিতীয়া বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সকাল থেকেই নানা আয়োজনে প্রস্তুতি চলে ভাইফোঁটার। নানা মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে, উপহারের আদান-প্রদানে এই দিনটি পালিত হয়।


পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়, নরকাসুরকে বধ করে এইদিন বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সুভদ্রা দাদাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ফুল-মিষ্টান্ন দিয়ে। আরতিও করেছিলেন। আর একটি বেশি প্রচলিত কাহিনী হল, যমরাজ গিয়েছিলেন বোন যমুনার কাছে। যমুনা বা যমীও এইভাবে অগ্রজকে বরণ করে নিয়েছিলেন। সেই থেকে সহোদরের মঙ্গলকামনায় প্রবর্তিত ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।


আর ভাইফোঁটা এমন এক উত্সিব যেখানে ব্রাহ্মণ পুজারীর দরকার হয় না। তবু বিশেষ না হলেও এর জন্যেও আছে কিছু রীতি লৌকিকতা। এইদিন বরণডালা সাজিয়ে ভাইকে আরতি করা হয়। এক এক বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এক এক রকম জিনিস থাকে সেই ডালায়।তবে প্রদীপ ধূপকাঠি পান সুপারি হরিতকি ইত্যাদি দ্রব্যই সাধারণত থাকে।


আবার যাঁরা কোনও কারণে ভাইফোঁটা দিতে পারছেন না তাঁরা দেওয়ালে তিলক বা ফোঁটা দেন। অনেক জায়গায় আবার আকাশের চাঁদের উদ্দেশেও ফোঁটা উত্সরর্গ করার রীতি আছে, ভাইয়ের কল্যাণ প্রার্থনা করে।


——–:)(:———

শুভ ভাইফোঁটা


ঘরে ঘরে ভাইফোঁটা বিধিমতে হয়,
শুভদিনে ফোঁটা দিলে কাটে যমভয়।
ভ্রাতৃভালে দেয় ফোঁটা ভগিনীসকল,
বিধাতার কাছে চাহে ভ্রাতার মঙ্গল।


ধান্য দূর্বা ধূপ দীপ, সুগন্ধি চন্দন,
সুমিষ্টান্ন দ্রব্য কত করে আয়োজন।
উপহার বিনিময় ভাই-বোন মিলে,
আয়ুবৃদ্ধি হয় বোন ভাইফোঁটা দিলে।


ধান্য দূর্বা শিরে দেয় কপালে চন্দন,
ভাইবোনে ওঠে গড়ে প্রীতির বন্ধন।
ফল মূল সুমিষ্টান্ন আর গুঁয়াপান,
রীতি অনুসারে হয় করিতে প্রদান।


বর্ষেবর্ষে ভাইফোঁটা ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়ায়,
লিখিল লক্ষ্মণ কবি, তাঁর কবিতায়।


——–:)(:———


শীতের সকাল


শীতের পরশ             লেগেছে হেথায়
        অজয় নদীর ধারে,
অরুণ তপন              রাঙিয়ে ভুবন
       হাসিছে আকাশ পারে।

শীতের সকাল            সকলে বেহাল
       বহিছে হু হু হাওয়া,
নদী কিনারায়             বটের ছায়ায়
      বাউলের গান গাওয়া।

ডাহুক ডাহুকী           করে ডাকাডাকি
       ধবল বলাকা আসে,
হেরি সারিসারি          চলে গোরুগাড়ি
        হিম পড়ে কচি ঘাসে।


দূরে শালবনে           আপনার মনে
         রাখাল বাজায় বাঁশি,
রাঙাপথ ধরি            আসে পথচারী
        মাঠে ধান কাটে চাষী।

শীতের সকালে         আসে দলেদলে
         হাঁটুরে যাত্রীর দল,
অজয় নদীতে          তরী বাঁধা ঘাটে
        সুশীতল নদীজল।

আজ রবিবারে          অজয়ের পারে
         বসেছে সকালে হাট,
উঠে কোলাহল           হাঁকে অবিরল
        অজয় নদীর ঘাট।


——–:)(:———


সকল কবি ও লেখকগণকে শুভ দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!