কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- নবম পর্ব
তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


কথিত আছে, রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের এক অভিশাপ ছিল। তার কুষ্টিতে লেখা ছিল, বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। তার স্ত্রীও জানত সেই কথা। তাই সেই অভিশপ্ত দিনে সে তার স্বামীকে সে দিন ঘুমোতে দেয়নি। শোয়ার ঘরের বাইরে সে সমস্ত গয়না ও সোনা-রূপার মুদ্রা জড়ো করে রাখে। সেই সঙ্গে সারা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। স্বামীকে জাগিয়ে রাখতে সে সারারাত তাকে গল্প শোনায়, গান শোনায়। পরের দিন যখন মৃত্যুর দেবতা যম তাদের ঘরের দরজায় আসে, আলো আর গয়নার জৌলুসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজপুত্রের শোয়ার ঘর পর্যন্ত তিনি পৌঁছান ঠিকই। কিন্তু সোনার উপর বসে গল্প আর গান শুনেই তাঁর সময় কেটে যায়। সকালে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান তিনি। রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে যায়। পরদিন সেই আনন্দে ধনতেরাস পালন শুরু হয়।


ধনতেরাসের পরের দিন নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। দীপাবলীর আগের দিন এটি। একে ছোটি দিওয়ালি-ও বলে।
ভারতে ধনতেরাস উত্সব উদযাপিত হয় সোনা, রুপো বা বাসন কিনে। একে সৌভাগ্যের লক্ষণ বলা হয়। নতুন জামাকাপড়ও এ সময় কেনে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ।


ধনত্রয়োদশী বা ধন্বন্তরী-ত্রয়োদশী, সংক্ষেপে ধনতেরাস। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে হয় ধনতেরাস৷ ধনতেরাসের শুভলগ্নে সমৃদ্ধি কামনায় গৃহস্থ বাড়িতে কেনা হয় মূল্যবান ধাতু৷ বলা হয় যে, আজকের দিনে মূল্যবান ধাতুর জৌলুসে আকৃষ্ট হয়ে মা লক্ষ্মী স্বয়ং আসেন গৃহস্থের বাড়িতে।
জেনে নেওয়া যাক ত্রয়োদশীর নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা) মতে:


বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
ত্রয়োদশী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ৭ কার্তিক ১৪২৬, শুক্রবার।
ইংরেজি তারিখ: ২৫/১০/২০১৯।
সময়: সন্ধ্যা ঘ ৭/৮ মিনিট থেকে।
ত্রয়োদশী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ৮ কার্তিক ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ২৬/১০/২০১৯।
সময়: দুপুর ঘ ৩/৪৭ মিনিট পর্যন্ত।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
ত্রয়োদশী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ৭ কার্তিক ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ২৫/১০/২০১৯।
সময়: বিকাল ঘ ৪/২৪ মিনিট থেকে।
ত্রয়োদশী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ৮ কার্তিক ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২৬/১০/২০১৯।
সময়: দুপুর ঘ ০২/০১ মিনিট পর্যন্ত।


ধনতেরাসের কেনাকাটা করার শুভক্ষণ:
বাংলা তারিখ: ৭ কার্তিক ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ২৫/১০/২০১৯।


শুভক্ষণ: সন্ধ্যা ঘ ৭/৮ মিনিট থেকে রাত ঘ ৮/২২ মিনিট পর্যন্ত কেনাকাটা করার শুভ সময়। এই সময়ের মধ্যে পবিত্র কিছু জিনিস কিনলে লক্ষ্মীর আগমন ঘটে বলে মনে করা হয়।


দীপাবলিতে উপহার দেবার রেওয়াজ আছে কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা অন্যকে এই দিনে উপহার হিসাবে দিতে নেই । এই দিন কালো বস্তু কিনতে নেই বা কাউকে উপহার দিতে নেই । কাউকে ধনতেরাস বা দীপাবলিতে কেনা জিনিস উপহারে দিতে নেই । অন্তত ১ দিন আগে হলেও কিনতে হয় । দীপাবলির দিন কখনো জুতো চপ্পল বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রাখতে নেই । এটা প্রচন্ড অশুভ । পুরানো ঝাঁটা ফেলে দিতে হয় ।


ধনতেরাসের দিন আয়ুর্বেদের দেবতা ধন্বন্তরীর জন্ম । আজকের দিনে ১৩টা প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে । মানা হয় ধনতেরাসের দিন প্রদীপের মধ্যে একটা লঙ রেখে এই দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করলে সারা বছর নীরোগ থাকার আশীর্বাদ পাওয়া যায় । ধনতেরাসের দিন সরষের তেলের প্রদীপে একটা গোটা লং রেখে ভগবান বজরংবলীর সামনে রাখলে যত নেগেটিভ এনার্জি আছে সব দূর হবে । ওষুধ সব ঘরে কাজে লাগে । মান্যতা আছে ধনতেরাসের দিন কেনা ওষুধের কাজ অনেক গুণ বেড়ে যায় ।


ধনতেরাসের দিনে লং এর একটা ছোট উপায় ধন সম্পদকে করতে পারে চিরস্থায়ী । ৫টা গোটা লং একটা লাল কাপড়ে বেঁধে মা লক্ষীর সামনে রেখে পুজো করে পুটুলিতে রেখে দিতে হয় আলমারিতে । এটা করতে হয় গোপনে ।


মা আসছেন। শ্যামা মায়ের আগমনে দিকে দিকে কালো অন্ধকার মুছে যাক। দীপাবলীর উজ্জ্বল আলোকমালায় ভরে উঠুক চতুর্দিক। আজ ধন তেরাস দিবস (ধন- ত্রয়োদশ দিবস) তাই আজ সকাল থেকেই চলছে সোনা, রূপো বা বাসন কেনার প্রস্তুতি। কবিতা আসরের সবাইকে জানাই শুভ ধনতেরাস বা ধন ত্রয়োদশীর শুভেচ্ছা। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!


কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-৯ (শ্যামা সংগীত)
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে,
চরণ ছাড়া করো না মা হে জগন্মাতা মহামায়ে!
জবাফুলের মালা গলায়,
জবাফুল দেবো রাঙাপায়,
অভয়চরণে রেখো আমায় দিওনা মোরে ফিরায়ে।
জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে।


জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে,
চরণ ছাড়া করো না মা হে জগন্মাতা মহামায়ে!
ডাকি মাকে জয়মা তারা,
কেঁদে কেঁদে দিশাহারা,
তবুও মা দেয় না সাড়া কাঁদি আমি অশ্রু ঝরায়ে।
জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে।


জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে,
চরণ ছাড়া করো না মা হে জগন্মাতা মহামায়ে!
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কয়,
হয়েছে মার পূজার সময়,
মায়ের নামে হয়ে অভয় থাকো মায়ের পদছায়ে।
জয়কালী জয়তারা বলে মন সঁপেছি রাঙা পায়ে।