কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- ষষ্ঠ পর্ব
তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



পূজো এসে গেল। সামনেই কালীপূজা, তাই জোরকদমে চলছে জোড়া কালী নির্মাণের কাজ। পুজোর সময় চার রাত্রি ব্যাপী জলসার আসর বসে, যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হয়। যাত্রার পোস্টার সাঁটা চতুর্দিকে। নিকটবর্তী পলাশ বন গ্রামের শান্তি সূত্রধর তৈরি করছেন মূর্তি, বংশপরম্পরায় উনাদের পরিবার এই কাজ করে আসছেন। আর আছেন প্রধান পুরোহিত মনসারাম ভট্টাচার্য, গ্রামবাসী সুব্রত নায়েক, সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রকান্ত এবং আরো অনেকেই। ওঁদের কাছ থেকে শোনা গেল এক অদ্ভুত ঘটনা।


রাজা চিত্র সেন নাকি বর্ধমান ছেড়ে যাবার আগে, তাঁর প্রজাদের কানে দিয়ে গেছিলেন নতুন মন্ত্র। কি সেই মন্ত্র- একমনে মা কালীকে ডাকো, মায়ের স্মরণ নাও, মায়ের পুজো কর, দেখবে মা-ই সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। তখনকার গ্রামটি ছিল বর্তমান গ্রামটি থেকে ২ কিমি দূরে, নাম হচ্ছে চকরামবাটি। প্রজারা মায়ের নাম স্মরণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছে কালী পুজোর।


তারা জানতেও পারেনি, নবাব আলীবর্দী দুর্গাপুজোর সময় ১৭৪২ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর, গভীর রাতে কাটোয়ায় মারাঠা শিবির আক্রমণ করেন, প্রাণভয়ে বর্গীরা বর্ধমান ত্যাগ করে মেদিনীপুর পলায়ন করে। প্রজারা বিশ্বাস করে থাকেন মা কালীর কৃপা ছাড়া বর্গীদের এভাবে বর্ধমান ছাড়া করা যেত না।


এর পরের ঘটনা অনেক পরের, মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবের (১৮৮১-১৯৪১) সময়ের। সুপন্ডিত ও সুলেখক মহারাজ চকরামবাটি গ্রামের কালী পুজোর গল্প নিশ্চয়ই অবগত ছিলেন। তিনিই এই গ্রামে কালীমন্দির নির্মাণে দেবোত্তর জমি দিয়ে যান। পুরোহিত থেকে ঢাকি, মূর্তি নির্মাতা সূত্রধর থেকে ভোগ রান্নার অধিকারী কুম্ভকার ,সবাইকেই মন্দিরের পুজোর সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। তবে এটি ঠিক কোন সালের ঘটনা, এই বিষয়ে ইনারা ঠিকমতন অবহিত নন।


প্রথম পুরোহিত ছিলেন বর্তমান পুরোহিত মনসারাম ভট্টাচার্যের পূর্বপুরুষ প্রভুরাম ভট্টাচার্য বিদ্যাবাগীস মহাশয়। পরে অবশ্য চট্টোপাধ্যায় পদবীর এক ব্রাহ্মণকেও পুজোর অধিকার দেওয়া হয়। তাই বর্তমানে মূল মন্দিরের ১৬ আনার ঠাকুরকে বলা হয়- বড়মা আর পাশের ছোট মন্দিরের চট্টোপাধ্যায়দের দ্বারা পূজিত ঠাকুরের নাম – ছোটমা। অবশ্য দুটিই একেবারে একরকম মূর্তি , শান্তিবাবুই দুটি মূর্তিকে নির্মাণ করছেন।


মূর্তি বিসর্জন হয়ে গেলে মায়ের, শোলার নির্মিত একটি মুখমন্ডল সারা বছর মন্দিরের বেদিতে অধিষ্ঠান করে।
এখানকার কালী পুজোতে আখ এবং ছাগ বলি হয়। পুজোর অন্নভোগ রান্না করতে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া থানার অন্তর্গত নিমড়া গ্রাম থেকে কুমোররা আসেন নতুন হাঁড়ি, কলসী ইত্যাদি নিয়ে। ওরাই অন্নভোগ রান্নার অধিকারী। এই ব্যবস্থাটিও মহারাজের করা।


এই অন্নভোগ পেতে দূর দূরান্ত থেকে কমপক্ষে হাজার পাঁচেক ভক্তের সমাগম হয়। মায়ের ফলপ্রসাদও প্রায় সম সংখ্যক মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।


মা কালীর স্তবগাথা


ওঁ শবারূঢ়াং মহাভীমাং ঘোরদংষ্ট্রাং বরপ্রদাম্‌।
হাস্যযুক্তাং ত্রিনেভ্রাঞ্চ কপালকর্ত্তৃকাকরাম্‌।।
মুক্তকেশীং লোলজিহ্বাং পিবন্তীং রুধিরং মুহুঃ।
চতুর্ব্বাহুযুতাং দেবীং বরাভয়করাং স্মরেৎ।


আসুন, আমরা সকলেই তারা মায়ের শক্তির আরাধনায় পূজোর আনন্দে মেতে উঠি। মাত্র আর কয়েক দিন বাকি। শ্যামা মায়ের আগমনে দিকে দিকে কালো অন্ধকার মুছে যাক। দীপাবলীর উজ্জ্বল আলোকমালায় ভরে উঠুক চতুর্দিক। তাই দিকে দিকে চলছে পূজার প্রস্তুতি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!


কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-৬ (শ্যামা সংগীত)
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জয়কালী বলে ডাকলে পরে পাবে মায়ের দরশন,
ভক্তিপুষ্প জবাফুলে পূজা করো তুমি মায়ের চরণ।
মহাকালী আদ্যাশক্তি,
মাকে কর শ্রদ্ধাভক্তি,
তারা নামে মোক্ষপ্রাপ্তি অভয় মন্ত্র জপ সর্বক্ষণ,
কালী কালী মহাকালী বলো একবার আমার মন।
জয়কালী বলে ডাকলে পরে……


জয়কালী বলে ডাকলে পরে পাবে মায়ের দরশন,
ভক্তিপুষ্প জবাফুলে পূজা করো তুমি মায়ের চরণ।
জয়কালী জয়তারা বলে
মায়ের পূজা নয়ন জলে
অধম সন্তান লক্ষ্মণ বলে রাঙাপায়ে সঁপেছি মন।
ভক্তিভরে ডাকলে মাকে তবেই হবে ইচ্ছাপূরণ।
জয়কালী বলে ডাকলে পরে……


জয়কালী বলে ডাকলে পরে পাবে মায়ের দরশন,
ভক্তিপুষ্প জবাফুলে পূজা করো তুমি মায়ের চরণ।
একবার জয় কালী বলে…….. মাগো মা……মা……
জয়কালী বলে ডাকলে পরে……