কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- সপ্তম পর্ব
তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বাংলায় আশ্বিনের ঘোর অমাবস্যায় কালীপুজোর প্রচলন করেন নবদ্বীপের সেই সময়ের প্রখ্যাত তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তিনি যে পদ্ধতিতে পুজোর পৌরোহিত্য করতেন, সেই পদ্ধতিকে বলা হত ‘আগমবাগীশ পুজো পদ্ধতি। কথিত আছে শ্যামা মায়ের পরম সাধক রামপ্রসাদ সেন ও এই আগমবাগীশ পুজো পদ্ধতিতে তাঁর আরাধনা করতেন। প্রসঙ্গত রামপ্রসাদ সেনের লিখিত—


“আর কাজ কি আমার কাশী?
মায়ের পদতলে পড়ে আছে, গয়া গঙ্গা বারাণসী
হৃদকমলে ধ্যানকালে, আনন্দসাগরে ভাসি
একে কালিপদ কোকনদ, তীর্থ রাশি রাশি”


কালী তথা ভবতারিণীর পরম উসাপক শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব শাক্ত মন্ত্রে দীক্ষালাভ করেছিলেন। কেনারাম ভট্টাচার্যের কাছে। পরবর্তীতে রানি রাসমণির আনুকূল্যে ও অর্থে সৃষ্ট দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির পূজারি রূপে সাধনজীবন শুরু করেন। দেবী ভবতারিণীর পাষাণপ্রতিমাকে ‘মা মা’ বলে আপন খেয়ালে তিনি কথা বলতেন। নিজ কণ্ঠে গান শোনাতেন। কখনও তাঁর ‘ভাব-সমাধি’ হত। রামকৃষ্ণের সেই ভাবসমাধি মুহূর্তে মনে করা হত তিনি স্বয়ং মা-কে প্রত্যক্ষ করছেন। রামকৃষ্ণের অলৌকিক কাণ্ডকারখানা ও তাঁর ভাবসমাধি জনশ্রুতি সৃষ্টি করেছিল।


শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ গ্রন্থে শ্রীম জানিয়েছেন, ঠাকুর বলতেন,
“এমনি মহামায়ার মায়া রেখেছ কী কুহক করে
ব্রহ্মা বিষ্ণু অচৈতন্য জীবে কি তা জানতে পারে।”


সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য এই কালীপুজোর দিনটিতে ‘দেব দিওয়ালি’ তথা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। সমগ্র বিশ্বলোক ‘লক্ষ্মী পঞ্চায়তন’ দ্বারা প্রজ্জ্বোলোমানা। এই ‘লক্ষ্মী পঞ্চায়তন হল—‘মহালক্ষ্মী’ (স্বর্গীয় শক্তি), ‘বিষ্ণুলক্ষ্মী’ (সন্তোষ ও সুখ), ‘ইন্দ্রলক্ষ্মী’ (ঐশ্বর্য ও ধনসম্পদ, ‘গজেন্দ্রলক্ষ্মী’ (প্রাচুর্য), ‘কুবেরলক্ষ্মী’ (সমৃদ্ধ)। পুরাণে বর্ণিত এই লক্ষ্মী স্বর্গলোকে ‘সম্পদলক্ষ্মী’ ও সৌভাগ্য লক্ষ্মী’ রূপে বিরাজ করেন। লক্ষ্মীর সঙ্গে গণেশ মূর্তিও অঞ্চলভেদে পূজিত হন। লক্ষ্মী ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী এবং গণেশ হলেন বিঘ্নবিনাশী।


দ্বীপান্বিতার দিন ঘরে মহালক্ষ্মীর আবাহন করা হয়। কার্তিকের আকাশে জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ। ঘরগৃহস্থালি সজ্জিত হয় আলোকসজ্জায়। কথিত আছে, মহালয়ার তর্পণের মাধ্যমে শ্রাদ্ধ গ্রহণের জন্য যে পিতৃপুরুষরা যমলোক থেকে মর্তে এসেছিলেন তাঁদের ফিরে যাওয়ার পথ দেখানোর জন্যই ‘আকাশপ্রদীপ’ জ্বালানো হয়। এই দ্বীপান্বিতা উত্‌সবকে দীপাবলি, দীপলিকা, দেওয়ালি, মুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা, যক্ষরাত্রি প্রভৃতি নামেও ভূষিত করা হয়। আলোকমালায় সজ্জিত থাকে সমস্ত চরাচর। আতসবাজির জৌলুসে নিশিযাপন বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।


পুজোমণ্ডপে ধ্বনিত হয় শ্বাশ্বত মাতৃমন্ত্র


“জয়ন্তী মঙ্গলকালী ভদ্রকালী কপালিনী
দুর্গা শিবা ক্ষমাধাত্রী স্বাহাস্বধা নমোহ
ওঁ কালীকালীমহাকালী কালিকে পরমেশ্বরী
সর্বনন্দকরে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।”


আসুন, আমরা সকলেই তারা মায়ের শক্তির আরাধনায় পূজোর আনন্দে মেতে উঠি। মাত্র আর কটা দিন বাকি। মা আসছেন। শ্যামা মায়ের আগমনে দিকে দিকে কালো অন্ধকার মুছে যাক। দীপাবলীর উজ্জ্বল আলোকমালায় ভরে উঠুক চতুর্দিক। তাই দিকে দিকে চলছে পূজার প্রস্তুতি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!


কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-৭ (শ্যামা সংগীত)
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে,
নয়ন মেলে দেখো চেয়ে মা এসেছেন ধরার পরে।
মায়ের গলায় জবার মালা,
সাজিয়েছি মার বরণডালা,
রেখেছি প্রসাদের থালা, মাকে পূজবো কেমন করে।
জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে।


জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে,
নয়ন মেলে দেখো চেয়ে মা এসেছেন ধরার পরে।
মায়ের নামে মায়ের গানে,
পুলক জাগে প্রাণে প্রাণে,
সঁপিলাম মন তাঁর চরণে করো মা কৃপা কবিবরে।
জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে।


জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে,
নয়ন মেলে দেখো চেয়ে মা এসেছেন ধরার পরে।
ঘৃত মধু আর গঙ্গাজলে
জবাফুল আর বিল্বদলে
কবি লক্ষ্মণ কেঁদে বলে, পূজা করো মাকে ভক্তিভরে।
জয়তারা বলে ডাকলে পরে দুই নয়নে অশ্রু ঝরে।