আমার গাঁয়ের মাটি ......আমার পবিত্র স্বর্গধাম
মা মাটি মানুষের কবিতা (প্রথম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
মানুষ আমার আপন কেহ নয় পর।
সকল গাঁয়ের সেরা আমাদের গ্রাম,
এ গাঁয়ের মাটি মোর সুখ স্বর্গধাম।

ছোট গাঁয়ে ছোট ঘর মাটির উঠান,
আম্রশাখে কোকিলের শুনি কুহুতান।
সকালে সোনার রবি ছড়ায় কিরণ,
তরুশাখে বিহগের মধুর মিলন।

জামগাছ তালগাছ নারিকেল আর,
খেজুর সুপারি গাছ হরেক প্রকার।
রাঙাপথে দুই ধারে সবুজের ছায়া,
গাঁয়ে আছে ভালবাসা মমতা ও মায়া।

গ্রাম সীমানায় আছে অজয় তটিনী,
অবিরাম কল কল বহে স্রোতস্বিনী।
অজয় নদীর বাঁকে আছে শালবন,
মা মাটি মানুষ কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ।

আমার গাঁয়ের মাটি আমার পবিত্র স্বর্গধাম: কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর চোখে মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির কবিতা

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর 'মা মাটি মানুষের কবিতা' সিরিজের প্রথম পর্ব যেন এক টুকরো শান্ত, স্নিগ্ধ গ্রামের প্রতিচ্ছবি। "আমার গাঁয়ের মাটি আমার পবিত্র স্বর্গধাম" - এই পংক্তিটিই কবিতার মূল সুর বেঁধে দেয়। কবির হৃদয়ে গাঁয়ের মাটি যেন পবিত্র স্বর্গ, যেখানে তিনি খুঁজে পান অপার শান্তি ও সুখ।

কবিতাটি শুরু হয় একটি ছোট গ্রামের সাধারণ চিত্র দিয়ে - "আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, মানুষ আমার আপন কেহ নয় পর।" এই সরল স্বীকারোক্তি গ্রামের মানুষের মধ্যেকার আন্তরিকতা ও ভালোবাসার ইঙ্গিত দেয়। কবি বলছেন, যদিও রক্তের সম্পর্ক নেই, তবুও গ্রামের মানুষ আপন, পর নয়। এই আপনত্বের বন্ধনই কবিতাটিকে বিশেষ করে তোলে।

গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে। "ছোট গাঁয়ে ছোট ঘর মাটির উঠান, আম্রশাখে কোকিলের শুনি কুহুতান" - এই চিত্রকল্পটি যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে। মাটির উঠোন, আমের ডালে কোকিলের ডাক - এই চিরায়ত দৃশ্যগুলো গ্রামবাংলার রূপকে আরও মনোরম করে তোলে। সকালের সূর্যের আলো, পাখির কলতান, সবকিছু মিলেমিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

গাছপালা আর সবুজের সমারোহ গ্রামটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। জাম, তাল, নারিকেল, খেজুর, সুপারি গাছের সারি যেন গ্রামের অলঙ্কার। "রাঙাপথে দুই ধারে সবুজের ছায়া, গাঁয়ে আছে ভালবাসা মমতা ও মায়া" - গ্রামের পথগুলো যেন সবুজের চাদরে ঢাকা, আর সেই পথে মিশে আছে ভালোবাসা, মমতা ও মায়া। এই অনুভূতিগুলোই গ্রামকে আপন করে তোলে।

গ্রামের সীমানায় বয়ে যাওয়া অজয় নদী যেন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। "গ্রাম সীমানায় আছে অজয় তটিনী, অবিরাম কল কল বহে স্রোতস্বিনী" - নদীর কলকল ধ্বনি যেন গ্রামের নীরবতাকে ভেঙে এক ছন্দময় সঙ্গীত তৈরি করে। অজয় নদীর বাঁকে থাকা শালবন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

সবশেষে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তার কবিতার মাধ্যমে মা, মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। "অজয় নদীর বাঁকে আছে শালবন, মা মাটি মানুষ কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ" - এই পংক্তিটি যেন কবির অঙ্গীকার, তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে চিরকাল মাটি ও মানুষের কথা বলে যাবেন।

মোটকথা, এই কবিতাটি গ্রাম বাংলার এক মায়াবী চিত্র, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, মানুষের আন্তরিকতা এবং কবির গভীর ভালোবাসার এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। এটি শুধু একটি কবিতা নয়, বরং কবির হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি, যা আমাদের এক নতুন কাব্যিকতার সন্ধান দেয় এবং মাটির প্রতি ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তোলে।