বাংলার ঋতুচক্র ঘুরে শরত্‍কালের পরেই আসে হেমন্তকাল। আর এই ঋতুই শস্যের উদ্ভবকাল। তারই আগমনী যেন ঘোষিত হয় এই শারদীয়া পুজায়। প্রতিমার পাশে তাই নব পত্রিকা স্থাপন করা হয়। কলা (ব্রক্ষাণী), কচু (কালিকা), হলুদ (দুর্গা), জয়ন্তী (কৌমারী), বিল্ব (শিবা), ডালিম (রক্ত দন্তিকা), অশোক (শোকর হিতা), মানকচু (চামুণ্ডা) এবং ধান (রক্ষ্মী)। এরা বোধনের পর আলাদাভাবে পূজিত হলেও কালক্রমে দুর্গার সঙ্গে সম্মিলিত হয়েছে। শ্বেত অপরাজিতা লতা সর্ববিজয় প্রদায়িনী দেবী মহামায়ার বিশেষ রূপ। তাই এই লতা দিয়ে নবপত্রিকাকে বেষ্টন করা হয়।


মায়ের দশহাতে ত্রিশূল, খড়গ, সুদর্শন চক্র, ধনুর্বাণ, শক্তি খেটক, পূর্নচাপ, নাগতালা, অংকুশ ও পরশু এ ধরনের অস্ত্র দেখা যায় বলে তিনি দশ প্রহরণ ধারিত্রী। মহালয়ার পিতৃপক্ষের তিলাঞ্জলি তর্পনের পর হয় দেবীপক্ষের সূচনা। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম 'মহালয়'। মহালয় শব্দ থেকে 'মহালয়ার' এর উত্‍পত্তি।


ষষ্ঠী তিথিতে দুর্গার বোধন সপ্তমীতে মূতির প্রাণ প্রতিষ্ঠা। অষ্টমী ও নবমীতে মহাপূজা ও দশমীতে দেবীর বিসর্জন। এই পূজার বিশেষত্ব হল সন্ধিপূজা অষ্টমী ও নবমী তিথির মিলনক্ষনে সন্ধিপূজা। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে রামচন্দ্র রাবনের দশটি মুন্ড ছিন্ন করেছিলেন। তাই এই সময়ে পূজার মাহাত্ম্য বেশি।


তবে যাই হোক, দুর্গাপুজো বাঙালির জীবনে অন্যতম উত্‍সব। সারা বছর বাদে বাইরে থেকে এসে বহু মানুষ মিলিত হন এই উত্‍সবে। বহু শিল্পীর সারা বছরের রুজি রোজগারও জড়িয়ে থাকে এই ৫ দিনের পুজোর সঙ্গে। তাই আক্ষরিক অর্থেই, দুর্গাপুজো হল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্‍সব।


শারদীয়া দুর্গাপূজা জাতীয় জীবনে সর্বাঙ্গীন। তাই বাংলা কবিতা আসরের সকল  কবি ও সহৃদয় পাঠকবৃন্দকে জানাই শুভ মহাষষ্ঠীর শুভকামনা, প্রীতি আর শুভেচ্ছা। বাংলা কবিতার জয় হোক, কবিগণের জয় হোক।


আসুন আমরা সকলেই জাতিধর্ম নির্বিশেষে শক্তির আরাধনায়
রত হয়ে শারদীয়া দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে উঠি।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


মহাষষ্ঠী দুর্গাপূজা
           লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ষষ্ঠী কল্পাদি আরম্ভ আজিকার দিনে,
বিল্ব ষষ্ঠী দুর্গাপূজা হয় শুভক্ষণে।
নদীতীর সুশীতল সাদা কাশবন,
দেবীর ঘোটকে হয় শুভ আগমন।


আজি হয় বিধিমতে দেবীর বোধন
শাস্ত্রমতে করে নব পত্রিকা বন্ধন।
মন্দিরেতে পুরোহিত বসিয়া আসনে,
মন্ত্র পাঠ করিছেন ভক্তি যুক্ত মনে।


দেবীর মণ্ডপে কাঁসি, ঢাকঢোল বাজে,
সন্ধ্যার আরতি হয় মন্দিরের মাঝে।
ঘৃতের প্রদীপ শিখা দীপ্ত হয়ে জ্বলে,
শঙ্খ ধ্বনি করে সব এঁয়োগণ মিলে।


তুমি মা আদ্যাশক্তি! শক্তি দাও মোরে,
লক্ষ্মণ লিখিল কাব্য,  কবিতা আসরে।