মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা। (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। কুমারীগণ এইদিন সারাদিন উপবাসী থেকে শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করে থাকে।


শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে প্রচুর জীবহত্যা করত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরী হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় । কোনো শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকে ।


সেই গাছটি ছিল বেলগাছ । আর সেই বেলগাছের নীচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ী ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।


এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত যেই জন, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।


কথিত আছে, আজ এই চতুর্দশী রাত্রে শিবের বিবাহ হয় পার্বতীর সাথে। তাই এই দিনে কুমারী মেয়েরা উপবাসী থেকে বিল্বপত্র, ধুতুরা, আকন্দ ও বেল শিবলিঙ্গে চাপিয়ে দুধ, ঘৃত, মধু আর গঙ্গাজল দিলে শিব সম পতি লাভ করে।


বাংলা কবিতা আসরের সকলকে জানাই পূণ্য মহা-শিবরাত্রির শুভেচ্ছা।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


মহা- শিবরাত্রি ব্রতকথা (ধর্মীয় কাব্যগাথা)
               কলমে-  লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শিবরাত্রি ব্রতকথা শুন দিয়া মন,
মৃগয়া করিতে আসে ব্যাধ একজন।
সারাদিন ভ্রমি ফিরি না পায় শিকার,
গৃহে ফিরিবারে হয় বাসনা তাহার।


বনমাঝে সেই ব্যাধ হারাইল পথ,
না পুরিল মনস্কাম ভগ্ন মনোরথ।
রজনী যাপন করে বিল্ববৃক্ষে চড়ি,
নিক্ষেপিয়া পত্র ছুঁড়ে সারারাত ধরি।


আছিল শিবের লিঙ্গ বিল্বতরু তলে,
বিল্বপত্র পড়ে সেই শিবলিঙ্গ মূলে।
প্রীত হন মহাদেব তাহার উপর,
লভিল সে মহাপূণ্য অবনী ভিতর।


বৃদ্ধকালে সেই ব্যাধ মরিল যখন,
মৃতদেহ আসে নিতে যম-দূতগণ।
ইহা দেখি মহেশ্বর পড়িল সঙ্কটে,
পাঠাইল শিবদূত যথা মৃত্যু ঘটে।


যমদূত সনে তারা আরম্ভিল রণ,
জয় করি দেহ তার করে আনয়ন।
শিবলোকে যমরাজ করিল গমন,
যমরাজ হর প্রতি জিজ্ঞাসে কারণ।


শিব বলে ভক্ত মোর মহা পূণ্যবান,
যমলোকে তার নাহি হয় অধিষ্ঠান।
শিবরাত্রি ব্রতকথা অমৃত সমান,
সুললিত ছন্দে লিখে লক্ষ্মণ শ্রীমান।  


=================
বাংলা কবিতা আসরে পূর্ব-প্রকাশিত
আরও একটি ধর্মীয় কবিতা
=================


মহা- শিবরাত্রি ব্রত
            কলমে-  লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শিব চতুর্দশী আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
ফুলে ফুলে সুসজ্জিত মন্দির প্রাঙ্গণ।
মন্দিরেতে শিবলিঙ্গ শোভে মনোহর,
বিল্বপত্র ফুলমালা তাহার উপর।


ঘৃত মধু গঙ্গাজল গাভীদুগ্ধ লয়ে,
চলিছে কুমারী সব আজি দেবালয়ে।
পূত ঘৃত রসে দীপ জ্বলিছে চৌদিকে,
সুগন্ধি চন্দন ধূপ পুড়িছে সম্মুখে।


ঔঁ নমঃ শিবায়ঃ বলি গঙ্গাজল দিলে
নিশ্চয় জানিহ শিব সম পতি মিলে।
উপবাসী থাকে তাই কুমারী সকলে,
শিব সম পতি লভে বহু পূণ্য ফলে।


শিবের বিবাহ আজি মহা-শিবরাত্রি,
আনন্দেতে উঠে মেতে বিশাল ধরিত্রী।
শিবরাত্রি ব্রতকথা শুনে সর্বজন,
কবিতায় লিখে কবি ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ।


==================
সনাতন হিন্দুধর্মের শাস্ত্রবিধান অনুযায়ী
আমার আরও একটি ধর্মীয় কবিতা
===================


মহা শিবরাত্রি ব্রত
                       লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহা শিবরাত্রি ব্রত খ্যাত চরাচরে,
মর্ত্ত্যবাসী জীব সবে শিবপূজা করে।
হরগৌরী একসাথে আসেন ধরাতে,
শিবের বিবাহ আজি, আজিকার রাতে।


পত্রপুষ্পে সুসজ্জিত দেবালয় মাঝে,
ঘৃতের প্রদীপ জ্বলে শঙ্খ ঘন্টা বাজে।
কুমারী সকলে হাতে আকন্দের মালা,
বিল্ব ধুতুরার ফুল প্রসাদের থালা।


শিবের মস্তকে দেয় দুগ্ধ গঙ্গাজল,
কমলা কদলী কুল নানাবিধ ফল।
উপবাসী থাকি সবে মাগে এই বর,
তোমা সম পতি যেন পাই মহেশ্বর।


মহা শিবরাত্রি কথা অপূর্ব কথন,
প্রতি বর্ষে হেরি এই মধুর মিলন।
শিবরাত্রি ব্রত কথা হল সমাপন,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।