“প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা” কবিতাটি শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র চক্রবর্তীর জীবন-আলেখ্য গীতি কবিতা। কবি সপরিবারে সত্দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। শ্রী শ্রী ঠাকুরের অসীম করুণায় কবির পারিবারিক জীবন পরম সুখে অতিবাহিত হয়। শ্রী শ্রী ঠাকুর কবির জীবনে অগ্রগতির ধ্রুবতারা। তাঁর দেওয়া সুমধুর ইষ্টনাম কবির জীবনের সাধনা ও জীবনের ব্রত। আসুন, আমরা জেনে নিই সেই পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরকে।


অনুকূলচন্দ্র, ঠাকুর (১৮৮৮-১৯৬৯) হিন্দু সাধক, চিকিৎসক এবং সত্সঙ্গ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার হেমায়েতপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী পেশায় ছিলেন একজন ঠিকাদার এবং মাতা মনোমোহিনী দেবী ছিলেন ভগবদ্ভক্তিতে পূর্ণএকজন মহীয়সী নারী।


অনুকূলচন্দ্র পাবনা ইনস্টিটিউশনে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল থেকে হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি অর্জন করে নিজ গ্রামে প্র্যাক্টিস শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন: মানুষ শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক এ তিন প্রকার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাই তিনি মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার প্রতিই বেশি জোর দিতেন, কারণ শারীরিক সুস্থতা অনেকটাই মানসিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। তাই মায়ের নিকট দীক্ষা নেওয়ার পর অনুকূলচন্দ্র মানুষের আত্মিক উন্নয়নের জন্য কীর্তনদল গঠন করেন। কীর্তনের সময় তিনি মাঝে মাঝে দিব্যভাবে আবিষ্ট হয়ে পড়তেন। ওই সময় তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত বাণীসমূহ পরে সংগৃহীত হয়ে পুণ্যপুঁথি নামে প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই লোকে তাঁকে ‘ঠাকুর’ বলে সম্বোধন করত।


সত্যনিষ্ঠা, সৎকর্মানুষ্ঠান এবং দীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মিক উন্নতি বিধানের উদ্দেশ্যে তিনি পাবনায় প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প এবং সুবিবাহ- এ চারটি বিষয় হলো সৎসঙ্গের আদর্শ। অনুকূলচন্দ্র লোকহিতার্থে তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।


আসুন, আমরা সকলেই তার জয়গান গেয়ে উঠি। শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথায় বলি- “মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর”। মানুষে মানুষে ভালবাসাই হল জগতের একমাত্র মুক্তির পথ। টাকা নয় মানুষই আপন। মানুষ ঘৃণা করে দূরে সরে থাকা, অর্থকে জীবনের পরমার্থ ভাবলেই সংসার জীবন হয়ে ওঠে বিষময়। তাই টাকা নয় মানুষকে ভালবেসে কাছে টেনে নেওয়াই মানুষের ধর্ম।সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার,
জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালাও প্রভু গো
নাশি অজ্ঞান আঁধার।


হে পরমপিতা তুমি প্রেমময়,
শ্রীচরণে তব যেন মতি রয়,


প্রেমের ঠাকুর লহ গো প্রণাম
আরাধ্য প্রভু আমার,
প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার।


হিমায়েতপুর তব জন্মভূমি,
দেওঘরেতে বিরাজিছ তুমি,


রচিলে আশ্রম দেওঘর তপোবন
অপূর্ব সৃষ্টি তোমার,
প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার।


প্রভাতে শুনি শঙ্খ-ধ্বনি,
প্রার্থনা গীতি নিত্য শুনি,


দূর থেকে আসে ভক্তজন সবে
বসে আনন্দ-বাজার,
প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার।


তুমি প্রভু ওগো পরম গুরু,
তবনাম নিয়ে পথচলা শুরু,


বিপদে আপদে হাত ধরো প্রভু
বিপদে করো উদ্ধার,
প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার।


যজন যাজন আর ইষ্টভৃতি,
করে যেইজন নিতি নিতি,


সকাল সন্ধ্যায়, করে যে প্রার্থনা
সুখী হয় তার সংসার,
প্রাণের ঠাকুর হৃদয়ের দেবতা
প্রিয় তুমি সবাকার।