আজ ভারতের ৭০তম সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস ।  ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে ভারত শাসনের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।


কার্যকরী হওয়ার ঠিক দুই মাস আগে, ১৯৪৯ খ্রিঃ ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক ভারতের সংবিধানঅনুমোদিত হয়। ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে সংবিধান কার্যকর করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ১৯৩০ খ্রিঃ ঐ একই দিনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক পূর্ণ স্বরাজের সংকল্প ঘোষিত ও গৃহীত হয়েছিল।


এই দিনটি ভারতের তিনটি জাতীয় দিবসের অন্যতম। অন্য দু'টি জাতীয় দিবস যথাক্রমে স্বাধীনতা দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী। এই দিন সারা ভারতেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানটি হয় নতুন দিল্লির রাজপথে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন।


ইতিহাস


রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ (ঘোড়ায়-টানা গাড়িতে)নয়াদিল্লীর রাজপথে প্রথম সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ১৯৫০।


১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ এ দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়। এই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত, প্রায় সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলন। স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয় যুক্তরাজ্যের সংসদে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হওয়ার মাধ্যমে। এর ফলে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে গিয়ে কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এর অন্তর্গত অধিরাজ্য হিসেবে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়।  ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ এ ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনও বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ এবং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন এর গভর্ণর জেনারেল। তখনও দেশে কোনো স্থায়ী সংবিধান ছিল না; ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল ঘটিয়েই দেশ শাসনের কাজ চলছিল। ১৯৪৭ খ্রিঃ ২৮শে আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেডকর। ৪ঠা নভেম্বর ১৯৪৭ তারিখে কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়।  চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে ২ বছর, ১১ মাস, ১৮ দিন ব্যাপী সময়ে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশন ডাকে। এই সমস্ত অধিবেশনে জনসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল। বহু বিতর্ক ও কিছু সংশোধনের পর ২৪ শে জানুয়ারি ১৯৫০ এ গণপরিষদের ৩০৮ জন সদস্য চূড়ান্ত সংবিধানের হাতে-লেখা দু'টি নথিতে (একটি ইংরেজি ও অপরটি হিন্দি) স্বাক্ষর করেন। এর দু'দিন পর সারা দেশব্যাপী এই সংবিধান কার্যকর হয়।


উদ্‌যাপন
সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্‌যাপনের প্রধান কর্মসূচী পালিত হয় ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে, জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লীতে। এই দিন রাজপথে আড়ম্বরপূর্ণ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় যা ভারত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।


২০১৪ খ্রিঃ ৬৫ তম সাধারণতন্ত্র দিবসে মহারাষ্ট্র সরকার প্রথম বার দিল্লী সাধারণতন্ত্র দিবস কুচকাওয়াজের অনুকরণে মেরিন ড্রাইভ বরাবর তাদের নিজস্ব কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছিল।


দিল্লী সাধারণতন্ত্র দিবস কুচকাওয়াজ
সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লীতে কুচকাওয়াজ হয় রাষ্ট্রপতির আবাসস্থল রাষ্ট্রপতি ভবনের নিকটবর্তী রাইসিনা হিল থেকে রাজপথবরাবর ইন্ডিয়া গেট ছাড়িয়ে। কুচকাওয়াজ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি রাজপথের একপ্রান্তে অবস্থিত ইন্ডিয়া গেটে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত অজানা সৈন্যদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মারক অমর জওয়ান জ্যোতি-তে একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর ঐ সৈন্যদের উদ্দেশ্যে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাধীনতা আন্দোলন ও তার পরবর্তী যুদ্ধগুলিতে ভারতের সার্নিবভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিহত সৈন্যদের প্রতি এইভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। এর পর রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মিলিত হন এবং প্রধান অতিথির সাথে রাজপথে অবস্থিত অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে আসেন। রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষকরা ঘোড়ার পিঠে করে তাঁদের পথপ্রদর্শন করেন।


সাধারণ-তন্ত্র দিবসে বাংলা কবিতা আসরের সকলকে জানাই স্বদেশপ্রীতি ও পবিত্রতম সাধারণতন্ত্র দিবসের আন্তরিক অভিনন্দন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন, দেশসেবার কাজে সকলে ব্রতী হোন,
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!



সাধারণ-তন্ত্র দিবসে
                লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


সাধারণ-তন্ত্র দিবসে আজিকে গাহি মোরা স্বদেশের গান,
ঊনিশশো পঞ্চাশে আজিকার দিবসে রচিত হল সংবিধান।


ভারতে উড়িছে ত্রিবর্ণ পতাকা,
মাঝখানে অশোক চক্র আঁকা,
স্বাধীনতার রং মাখা জাতীয় পতাকা মোদের গর্বের নিশান।
.....................................গাহি মোরা স্বদেশের গান।


সুজলা সুফলা ভারতের মাটিতে,
ঢেউ খেলে সবুজ ধানের খেতে
দেশবাসীর প্রাণ উঠুক মেতে
                               দিকে দিকে সবুজের অভিযান।
...................................।গাহি মোরা স্বদেশের গান।


আজিকার দিনে মোরা লব শপথ,
সারা দেশে চালাইব প্রগতির রথ,
দেশের সেবা হউক মোদের ব্রত,
                         দেশ হউক জাতির মিলন মহান।
................................গাহি মোরা স্বদেশের গান।


এসো এসো ভাই সবে মিলি গাই,
হিন্দু শিখ মুসলিম মোরা ভাই ভাই,
ধর্মে ধর্মে আজি কোন তফাত নাই,
                          স্বদেশের তরে প্রাণ দিব বলিদান।


বিশ্বের মাঝে স্বদেশ সেরা ভারতবর্ষ মোদের দেশ মহান।
...................................গাহি মোরা স্বদেশের গান।


সাধারণ-তন্ত্র দিবসে আজিকে গাহি মোরা স্বদেশের গান,
ঊনিশশো পঞ্চাশে আজিকার দিবসে রচিত হল সংবিধান।


স্বাধীনতার রং মাখা জাতীয় পতাকা মোদের গর্বের নিশান।
.....................................গাহি মোরা স্বদেশের গান।