শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ষষ্ঠ পর্ব- আগমনী কাব্য-৬


শরতের সোনা ঝরা রোদ, ভেসে চলা সাদা মেঘের ভেলা, নদীর ধারে মৃদুমন্দ বাতাসে দোল খাওয়া সাদা সাদা কাশফুল, সাদা বক, পাখ-পাখালির দল মহা-কলরবে ডানা মেলে আকাশের উজ্জ্বল নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মতো উড়ে চলা, বড় পুকুর ধারে জারুল গাছে বসা মাছ শিকারী মাছরাঙা, বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ তুলে নদীতে পাল তুলে চলা নৌকা, মোহনীয় চাঁদনী রাত, মায়াবী পরিবেশ, আঁধারের বুক চিরে উড়ে বেড়ানো জোনাকীরা, চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ বায়ু, শিউলী, কামিনী, হাসনাহেনা, দোলনচাঁপা, বেলী, ছাতিম, বরই, শাপলা, জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, মল্লিকা, মাধবী, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, স্থলপদ্ম, কচুরী, সন্ধ্যামণি, জিঙে, জয়ন্তীসহ নাম না জানা নানা জাতের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করা বাতাস, চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা, বৃষ্টিশেষে আবারো রোদ, দিগন্তজুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠা রংধনু। এ দৃশ্য শুধু এক ঋতুতেই চোখে পড়ে। সে হল শরৎ। শুভ্রতার ঋতু ও সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু । জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর।


শরতের আগমনে আগমনীর সুরে মেতে উঠে সারা পল্লীবাসী। মা আসছেন। দিকে দিকে তারই প্রস্তুতি চলে। আর মাত্র কটা দিন বাকি। এসে গেল বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উত্সব দুর্গাপূজা।


মহালয়া তারই আগমন বার্তা নিয়ে পৌঁছায় অজয়ের শান্ত মনোরম পরিবেশে। যেখানে সকলেই পিতৃ তর্পন করে। দুইধারে সাদা কাশফুল শোভা দেয়। কুল কুল রবে বয়ে চলে অজয় তটিনী। অজয়ের স্নিগ্ন মনোহরা রূপে সকলেই হয়ে উঠে মুগ্ধ আর অভিভূত।


শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাশফুল নদী তীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। গাছে গাছে শিউলির মন-ভোলানো সুবাসে প্রকৃতি হয়ে উঠে মায়াময়।


শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে।


শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। ভাদ্র-আশ্বিন এ দু’মাস শরৎ ঋতু। বর্ষার পরের ঋতু শরৎ। তাই শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল স্নিগ্ধ। শরতের আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না।


শরৎকালের রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘ মুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে।


অপরূপ বিভা ও সৌন্দর্যের কারণে শরৎকালকে বলা হয়ে থাকে ঋতু রাণী। মানুষ মাত্রই শরৎকালে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য দেখে মোহিত না হয়ে পারে না। ভাবাতুর করে তোলে কবির ভাবুক মনকে। কবি মন আনন্দে নেচে উঠে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে । প্রবল আবেগ আর উৎসাহ এসে জমা হয় কবি-সাহিত্যিকের মনোজগতে। সৃষ্টি করে চলে তারা অমীয় সুধা, সৃষ্টি করেন নতুন নতুন সাহিত্য কর্ম।


এমনি এক পূণ্য শুভক্ষণে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সাজিয়েছেন শারদ অর্ঘ-১৪২৬ কবিতা সংকলন। কবির কবিতা শুধু কবিতা, আগমনী কাব্য। আপনাদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় পঞ্চম পর্ব প্রকাশ দিয়েছি। আগমনী কাব্য বাকি পর্বগুলি নিয়মিত প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি।


শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ষষ্ঠ পর্ব- আগমনী কাব্য-৬


যাও যাও ওগো গিরি আমি তব পায়ে ধরি
উমা মম কাঁদিছে কৈলাসে।
কহ জামাতা শঙ্করে পুত্র কন্যা সঙ্গে করে
উমা যেন আসে মম পাশে।


মা আমার উমা আমার কহি তোরে বারবার
আয় মাগো আয় মোর ঘরে,
আয় উমা বোস পাশে বর্ষ পরে উমা আসে
আমার পরাণ কেমন করে।


গিরিরাজ বালা যবে দেবপুর হতে ভবে
আসেন সন্তান লয়ে সাথে,
আয় উমা মা আমার বসে এসে কাছে মার
মা হাত রাখে তার মাথে।


অষ্টমী নবমী তিথি অপরাজিতা বীথি
দশমীতে বিজয়ার দিবসে,
কেঁদে ওঠে মার মন কৈলাসেতে আগমন
বিজয়া দশমী দিন শেষে।


শুভ্র মেঘ গগনেতে সবুজ ধানের খেতে
ডাক দিয়ে যায় শঙ্খচিলে,
বাংলার ঘরে ঘরে আর এক বর্ষ তরে
প্রতীক্ষা করয়ে সবে মিলে।