শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
সপ্তম পর্ব- পূজোর কবিতা-৭
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরৎ কাল। এই সময় এমনি সাজে প্রকৃতি সাজে, তাতে মন উড়ে যায় শুভ্র মেঘের নীল আকাশে। বিকেলের সোনাঝরা রোদের ঝলমলে হাসি আর সন্ধ্যার শান্ত আবছা শিশিরে মন উড়ে যায় অজানায়। নদীর ধারে মৃদুমন্দ বাতাস, কাশফুলের শুভ্রতা, শুভ্র শেফালির আকুল করা ঘ্রাণ এ সবকিছু শরতের আবেদনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শরতে মানুষ ভুলে যায় ক্লান্তি ও যাপিতজীবনের নানান অসঙ্গতি। ঘাতপ্রতিঘাত ভুলে জীবন নদীতে সুখের নৌকা ভাসায় আপামর মানুষ।


শরৎ তারুণ্যের হৃদয়কে নবযৌবন রাগে রাঙিয়ে দেয়। কাশফুল, শিউলি, কামিনী, দোলনচাঁপা, মল্লিকা, নয়নতারা, ছাতিম, সন্ধ্যামনি, শাপলা, মাধবীর আগমনে শরৎকাল হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। এমন শরতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো আমরাও যেন বলে উঠি : ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ/আমরা গেঁথেছি শেফালীমালা/নতুন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি বরণডালা।’


শরৎ-প্রভাতে গ্রামের মেঠোপথে যেতে যেতে পথিকের মনে নতুন ভাবনার উদ্রেক হয়। শরৎ যেন প্রতিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে কবি-ভাবকে জাগ্রত করে দেয়। শরৎ নিয়ে মানুষের এমন মুগ্ধতা কয়েকশ’ বছরের নয়, এ মুগ্ধতা হাজার-হাজার বছরের। শরতের স্নিগ্ধতা চোখে জড়িয়ে তাই মহাকবি কালিদাস বলে ওঠেন :


‘প্রিয়তম আমার ঐ চেয়ে দেখ
নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
কালিদাসের দৃষ্টিতে শরৎকাল নববধূর মতো, এ যেন কবির আরেক প্রিয়া।


শরতের শিশির ভেজা সবুজ পথে নানা ফুল ঝরে পড়ে। যা কবি-মনে অনাবিল আনন্দের সঞ্চার করে। সেজন্য ভোরের আলোতে কবির হৃদয় হয়ে ওঠে সতেজ ও প্রাণবন্ত।


শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
সপ্তম পর্ব- পূজোর কবিতা-৭
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে শিশিরের বিন্দু ঘাসে
মুক্তো হয়ে ঝরে এ ধরায়,
শরতের সাদা মেঘে হিমেল পরশ লেগে
ভাসে নীল গগনের ছায়।


অজয়ের বালুচরে শালিকেরা খেলা করে
কাশফুল ভরা দুই তীরে,
শিউলি টগর বেলি ফুটেছে পাপড়ি মেলি
সৌরভ ভাসে স্নিগ্ধ সমীরে।


দিঘিতে ফুটে কমল ছুটে আসে অলিদল
শালুক- শাপলা ভাসে জলে,
গাঁয়ের পথের ধারে তালগাছ সারে সারে
রাঙাপথে সবে হেঁটে চলে।


সোনালী অরুণ হাসে আগমনী সুর ভাসে
শরতের সোনা রোদ ঝরে,
সবুজের অভিযান চারিদিকে সোনা ধান
পুলকে হৃদয় ওঠে ভরে।


আশ্বিনে দেবীর পূজা আসেন মা দশভূজা
এসে গেল পূজোর সময়,
শ্রমিকের টাকা নাই পূজোর বোনাস চাই
কল-কারখানা বন্ধ হয়।