আজ শুভ মহালয়া । পিতৃপক্ষ অবসানের পর আজ থেকে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। শারদ-প্রভাতে বেতারে ও টেলিভিশনে দেবী দুর্গার দ্বারা মহিষাসুর বধের গীতি কবিতার সুরে চণ্ডীপাঠ ধ্বনিত হয়। এই পূণ্য শুভক্ষণে বাংলা কবিতার আসরে আমার কবিতা মহালয়ায় শক্তি আরাধনা ও চণ্ডীপাঠ প্রকাশ দিলাম। বাংলা কবিতার আসরের সকল কবি ও সুধী পাঠকবৃন্দকে জানাই পবিত্রতম মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


শক্তি আরাধনা ও চণ্ডীপাঠ
             - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


(সঙ্গীতের সুর ও শংখধ্বনি)


যা চণ্ডী.......
নমশ্চণ্ডিকে চণ্ড দোর্দণ্ডলীলা
লসত্ খণ্ডিতাখণ্ডলা শেষভিতে।
ত্বমেকা গতির্দেবী নিস্তারকর্ত্রী
নমস্তে জগত্তারিণী ত্রাহি দুর্গে॥
নমো দেবী দুর্গে শিবে ভীমনাদে
সরস্বত্য অরুন্ধত্য অমোঘ স্বরূপে
নমস্তে বিভূতিশচী কালরাত্রিস্বরূপে
নমস্তে জগত্তারিণী ত্রাহি দুর্গে॥


বেতার অনুষ্ঠান বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ নিঃসৃত মন্ত্রপাঠ থেকে সংগৃহীত।
(চণ্ডীপাঠ)  


আশ্বিনের শারদ প্রাতে
বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির।
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্নিহিত মেঘমালা।
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা।
অসীম ছন্দে বেজে ওঠে রূপলোক
ও রসলোকে আনে নব মাধুরী সঞ্জীবন
তাই আনন্দিতা শ্যামনিমাতৃকার
চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।
তাই চিচ্ছক্তিরূপিণী শারদশ্রী
বিমণ্ডিত প্রসীদ।
মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবর্দ্ধিতা।


(সংগীত)
বাজলো তোমার আলোর বেণু।
মাতলো রে ভুবন। বাজলো .. বাজলো..


(চণ্ডীপাঠ)
দেবী মহামায়া! সচেতন চিন্ময়ী।
তাঁর আদি নেই তাঁর প্রকৃত মূর্তি নেই।
বিশ্বের অনন্ত প্রকাশ তাঁর মুর্তি।
নিষ্কাসিত অসুরপীড়িত দেবতারক্ষণে
তাঁর আবির্ভাব হয়।
দেবীর শাশ্বত অভয় বাণী-
ইচ্ছং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতিঃ
তদা তদা অবতীর্যাহং করিষ্যামি অরি সংক্ষয়ম্
পূর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে
সমস্ত জগত যখন কারণসলিলে পরিণত হল।
ভগবান বিষ্ণু অখিল প্রভাব সংহত করে
সেই কারণ সমুদ্রে রচিত অনন্ত শয্যাপরে
যোগনিদ্রায় হলেন অভিভূত। বিষ্ণুর যোগনিদ্রার
অবসানকালে তার নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন
আদিকল্পের সৃষ্টিবিধাতা ব্রহ্মা। শ্যাম শক্তিমান বিশ্বত্রাতা
বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্যে জগতের জগন্মাতাকে
ঋক্ মন্ত্রে করলেন অভিবন্দনা।


(সংগীত)
জাগো ..... তুমি জাগো...
জাগো মা। জাগো অসুর বিনাশিনী দুর্গা।
জাগো মা
জননী বরদা অজরা অতুলা,
রিপুদলবারিণী জাগো মা
জাগো চণ্ডিকা শংকরী জাগো।


(চণ্ডীপাঠ)
তখন প্রলয়ান্ধকার রূপিনী তামসী নিশা
এই স্তবে পরিতুষ্টা হয়ে
বিষ্ণুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে
বাহির হলেন। বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল।
বিষ্ণু সুদর্শনচক্র চালনে
মধু-কৈটভের মস্তক
ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা
ধ্যানমগ্ন হলেন।
এদিকে কালান্তরে, দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ
মহিষাসুরের পরাক্রমে
দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন।
অসুরপতির অত্যাচারে
দেবগণ বিষাদব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠল।
ব্রহ্মার সম্মুখে
নিবেদন করলেন মহিষাসুরের
অত্যাচার কাহিনী।
স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকুলের
এই বার্তা শুনলেন তারা।
শান্ত যোগীবর মহাদেবের
সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে  
রক্তজবার মত রাঙা বরণ
ধারণ করলো.
নারায়নের আনন
ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।
তখন মহাশক্তির আহ্বানে,
গগনে গগনে নিনাদিত হল মহাশংখ।
বিশ্বজ্যোতি রুদ্রের বদন থেকে অপূ্র্ব তেজরশ্মি
বিচ্ছুরিত করে আবির্ভূত হলেন
মহাশক্তি আদ্যাশক্তি মহামায়া।      
                     (সংক্ষেপিত)


(প্রণাম মন্ত্র)
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গঃ মুক্তি প্রদায়িনী।
ত্বং স্তুতি স্তুতয়ে কাবা ভবন্তি পরমোক্তয়॥
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥


ঔঁ দ্বৌ শান্তিঃ! অন্তরীক্ষং শান্তিঃ
পৃথিবী শান্তিঃ। শান্তি রাপ শান্তি রোষধয়।
শান্তিঃ বনস্পতয়। শান্তিঃ সামা শান্তিরেধি
ঔঁ আপদং শান্তিঃ! যত্র এবাগত পাপং তত্রৈব প্রতিগচ্ছতু।
ঔঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ!


মহালয়ার কবিতা।
শিউলি ঝরানো শারদ প্রভাতে
                 -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শিউলি ঝরানো                শারদ প্রভাতে
           পাখিদের কোলাহল,
সুনীল আকাশে               সাদা মেঘেদের
            আনাগোনা অবিরল।


কাশের বনে                    ফুল ফুটেছে
          পূজো এসে গেল কাছে,
শিউলি ফুলের               সুগন্ধ মেখে
              হৃদয় আমার নাচে।


টগর বকুল                 জুঁই চামেলি
            মাধবী মালতী লতা,
মোর আঙিনাতে            তুলসীতলায়
           সুনীলা অপরাজিতা।


সাদা মেঘের          চলে আনাগোনা
           সোনালি রোদ ঝরে,
শারদ প্রভাতে         পাখিরা ডাকে
          পরাণ পাগল করে।


কমল কাননে            মধু আহরণে
           ছুটে আসে মধুকর,
মন্দির মাঝে            কাঁসর বাজে
         প্রফুল্ল সবার অন্তর।


শারদ আকাশে           সাদামেঘ ভাসে
         পূজোর আনন্দে মাতি,
মা আনন্দময়ীর           শুভ আগমনে
          ঢাকী ঢাকে দেয় কাঠি।