শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
আগমনী কাব্য-৪
                   কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন যে শরৎকালে তাঁর সৃজনী শক্তি ‘অকারণ পুলকে’ ছবি আঁকা, গল্প লেখা আর সুরের সৃষ্টিতে ঝলমলিয়ে উঠেছে। এই বইয়ে আরও ধরা রয়েছে তাঁর শারদ প্রাতের আনন্দঘন স্মৃতি, শরৎমুগ্ধতা। তিনি লিখেছেন, ‘সেই শরতের সকাল বেলায়… সোনা গলানো রৌদ্রের মধ্যে দক্ষিণের বারান্দায় গান বাঁধিয়া তাহাতে যোগিয়া সুর লাগাইয়া গুনগুন করিয়া গাহিয়া বেড়াইতেছি।’ ‘আজি শরত তপনে প্রভাত স্বপনে/ কী জানি পরাণ কী চায়।’


শরতের মধ্যাহ্নে গানের আবেশে কবির মনটা মেতে থাকে, কাজকর্মের কোনো দাবিতে কান দেন না ‘হেলাফেলা সারাবেলা/ এ কী খেলা আপনমনে’—এমন পঙিক্ত তো লিখেছেন শরতের দিনে। আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, কেন এই ঋতুটিতে তিনি বলেছেন, ‘আমার গান-পাকানো শরৎ’, চাষিদের যেমন ধান-পাকানো শরৎ। কেন আরও বলেছেন, শরৎ তাঁর সমস্ত দিনের আলোকময় আকাশের গোলা—তাঁর বন্ধনহীন মনের মধ্যে ‘অকারণ পুলকে ছবি-আঁকানো গান-বানানো শরৎ’।



শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
আগমনী কাব্য-৪
                   কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আগমনী সুরে                গান বাজে দূরে
            এসেছে শরৎ আজি,
পুঞ্জে পুঞ্জে তাই             আকাশের গায়
            ভাসে শুভ্র মেঘ-রাজি।


বাতাসে বাতাসে             ফুলের সুবাসে
            ছুটে আসে মধুকর,
অজয়ের পারে               শোভিছে দুধারে
             কাশফুল মনোহর।


দিঘি কালো জল              কুমুদ কমল
            ফুটে আছে রাশিরাশি,
সকালে বিকালে              তরু ছায়াতলে
             রাখাল বাজায় বাঁশি।


শরৎ এলো রে                এ ধরার পরে
            গাছে গাছে পাখি নাচে,
শিশিরে নাওয়া                ভোরের হাওয়া
             দোলা দেয় ধানগাছে।


শরৎ এসেছে                  হিমের পরশে
             পুলক জেগেছে প্রাণে,
অজয়ের চরে                সোনারোদ ঝরে
             নব আগমনী গানে।