গুরু নানক জয়ন্তী-২০২২
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
(সংগৃহীত)


পৃথিবীতে যতজন মহত্‍ উদ্দেশ্য নিয়ে জন্মেছেন, তাঁরা সকলেই অদম্য কাজের ছাপ রেখে গিয়েছেন। অগণিত মানুষ তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন, অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আধ্যাত্মিক যুক্তি ও অভ্যন্তরীন শান্তির জীবনযাপনের মূলমন্ত্র শিখিয়েছেন তাঁরা। শিখধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক ছিলেন সেই অসাধারণ একটি সত্তা। মানুষের কাছে ইক ওঙ্কার ( এক ঈশ্বর) এর বার্তা প্রচার করেছিলেন। বিশ্বাস করতেন যে স্রষ্টা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে তাঁর বাস।
গুরু নানক ছিলেন দশজন শিখ গুরুদের মধ্যে প্রথম। ১৪৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল, বর্তমান পাকিস্তানেক পঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের কাছে অবস্থিত নানকানা সাহিবে এক হিন্দু পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যদিও গ্রামের নাম ছিল রায ভর দি তালবন্দি। পরবর্তী কালে নানকের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয় নানকানা সাহিব। বর্তমানে শি্খদের একটি বৃহত্‍ উপাসনালয় রয়েছে, যার নাম গুরুদ্বার জনম আস্থান।
গুরু নানক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
– হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিবস হিসেবে পালিত হয়।
– বাবার নাম মেহতা কল্যান দাস বেদী, গ্রামের মুসলিম জমিদার রায় বুল্লারের ভূমি রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন। নানকের মায়ের নাম তৃপ্তা দেবী। তাঁর এক বড় বোন ছিল। নাম নানকি।
– সাত বছর বয়সে তাঁর স্কুল শুরু হয়। নানক লেখাপড়া বেশিদূর করেননি। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে স্থানীয় জমিদারিতে কেরানির কাজ শুরু করেন।
– ১৪৮৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাসে মাতা সুলাখনীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দুই পুত্র ছিল। শ্রীচান্দ ও লক্ষ্মীচান্দ।
– একসময় সত্যের সন্ধানে পরিবার ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে থাকেন ও ঈশ্বরের স্বরূপ অনুধাবন করতে পারেন। তারপর তিনি বাণী প্রচার করা শুরু করেন।
– ৩০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ও প্রধান শিক্ষা দান করেন। শি্খ ধর্মের তিনটি স্তম্ভ গঠন করেন- ভান্ড চাককো ( মানে সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নেওয়া এবং যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করা), কিরাত করো (মানে কাউকে শোষণ না করে এবং কোন প্রতারণা ছাড়াই সৎ জীবনযাপন করা) ও নাম যপো ( মানে ঈশ্বরের নাম নিয়ে ধ্যান করা এবং আমাদের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করা)
-১৫০০-১৫২৪ সালের মধ্যে (‘উদাসিস’, শিখ ধর্মে এই সময়কে এই নামে আধ্যাত্মিক ভ্রমণ বলে থাকে) প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছিলেন। মক্কা, বাগদাদ, মদিবা, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত, কাশ্মীর, বাংলা ও মণিরপুরের মতো স্থানগুলি ভ্রমণ করেছিলেন।
– নানক তাঁর বাণী প্রচারের জন্য ‘রাবাব’ নামে এক বিশেষ ধরণের বাদ্যযন্ত্রের বাদক মারদানাকে সঙ্গী করে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছিলেন।
– গুরু নানকই প্রথম লঙ্গর প্রচলন করেন। লঙ্গর হল একই স্থানে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ পাশাপাশি বসে আহার করার রীতি।
– ১৫৩৯ সালে ২২শে সেপ্টেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের করতারপুর নামক স্থানে বিরুদ্দেশ হয়ে যান। শিখ মতে, মুসলমান বন্ধু মারকানার সঙ্গে বাইন নদীতে স্নান করতে গিয়ে ডুব দিয়ে হারিয়ে যান নানক।
– গুরু নানক ১৫০২ সালে লাহোর থেকে ২৫ কিমি দূরে জিটিরোজের ধারে বিশাল জলাশয়ের ধারে একটি মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে সেই স্বপ্ন তাঁর জীবদ্দশায় সমাপ্ত করা যায়নি। পরবর্তীকালে সেই স্বপ্নপূরণ করেন শিখ গুরু অর্জুন শিং। তিনি একটি জলাশয় তৈরি করেন। নাম রাখা হয় অমৃত সায়র। সেই থেকে শহরের নাম রাখা হয় অমৃতসর। ১৫৮৮ সালে তিনিই স্বর্ণমন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
– গুরু নানকের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে প্রায় তিনদিন ধরে সারা বিশ্বজুড়ে নানক জয়ন্তী পালন করা হয়। উত্সদবের সূচনা হয় শিখদের পবিত্র গ্রন্থগুরু গ্রন্থসাহিব পাঠের মাধ্যমে। একটানা ৪৮ ঘণ্টা এই গ্রন্থসাহিব পাঠ করা হয়। কোনও রকম বিরাম ছাড়া। একে বলে অখণ্ড পাঠ।


শ্রীগুরু নানক জয়ন্তী
কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


নানক জয়ন্তী আজি ভারি ঘুম পড়ে,
জনসমাগমে যায় গুরুদ্বারা ভরে ।
প্রার্থনা সংগীত আদি নগর কীর্তন,
নাম গান করে সবে হয়ে শুদ্ধ মন।


ওয়াহে গুরু সব নাম জপে অবিরাম
সারাদিন নাম জপ নাহি অবিরাম ।
গুরু পর্ব আজি তাই পুণ্য শুভক্ষণ,
শ্রীগুরু বন্দনা করে সব ভক্তজন।


সুসজ্জিত গুরুদ্বারা আলোর বাহার,
লঙ্গর খানায় চলে ভোজন আহার।
দিবানিশি নাম গান তিন দিন ধরে,
শুদ্ধ হয়ে শিখগণ গ্রন্থ পাঠ করে।


নানক জয়ন্তী কাব্য অমৃত কথন,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।