যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দিনী
শ্রী শ্রী চণ্ডীস্তোত্রম্ – সপ্তম পর্ব। শ্রী শ্রী মহা-ষষ্ঠী
সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।


প্রাচীন শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজো বসন্তকালেই বিধেয়। হিন্দুদের বেশির ভাগ উৎসবই হতো শস্যগৃহজাত করার পর।তাই আমনধান ও রবিশস্য উঠে গেলে গৃহস্থের প্রাচুর্য অনুসারে ধূমধাম সহকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হতো।কিন্তু রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করার পূর্বে ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র দুর্গাপূজা ও চণ্ডীহোম করেছিলেন।


সময়টা ছিল আশ্বিনমাস‚ সূর্য ছিল দক্ষিণায়ণে। দেবতারা সব ঘুমিয়ে। তাই রামচন্দ্রকে করতে হল অকালবোধন অর্থাৎ জাগানো। দেবতারা না জাগলে পূজা নেবেন কী করে ?


তাই তো আকুতি- জাগো দুর্গা‚ ” জাগো দশপ্রহরণধারিণী…তুমি জাগো।”


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে রাজা সুরথ শাস্ত্রীয় রীতি মেনে চৈত্র মাসে দুর্গাপূজা করেছিলেন।তখন ছিল বসন্তকাল‚ সূর্যের উত্তরায়ণ‚ পূজার পূর্বে বোধনের দরকার হয়নি।তাই পূজা শুরু হয়েছিল ষষ্ঠী থেকে। কিন্তু পরবর্তীকালে শরৎকালে পূজার সময় নির্ধারিত হওয়ায় প্রয়োজন হয়ে পড়ল বোধনের। এজন্যই এখন পূজা শুরু হয় সপ্তমী থেকে। তা বলে ষষ্ঠীর গুরুত্ব কিন্ত কমেনি। প্রকৃত পক্ষে সপ্তমী‚ অষ্টমী ও নবমী— এই তিন দিনের পুজোর সমস্ত প্রস্তুতি ষষ্ঠীতে করে নিতে হয়।


এই প্রস্ততি হল তিনপ্রকার–
কল্পারম্ভ‚ বোধন এবং অধিবাস ও আমন্ত্রণ ।


কল্পারম্ভ: প্রক্রিয়াটি শুরু হয় সকাল বেলাতেই।সকল শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনে পুজো যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেজন্য করা হয়।ঘট ও জলপূর্ণ তাম্রপাত্র মণ্ডপের এককোণে স্থাপন করে দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয় ।


বোধন: সন্ধ্যা বেলা বা গোধূলি বেলায় দেবী বোধন করা হয় অর্থাৎ দেবীকে জাগরিত করা হয় ।


অধিবাস ও আমন্ত্রণ: বোধনের পর বিল্ব শাখায় (বিল্ব বৃক্ষের প্রতিভূ) দেবীকে আবাহন করা হয়। একেই বলে বোধন। রীতি হল অশুভ শক্তিকে দূরীভূত করার জন্য ঘটের চারদিকে তীরকাঠিতে লালসুতো বেষ্টন করা হয়। এরপর আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া। পরদিন যাতে দেবী পুজো গ্রহণ করেন তারই জন্য আমন্ত্রণ ছাড়া আর কিছু নয় !


ষষ্ঠী পূজা—
মহালয়া অমাবস্যার পরে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী পূজার আয়োজন এর মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হয় সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার সংকল্প করা হয় ৷ সন্ধ্যা কালে বোধন তারপর অধিবাস ও আমন্ত্রণ অনুষ্ঠিত হয়।


হিন্দু রীতি অনুসারে দুর্গাপূজার সময় কে শ্রেণীবিভাগ করা হয় প্রথম দিন দুর্গা ষষ্ঠী বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস৷ দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমী পুজা নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন সপ্তমী বিহিত পূজা৷ তৃতীয় দিন মহা অষ্টমী পূজা সন্ধি পূজা কুমারী পূজা চতুর্থ দিন নবমী বিহিত পূজা ৷পঞ্চম দিন দশমী পূজা বিসর্জন এবং বিজয়া দশমী ৷ বৃহৎ নন্দিকেশ্বর পুরান ,দেবী পুরান ও কালিকা পুরাণ এ দূর্গা পূজার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে ৷ দুর্গাপূজায় বহু উপকরণ ব্যবহার করা হয়।


যা দেবী! সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


যা দেবী! সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


যা দেবী! সর্বভূতেষু শান্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


আসুন, আমরা সকলেই আজ শুভ বিল্বষষ্ঠীর পূণ্য শুভক্ষণে শক্তি আরাধনায় রত হই। সাম্প্রদায়িকতা মুছে ফেলে জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই পূজার উত্সবে মেতে উঠি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!


শ্রী শ্রী দুর্গাত্সব-১৪২৬ শারদীয়া পূজা-সংকলন
বিল্বষষ্ঠী (দেবীর বোধন)- দুর্গাপূজার কবিতা- ২
কবি- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আজি ষষ্ঠী পূণ্য-তিথি দেবীর বোধন,
ধরাধামে আজি তাই পূজা আয়োজন।
প্রতি প্যাণ্ডেলে দেখি আলোর বাহার,
ঢাক বাজে কাঁসি বাজে মণ্ডপ মাঝার।


সন্ধ্যায় আরতি হয় জয় ঢাক বাজে,
আনন্দেতে শিশুদল হাত তুলি নাচে।
জ্বলিছে আলোকমালা পূজার মণ্ডপে,
মৃণ্ময়ী পূজিতা হন চিন্ময়ীর রূপে।


যতনে নব-পত্রিকা করিয়া বন্ধন,
বিধিমতে স্তবপাঠ করেন ব্রাহ্মণ।
দেবীর বোধন আজি শুন সর্বজন,
মহামায়া ধরাধামে আবির্ভূতা হন।


দেবীর বোধন আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
বিল্বষষ্ঠী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।