মা, আমি যখন তোর গর্ভে ছিলাম
তোর নাড়ীটায় ছিলো আমার নাড়ী
ঐ টুকু পেটের মধ্যে নয় মাস বসবাস করে
যন্ত্রণার একটা পাহাড় গড়ে তুলে ছিলাম
তোর ঐ পবিত্র দেহের মাঝে।
না বুঝে মাথা তুলেছি তোর বুক বরাবর
কত লাথি মেরেছি বাঁ পাশে ডান পাশে
তুই যে দিকে ঘুরে চাইতি সে দিকেই সেই
যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যায়তি।
প্রসবের কালে ডাক্তার যেন খেলছিল
তোকে নিয়ে মরণের খেলা,
কয়েক মিনিট মনে হয়েছিলো যেন
তোর এবার ফুরিয়ে যাবে বেলা।
যখন ভূমিষ্ঠ হলাম ডাক্তার কেটে দিলো
তোর আমার নাড়ীর সে বাঁধন,
তিলে তিলে কোলে পিঠে করে বড় করলি আমায়,
ভাগ্যের পরিহাসে তোকে ছেড়ে আজ
আমার ভিন্ন জীবন যাপন।
জানিস মা, আমি কিন্তু শুনতে পাই
তোর ঐ লুকিয়ে কান্নার আওয়াজ,
মা আমি দেখতে পাই, তোর ঐ চোখের
অথৈ জলে শাড়ির আঁচলের গোসল।
নিজের হাতে তুলে খেতে না পারায় কষ্ট
নিজের পায়ে সঠিক ভাবে পথ না চলার কষ্ট
কষ্ট কাউকে ভাগাভাগি করতে না পারায় কষ্ট
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা খেলার সময়
কাউকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট
আমি সব দেখতে পাই শুনতে পাই।
কিন্তু কি করবো বল? আমি যে নিরুপায়
কখনও কোনদিন ক্ষমা করিস না আমায়।
মা, আজ আমার সেই নাড়ীর টান লেগেছে
আমি ব্যথার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গেছি।
এ ব্যথা পারছি না কাউকে বলতে
পারছি না চিৎকার করে কাঁদতে।
বোবা কান্না ফুঁপিয়ে চলছে দিন রাত,
নিরুপায় আমি ক্ষমতা হীন,
জননী তোরে কেমনে বাঁচাবো আমি?
তুই না থাকলে আর কেউ নিবে না আমার খবর
আমার আশায় পথ চেয়ে থাকবে না কেউ।
কেউ আর নিবে না সকাল দুপুর রাতের খবর।
জানিস মা, এ শহরে সবাই স্বার্থপর
স্বার্থ ছাড়া কেউ আমাকে আপন করে নিতে চায় না।
আমায় ছেড়ে চলে যাস না মা দোহায় লাগি তোর,
তুই না থাকলে বড় নিঃস্ব হয়ে যাব এই দুনিয়ার উপর।