আমি এখন মৃত লাশ
জাফর পাঠান


এইতো কিছুক্ষণ আগেও বেঁচে ছিলাম আমি-
মা বলছিলো আমায়-
খোকা-খাওয়ার পর্বটি সেরে ফেল্
বাবা-আড়চোখে তাকিয়ে জানান দিচ্ছিলো যেনো-
এক্ষুনি না খেলে ট্রেন করবো ফেল।


মনুষত্বের আর্তনাদ দেখছিলাম টিভিতে
পারছিলামনা হৃদয়ের কষ্ট পুষতে,
জড়িয়ে বসেছিলো ছোট মেয়েটি আমায়
‘ও’ আমার কোলে এভাবেই নিত্য ঘুমায়,
আমার হাতটি টেনে নিয়ে গালে দিয়ে ঘুমাবে
কখনো আমার গায়ে হাত বা পা রেখে ঘুমাবে,
খাবার সাজিয়ে স্ত্রী দিচ্ছে হাঁকের পর হাঁক
ঠিক সেই মুহূর্তে আমি হয়ে গেলাম নির্বাক,
বুকে কষ্টকর বরফ জমা নিঃশ্বাস
বন্ধ হয়ে গেলো হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস,
আমি এখন মৃত লাশ।


ছূটে আসছে সবাই-পড়ে থাকা শরীরের দিকে-
কি হলো-কি হলো রব-আর আর্তনাদ,
আমার মেয়েটি তখনো বুঝেনি-
বাবা নিয়েছে মৃত্যুর স্বাদ।


আমার শরীর থেকে-আমি এখন বাহিরে-
ঠিক তেমনটি আছি-যেমন ছিলাম শরীরে।


দেখতে পাচ্ছি,
আমার নিষ্পন্দ দেহের পাশে নির্বাক-পাথর বাবাকে
আমার বুকের উপর পড়ে থাকা গুমড়িয়ে কাঁদা মাকে
শুনতে পাচ্ছি আমার স্ত্রীর হাহাকার-বুকফাটা কান্নাকে।


মেয়েটি-ঠিক তেমনি-এখনো আমায় ধরে আছে
বাবার নিথর শরীরটাকে নাড়ছে-
আদর মাখা মুখে-বাবা বাবা বলে ডাকছে,
কি নিষ্ঠুর হয়ে গেছে বাবা, দিচ্ছেনা জবাব
অবুঝ মেয়েটি বুঝেনা কিছু-হয়েছে বেতাব।
কিন্তু আমিতো স্থির থাকতে পারছিনা-
ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছি আমার মেয়েকে
মুছে দিচ্ছি আদর করে-চোখের অশ্রু ফোটাকে
কিন্তু লক্ষীটি-কিছুতেই অনুভব করছেনা আমাকে।


আমার মাকে জড়িয়ে দিচ্ছি শান্তনা
কিন্তু মা-কিছুতেই কিছু মানছেনা,
সেই কখন থেকে বাবা তাকিয়ে আছে আমার স্তব্ধ দেহতে
কিন্তু বাবাকেও কিছুতেই পারছিনা সরাতে,
শত প্রবোধে পারছিনা স্ত্রীর কান্না থামাতে।


সহ্য করতে যে-পারছিনা এসব আমি আর-
কাকে বুঝাবো-কিভাবে দিবো আশ্বাস
আমার যে আবার উঠেছে নাভিঃশ্বাস।


ও বুঝতে পেরেছি এখন-
কেনো দিচ্ছেনা সারা-করছেনা আমাকে বিশ্বাস
আমিতো এখন দেহহীন-বায়বীয় প্রতিভাস,
ওদের সামনে এখন আমি একটা মৃত উপন্যাস
এই ধরাধামের নিয়মে-আমিতো এখন একটা-মৃত লাশ।