একদা এক সুন্দর জোস্নালোকিত প্রাতে
মহান স্রষ্টার ইঙ্গিতে পুণ্যালোকে স্নাত হয়ে,
পৃথিবীর পথে একা যাত্রা শুরু আমার।
পথহারা কোন এক পথিকের মত
একাকী পাড়ি দেওয়া দুর্গম পথে
শঙ্কাহীন চিত্ত, দূর্বার দুর্জয় যাত্রা।
অবশেষে, আলোময় পৃথিবীর বুকে এসে
থমকে দাঁড়ালাম, পল্লীবাংলার কোন এক
বসত ঘরে, উৎকণ্ঠিত মানুষের ভিড়ে।
অন্ধকার থেকে আলোময় পৃথিবীতে এসে,
নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করতে গিয়ে
সেদিন অজানা এক শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে,
ডুকরে বার বার কেঁদে উঠেছিলাম।
অবুঝ শিশুর কান্না বলে আমলে নেইনি
উপস্থিত স্বজনেরা, শুধু শান্তনা আর শান্তনা,
মুল্যায়নে ব্যার্থ হল কান্নার নিগুর রহস্য।
কেঁদেছিলাম স্রষ্টাকে প্রদত্ত ওয়াদার স্মরণে।
স্রষ্টা প্রশ্ন রেখেছিলেন-‘আলাস্তু বিরাব্বিকুম’?
শুনেছিল কর্ণহীন আত্মা-‘আমি কি তোমাদের রব নই’?
উত্তরে বলেছিল জিব্বাহীন আত্মা-‘কালু বালা’।  
'অবশ্যই আপনি আমাদের রব'।
মায়ের কোলের অফুরন্ত স্নেহমাখা মায়া, মমতা,
পিতার আদর আর ভাই বোন, পাড়া-পরসী,
আত্মীয়দের নিরবচ্ছিন্ন সুহাগের মাঝে বড় হয়ে,
একদিন বিদ্যালয় আর কলেজের সিড়ি বেয়ে
পৌছে গেলাম যৌবনের সবুজ স্বপ্নিল প্রান্তরে।
শুরু হল পৃথিবীময় কর্মের এক মহাযজ্ঞ।
ভুলে গেলাম স্রষ্টার কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি,
গড়ে তোলা হল অনেক কৃত্তিম প্রতীকি স্রষ্টা,
লক্ষ্য বিচ্যুত হলাম পৃথিবীতে আসার।
বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি মানুষের অধঃপতন,
মানুষে মানুষের ধ্বংস আর অকল্যান কামনা,
শোষণ, বঞ্চনা, প্রতারণা প্রবঞ্চনা আর দুঃশাসন,
পৃথিবীময় শুরু হওয়া এক অসম প্রতিযোগিতা,
পরিণামে সম্পদের ধ্বংস, হত্যা, গুম, রাহাজানি,  
অবিচার, অনাচারে বসবাসের অনুপযোগী্ জগৎ,
আর ভাবি কত কাল চলবে এই অনাচার, অবিচার।
কেন এই ব্যর্থতা, কেন স্রস্টাকে ভূলে যাওয়া,  
কেন এই বিচ্যুতি, আর একান্ত মনে প্রার্থনা করি-
হে সর্বশক্তিমা্ন, হে দয়াময়, হে করুণার আধার,
হে মহান রব, তুমি আমাদের শক্তি দাও, সামর্থ দাও,
আমরা তোমার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতে চাই না,
সফলতা নিয়েই, ‘কালু বালা’ স্বীকার করেই  
আমরা তোমার কাছে ফিরে আসতে চা্‌ই।
অবিচার, অনাচার মুক্ত পৃথিবী রেখে যেতে চাই,
আমরা সুন্দর একটা পৃথিবী গড়তে চাই।