"মা" একটা ছোট শব্দ, অথচ মা-ই মোর ধরিত্রী,
মা যে আমার প্রথম দেখা, মা যে মোর হৃদয় ছোঁয়া,
মা যে আমার আশ্রয়দাত্রী, মা-ই মোর হৃদয়ের মনি,
মা-যে আমার ভালবাসা, মা যে মোর প্রেরণাদারী,
মা-যে আমার স্বপ্নচারী, মা-ই মোর সকল কিছু।
আমি যখন ছোট ছিলাম, মা যে কত করত আদর,
আমার জন্য কত যে কষ্ট করল মোর জন্মদাত্রী।
শীত-গরমে, দিনে-রাত্রে, কাল-বেকালে একই ভাবে,
সহিত সকল মোর যাতনা, তবু কোন হয়নি হেলা,
আদর করে সোহাগ করে মা বসাতো ঘরের কোনে,
বলতো খোকা রাগ করনা, তুমি যে মোর ভালবাসা,
তুমি আমার মনের মানিক, তুমি বিনে সব যে খালি,
মায়ের কথা শুনলে পরে, মানুষের মত মানুষ হবি,
মন দিয়ে পড়লে পড়া, জজ, ব্যারিস্টার হবি।
হাত বারিয়ে নিত থালা, আস্তে করে বারত ভা্‌ত,
হাড়ি থেকে আনত তুলে, মাছের বড় টুকরোখানি।
আদর করে লোকমাখানি ভরে দিতো মোর মুখে।
খাওয়ার পরে আদর করে নিয়ে যেত কলের পারে,  
নিজ হাতে কল চেপে, দিত পানি আমার কায়া্‌য়,
ভাল করে গোসল দিয়ে তেল মাখাত আমার গায়ে।
জামা কপড় পরিয়ে দিয়ে, আদর করে সোহাগ করে,
ঘরের বাহিরে নিয়ে গিয়ে বন্ধুদেরে ডেকে নিত,
বলত আমায় লক্ষী আমার, যাও বাবাজি স্কুলেতে।
মায়ের মুখে ফিরে চেয়ে, যেতাম আমি স্কুলেতে।
স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখলে মলিন আমার বদন,
ছুটে এসে নিত কোলে, বলতো আমায়, ওরে খোকা কি হয়েছে?
কেউ মেরেছে? নইলে শুকনো কেন তোর বদনখানী?
রাতের কালে পড়ার ক্ষণে, মা মোর এসে থাকতো বসে,  
দেখত চেয়ে পড়ার পানে, দেখলে হেলা বলত আমায়
লক্ষী সোনা, যাদু মনি, দাওনা মনতা পরার তরে,
না দিলে মন পড়ার তরে, কেমনে তুমি মানুষ হবি,
পড়ার পরে ঘুমের সময় মা তার হস্তখানি আলতো ভাবে
বাড়িয়ে দিত মোর মাথার পরে, বুলিয়ে দিত আদর করে,
ঘুমিয়ে গেলে চাদরখানি আস্তে করে টেনে দিত গায়ের পরে।
মা যে আমার সুঠাম দেহী, সারা জীবন নীরোগ ছিল,  
কিন্তু কি যে হলো, হথাৎ করে অসুখ এসে জাপতে ধরে
ফেলে দিল বিসানাতে, ডাক্তার, বৈদ্য সবাই এ্‌ল, পথ্য দিল
কিন্তু সবাই শেষে ব্যার্থ হলো, দিনে দিনে দূর্বল হল,
বিছানাতে শুয়ে শুয়ে মা মোর দেখতো চেয়ে ফেল ফেলিয়ে,
বির বিরিয়ে বলতো কথা, কিন্তু বুঝার কোন দায় ছিলনা
তারপর হঠাৎ একদিন ঘুমের ঘুরে চলে গেল দুনিয়া ছেড়ে,
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
চোখের জলে বুক্ ভাসিয়ে দিলাম বিদায় মায়ের কায়া,
মা বিনে যে অসার হল আমার বাকী সারা জীবন।
কোন কাজে মন বসেনা, ঘুরে ফিরে বারে বারে মনে পরে
শুধু মোর জনম দূঃখিনী, অভাগিনী, জন্মদাত্রী মায়ের কথা,
চুপিসারে কর্ম ছেড়ে ধীরে ধীরে চলে যেতাম মায়ের গোরে।
চুপি চুপি সুরা পরে হাত তুলিতাম মোর দয়াল মওলার সনে
বলতাম দয়ালরে ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা য়ানি সাগিরা’।
দোয়ার পরে বির বিরিয়ে বলতাম কথা মোর মায়ের সনে,
চোখের জলে বুক ভিজিয়ে বসে থাকতাম মায়ের গোরে,
অবশেষে ফিরতাম ঘরে, মায়ের ভালবাসার স্মৃতি সাথে নিয়ে।