আমি এক প্রবাসী উড়নচণ্ডী।
স্বজন ছাড়া বিদেশ ভুঁইয়ে,
পেটের দায়ে জীবন কাটায়,
দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়,
মন বসেনা কোন কাজে।
বিরান হওয়া হৃদয় আমার,
শুধু টানে মোর জন্মভূমে।


অনেক অনেক দিনের পরে,
এলাম আমার পল্লীগাঁয়ে, জন্মভূমে।
চির চেনা মোর মেঠো পথে,
পা দুটো মোর মিশলো যখন,
আনন্দের এক হিল্লুন যেন,
ছির ছিরিয়ে উঠল বেয়ে,
নিচের থেকে শিরের দিকে।


বাড়ির দিকে হাটার পথে,
খোলা মাঠের হিমেল বাতাস,
হঠাৎ করে ঝাপটা মেরে,
বলল আমায় কেমন ছিলে,
ওরে আমার উড়নচণ্ডী,
কাল অকালে তোমার খোঁজে,
ঘুরেছি আমি কত দেশে।


পথের মাঝে খালের পাড়ে,
বাঁশের সাঁকো আমায় দেখে,
খিলখিলিয়ে হাসে, কেঁপে কেঁপে।
আস্তে করে হাতটা বেড়ে,
আমার হাতটা জাপটে ধরে
পার করে দেই নিরাপদে।


বাড়ির পাশের আমের বীথি,
আমায় দেখে মুকুল ছেড়ে,
ফুলের ঘ্রাণে পাগল করে।
মধুকরে সদল বলে মৌচাকেতে
মধু বোনে, আমার তরে।



বাড়ির ঐ বুড়ো কুকুর,
লেজটি নাড়ে আমায় দেখে,
আদর জানাই ঘেউঘেউ করে।


বাড়ির ছাদে বসা কবুতর,  
পাখা ঝাঁপতে আমায় ডাকে।
মোরগ ছানা, হাঁসের ছানা,
বারান্দার ঐ চড়ুইগুলো,
আমায় দেখে ছুটা ছুটি,  
লাফায় শুধু চির চির করে।


আমায় পেয়ে গ্রামের সবাই,
টেনে নিল বুকের মাঝে।
তাদের বুকের উষ্ণ তাপে,
সিক্ত হল মোর শুন্য হৃদয়।
উঠান ভরা ন্যেংটা ছেলে,
আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
ঘোলা চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে।


উঠান ছেড়ে ঘরের মেঝে,
পা টা যখন গেল পরে,
এমনি করে ঝাপটে ধরে,
হু হু করে কেঁদে উঠে,
আমার জনম দুঃখী মা জননী।
মানিক আমার, সোনা আমার,
কয় ছিলি তুই মা’রে ভূলে।
মায়ের পায়ে সালাম দিয়ে,
মায়ের বুকে মাথা রেখে,
নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
এমন সময় স্নেহের বোনটি,
হু হু করে কেঁদে কেঁদে্‌,
কাছে এসে আমায় ধরে,
বসিয়ে দিল খাটের পরে।


নির্বাক হয়ে তাকিয়ে দেখি,
আমার বাড়ির মায়া বনে,
কত মায়া জমা আছে।
বিদেশ ভূঁইয়ে এমন মায়া,
দেখা কভূ নাহি পাইরে।
মনে মনে ভাবি একা,
কোন বিবেকে যাইরে বিদেশ,
এমন মায়ার জালকে ছিড়ে।