হামিদুর রহমান, ঝিনাইদহের খালিশপুরের দামাল ছেলে,
অকাতরে জীবন দিল দেশের তরে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে,
কমলগঞ্জের আন্তর্জাতিক সিমা রেখায়,ধলই চায়ের বাগে।
ইষ্ট বেঙ্গলের বীর সেনানী যুদ্ধ করে দেশের তরে রণাঙ্গনে,
প্রশিক্ষণের ব্যারেক ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে।
মধুসুদনের স্মৃতি মাখা ‘কপোতাক্ষ’ নদের পাড়ে,
জীবনানন্দের স্মৃতিধন্য ‘ধানসিঁড়ি’ নদীর বাঁকে
বেড়ে ওঠা, দামাল ছেলে, বীর সাহসী, মুক্তি পাগল,
শপথ নিল দৃপ্ত পদে, ব্জ্র কণ্ঠে, শত্রু মুক্ত করবে দেশের।
দেশের তরে জীবন বাজী, হবে গাজী নইলে শহীদ।
একাত্তরের অক্টোবরের ২৮ তারিখ, যুদ্ধ করে ধলই বাগে,
লক্ষ্য ছিল দখল করা, দলই বাগের সিমান্ত ফাঁড়ি।
প্রবল বাধা উপেক্ষা করে, রণাঙ্গনে পৌছে গেল মুক্তি সেনা,
হঠাৎ করে বিস্ফুরিত, শত্রুর পোঁতা মাইনের বোমা।
অনেক সাথী হতাহত, তবু পিছন ফিরার নেই অবকাশ,
অন্ধকারে রাতের বেলা এগিয়ে গেল বাগের ভিতর।
হঠাৎ করে প্রবল বেগে আসতে থাকে শত্রুর গোলা,
গোলার ফলে কোনভাবেই যাচ্ছিলনা সামনে বাড়া।
প্রয়োজন হ’ল থামিয়ে দেওয়া, ঐ মেশিনগানের গোলা।
বীর সাহসী হামিদুরে এগিয়ে এল সবার আগে,
দায়িত্ব পেয়ে এগিয়ে গেল দামাল ছেলে, দৃপ্ত পদে,
গ্রেনেড নিয়ে পাহাড়ী খালে বুকে হেঁটে, ক্রলিং করে,
পৌছে গেল শত্রুর কাছে, অবস্থানটা পরখ করে,
হঠাৎ করে গ্রেনেড ছুড়ে থামিয়ে দিল শত্রুর গোলা,
দু’টি গ্রেনেড সফলভাবে হানলো আঘাত লক্ষ্যস্থলে।


পরক্ষণেই শত্রুর গোলা লাগলো এসে, বীর সাহসী,
মুক্তি সেনা, আত্মত্যাগের দীক্ষা নে’য়া, দামাল ছেলের বুকে।
সে অবস্থায় এগিয়ে গিয়ে, সম্মুখ যুদ্ধে জাপটে ধরে শত্রুসেনা,
ঘায়েল করে গ্রেনেড মেরে, দুই জাঁদরেল পাকিস্তানী সেনা,
এলএমজিকে বিদ্ধস্ত করে, বাগের ভিতর নিথর হল তাঁর কায়া।
এ সুযোগে সতীর্থরা এগিয়ে গিয়ে দখল করে শত্রু ফাঁড়ি,
দখল শেষে খোজে পেল বীরের দেহ, নিথর হয়ে চায়ের বাগে।


দেশপ্রেমিক, দামাল ছেলে, শহীদ সেপাই হামিদুরের নিথর দেহ,
সতীর্থরা তুলে নিয়ে দাফন করে খানিক দূরে ভারতেরই আমবাসায়।
দেশের জন্য জীবন দিয়ে দামাল ছেলে গড়ল মিনার আত্মত্যাগের,
ইতিহাসে করল স্থান একাত্তরের সূর্য সৈনিক, বীর সেনানী।
গোটা জাতি বাঁধল তিনি রক্ত ঋণে, দেশের জন্য রক্ত দিয়ে।
দেশও তাকে দিল পদক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ।
দেশের স্বাধীনতা আনল যারা জীবণ দিয়ে, তাদের বিনে,
স্বাধীনতা পূর্ণ হয় কি কভূ? তাইতো জাতি,
ভারত থেকে নিয়ে এল, বীর শ্রেষ্ঠের দেহাবশেষ,
স্বসম্মানে করল দাফন, ঢাকায়, বুদ্ধিজীবীর কবরস্থানে।


কমলগঞ্জের ধলই বাগে, বীরশ্রেষ্ঠর মরণভূমে গড়ল মিনার,
‘শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণী’ নামে।
কি মনোরম সে পরিবেশ, চারি দিকে ছায়া বৃক্ষ সারি সারি,
সবুজ শ্যামল, ছায়া সুনিবিড়, নীরব প্রান্তর  চা বাগানের ,
সীমান্ত ফাঁড়ির কাঁঠালতলায়, নারকেল বীথির ছায়ায়,
লাল চৌকা ভিত্তির উপর গড়া হলো উর্ধমুখী শ্বেত স্তম্ভ,
তাঁরই বুকে শহীদের রক্তের মূল্যে কিনা বাংলাদেশের মানচিত্র,
রক্তের চিকন অর্ধ গোলকে বাঁধা বাংলাদেশের মানচিত্র,
এক প্রতিকী রূপ, শহীদের রক্ত ঋণে বাঁধা বাংলাদেশের,
মানচিত্রের পাশেই সাত বীরশ্রেষ্ঠের সাতটি ফলা, তাতে
লাল চিহ্ন খচিত উজ্জ্বল প্রতীক, লোহার গ্রিলে বাঁধা চারিদিক।
মুক্তিযোদ্ধার রক্ত ঋণে বাঁধা বাংলাদেশ, থাকবে যত দিন পৃথিবীতে ,
থাকবে  ‘শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণী’ও ততদিন।