(শেখ সাদী (রঃ)এর গুলিস্তাঁর হেকায়াত(৩৪) অবলম্বনে)    


একদা বাদশা হারুনুর রশিদের কাছে
তারই এক পুত্রধন আসিয়া করিল নালিশ।
আব্বাজান, তব সেনাপতি পুত্র, বেয়াদব অতি,
আমার মারে দিয়েছে গালি, চাহি তার সুবিচার।
বাদশা নামদার সুমহান অতি, শুনিয়া ভাবিল ক্ষণিক,
পড়ে ডাকিল যত সভাসদ, আসিতে দরবারে দ্রুত।
বাদশার তলব শুনিয়া, যত সভাসদ ছুটিল ত্রস্ত পদে,
দরবারে, নিজ নিজ আসনে বসিল সবায়, বিনয়ের সাথে।
সিংহাসন থেকে বাদশা, চক্ষু ফেলিয়া চাহিল সবার দিকে,
বাদশার চাহনি দেখিয়া বিচলিত খানিক, যত সভাসদ।
গম্ভীরভাবে কহিল বাদশা, সেনাপতি পুত্র বেয়াদব অতি,
দিয়েছে গালি বাদশা  পত্নীকে, মহিয়সী ভার্যা আমার।
বিচারের নালিশ নিয়া সামনে দণ্ডায়মান পুত্র আমার,
এখন বলুন, কি বিচার হতে পারে এ হেন মানুষের?
বাদশার কথা শুনিয়া সবার চক্ষু দেখিল চরক গাছ।
একজনে কহিল, মৃত্যুদন্ড বিনে নাহি কোন প্রতিকার,
একটু পরে, অপর এক সভাসদ ধীরে ধীরে কহিল,
যে জিব্বা দিয়েছে গালি তা কেটে ফেলা হোক,  
যাতে সে কোন দিন কহিতে না পারে কথা।
পরক্ষণেই আরেক সভাসদ তাকিয়ে বাদশার পানে,
কহিয়া উঠিল, তাকে পাঠিয়ে দেয়া হোক দেশান্তরে,  
সহায় সম্পদ যত আছে তার সব জব্দ করে।
কথাগুলো শুনিয়া ভ্রুখানি কুচকাল রাজা একটুখানি,
ঘুরিয়া বসিল পুত্রধনের দিকে, কহিল পুত্র আমার,
তুমি যদি চাও করুণা করিতে, তবে ক্ষমা করিয়া দাও।
তাও যদি না পার, তুমিও তার মাকে দিয়ো গালি,
পরিমান মত, যত টুকু তার প্রাপ্য, মনে রাখিও,
লংঘিলে সীমা ধরিবে তা জুলুম তোমার তরফ হতে,
তখন সেও লভিবে অধিকার, জুলুমের প্রতিকার চাওয়ার।
বাদশার কথা শুনে চীৎকার দিয়ে উঠে সব সভাসদ,
সুবিচার, সুবিচার, বাদশা নামদারের ন্যায় বিচার।